অবহেলায় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, ভুল বা বিলম্বিত চিকিৎসার অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন, দ্রুত প্রতিবেদন প্রদান ও ব্যবস্থা গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে অসৎ উদ্দেশ্যে গঠনমূলক এ আলোচনার সিদ্ধান্ত মোল্লা কলেজের কোমলমতি ছাত্রদেরকে জানানো হয়নি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উস্কানিমূলক তথ্য প্রদান করে হাসপাতালে ভাঙচুর, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট ও রোগী সেবায় বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জনসন রোডে ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৬ নভেম্বর সকাল সোয়া ৮টার দিকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে অভিজিত (১৮) নামে এক রোগী ভর্তি হয়। এর আগে সকাল ৮টা ৬ মিনিটে জরুরি বিভাগে আসার পর ডেঙ্গু জ্বর হিসেবে রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য ভর্তি দেওয়া হয়। প্রাথমিক সকল চিকিৎসা চলাকালীন রোগীর অবস্থার অবনতি (Dengue shock syndrome) হতে থাকলে রোগীর অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ১৭ নভেম্বর দিবাগত রাত ১:১৮ মিনিটে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে রোগীর অভিভাবক দিপক মন্ডলের (মামা) সম্মতিক্রমে পর দিন সকাল ১০:৩৮ মিনিটে রোগীকে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস যন্ত্র (Mechanical Ventilation) ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনীয় সকল প্রকার চিকিৎসা প্রদান এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেষ্টার পরও ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় রোগী মৃত্যুবরণ করেন। এর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যু পরবর্তী লাশ হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে রোগীর আত্মীয়কে বুঝিয়ে দেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, লাশ হস্তান্তরের সময় রোগীর আত্মীয়ের মৌখিক অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের হাসপাতাল সমাজ সেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে পরবর্তীতে বিল পরিশোধ করা হবে—মর্মে রোগীর সম্পূর্ণ বিল স্থগিত রাখা হয়।

পরে রোগীর আত্মীয়ের মৌখিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সেগুলো হলো—

-চিকিৎসা সেবায় কোনো গাফিলতি হয়েছে কি-না, এ বিষয়ে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে ১৯ নভেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন।

-ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ছাত্রদের হাসপাতাল ঘেরাও কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে ২০ নভেম্বর পরিচালকের কক্ষে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ছাত্র প্রতিনিধি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হয়।

পরে ছাত্রদের পক্ষ থেকে ৯টি বিষয় অসামঞ্জস্যতা চিহ্নিত করা হয় এবং তদন্ত কমিটিতে প্রেরণ করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

আলোচনায় উত্থাপিত বিষয়সমূহঃ

১. জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রথমে রোগী ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানায়, পরে আবার ভর্তি দেন।

২. চিকিৎসক রোগীকে (অভিজিৎকে) জিজ্ঞেস করেন, সে ড্রাগ সেবন করেন কি-না।

৩. আইসিইউ-এর গেটে ০২ (দুই) ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কথা বলার জন্য কাউকে পাওয়া যায় নাই।

৪. রোগী মারা যাওয়ার পর মাস্ক পরিহিত কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসতে ছিল।

৫. নিউমোনিয়া সংক্রান্ত এক্সরে ফিল্ম দেখতে চাওয়া।

৬. পুলিশের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন।

৭. ১০,০০০/- (দশ হাজার) টাকা সংক্রান্ত।

৮. সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ।

৯. দুর্ব্যবহার।

১০. রোগীর হাত-পা বেঁধে রাখা প্রসঙ্গে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উত্থাপিত বিষয়গুলো ছাত্র, শিক্ষক এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের উপস্থিতিতে বিশদ আলোচনা ও ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। এতে তারা সন্তুষ্ট হয়ে সভা কক্ষ ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে এই ফলপ্রসূ আলোচনার সঠিক তথ্য সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে উপস্থাপন না করে বিভ্রান্তিকর ও উস্কানিমূলক তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হয়।

পরে ২১ নভেম্বর পুনরায় ছাত্রদের অবরোধ কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে ২য় দফায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধি এবং অভিভাবক (পিতা) প্রতিনিধিদের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়। তখন উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে আলোচনার জন্য প্রতিনিধি দেয়ার অনুরোধ করা হলে আফতাব আহমেদসহ উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সম্মতিক্রমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অভিজিতের স্থানীয় অভিভাবক, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি উপস্থিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিসহ সর্ব সম্মতিক্রমে পূর্বগঠিত ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। বিশেষ করে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের বিষয়টি যেহেতু একটি মেডিকেল ইস্যু এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সত্যতা যাচাই করা একজন ডাক্তারের পক্ষে সম্ভব, সেহেতু তদন্ত কমিটিতে শিক্ষার্থীদের মনোনীত ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আফতাব আহমেদ ৩ ঘণ্টার মধ্যে নাম দিবেন বলে জানান। কিন্তু অদ্যাবধি তিনি কোন ডাক্তারের নাম সুপারিশ করেননি।

বক্তারা বলেন, প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গতা নিশ্চিত করে অভিজিতের চিকিৎসায় কোন ধরনের গাফিলতি বা অবহেলা ছিল কি-না, এ ব্যাপারে দ্রুত অনুসন্ধান করে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার সাথে প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই সিদ্ধান্তে অভিজিতের পরিবার ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরাও এক মত হয়ে সভা কক্ষ ত্যাগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পরবর্তীতে ২৩ নভেম্বর পূর্ব নির্ধারিত সভায় মনোনীত ছাত্র প্রতিনিধি ও অভিজিতের পরিবারের সদস্য অনুপস্থিত থাকেন। এতদ্বসত্ত্বেও শিক্ষক প্রতিনিধি, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোনীত প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের উপস্থিতিতে তদন্ত কমিটি তদন্তের কাজ শুরু করেন।

আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে তদন্ত কমিটিতে নতুন আরো ৫ জন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি পুনগঠন করা হয় এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কার্য সম্পন্ন করে প্রতিবেদন প্রদান ও ব্যবস্থা গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কতিপয় ছাত্র প্রতিনিধি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে গঠনমূলক আলোচনার ফলাফল কোমলমতি সাধারণ ছাত্রদের অবহিত না করে অসৎ উদ্দেশ্যে অসত্য ও উস্কানিমূলক তথ্য প্রদান করে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করে এবং রোগী সেবায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের রোগীর চিকিৎসা সেবার পরিবেশ বিনষ্ট করা, সকল স্তরের চিকিৎসক নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জিম্মি করে হাসপাতাল ও কলেজ ভবনের ব্যাপক ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন, অসুস্থ রোগীদের মাঝে ভীতি সঞ্চার করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে সকলের কল্যাণে হিংসা পরিহার করে হাসপাতালে সুষ্ঠু পরিবেশে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে সাহায্যের আশা ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা। একইসাথে ভাঙচুরে হাসপাতালের ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি টাকা এবং হামলা চলাকালীন বিদেশি শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী

Moin Uddin Ahmad Sibli

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

অসুস্থতায়ও সেবা দিয়ে সরিষাবাড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সচল রাখছেন ২ চিকিৎসক

Tue Nov 26 , 2024
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ কাগজ-কলমেই ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল। রোগী থাকলেও নেই চিকিৎসক, নির্বিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়! খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পুরো উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা। এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থান জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায়। তবুও ২জন মেডিকেল অফিসারের দক্ষতায় টিকে আছে পুরো […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo