“অলৌকিক ” (মেডিকেলিয় হরর ফিকশন) – ডাঃ টি এম রায়হান মাসুদ

প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ – ১৬

“অলৌকিক ” (মেডিকেলিয় হরর ফিকশন)

লেখকঃ ডাঃ টি এম রায়হান মাসুদ
ইন্টার্ন ডাক্তার

লেখা: ফ্রাংকেনস্টাইনের কুৎসিত দানব (Raihan Masud Bipu)

সার্জারি ওয়ার্ডে একটা পেশেন্ট শুয়ে কাতরাচ্ছে। তার বামপাশের পাজরের ৭ টা হাড় দুইজায়গায় ভেঙে গেছে। কয়েকটা হাড় ভেঙে ফুসফুসে ঢুকে গেছে।

রোগী যখন হাসপাতালে এসেছিল,শুনলাম তখন থাকি কাশির সাথে রক্ত পড়ছিল। আর এখন শ্বাস নেবার সাথে সাথে বুকটা ভিতরের দিকে ঢুকে যাচ্ছে। এটাকে প্যারাডোক্সিকাল মুভমেন্ট অফ চেস্ট বলে।কন্ডিশনের নাম ফ্লাইল চেস্ট।

ওয়ার্ড ফাইনালের জন্য ৫ টা হিস্টোরি জমা দিতে হবে। হিসেব করে দেখলাম,একটা হার্নিয়া,একটা লাম্প,একটা আলসার,একটা হাইড্রোসিল,আরেকটা ট্রমার হিস্টোরি লিখব। ট্রমার হিস্টোরি সবচেয়ে ছোট।তাই রোগী স্টেবল হবার কয়েকদিন পর গেলাম কথা বলতে।

নিয়মমাফিক রোগীর পরিচয় বৃত্তান্ত লেখলাম,আরো লিখলাম মূল সমস্যা,এবার লিখব মূল সমস্যার বিস্তারিত বর্ণনা।

রোগীকে জিজ্ঞেস করলা,”চাচা,এভাবে ব্যাথা পেলেন কিভাবে?”

ফ্যাকাশে রোগীর চোখমুখ কেমন যেন ভাবলেশহীন। বলল,”গাছ থেকে পড়ে গিয়েছিলাম”

আমি বললাম,”গাছটা কত উচু ছিল,মাটিতে পড়ার সময় কোন অংশটা আগে মাটিতে পড়েছিল?মাটিতে পড়ার আগে গাছের কোথাও টাক লেগেছিল?”

রোগী ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলল,”খেয়াল করি নি?”

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম,”মানে?”

রোগী বলল,”আমি চাইয়া রইছিলাম ওইটার দিকে?”

আমি বললাম,”কোনটার দিকে?”

রোগী বলল,”যেইটা আমাকে গাছ থেকে ফেলে দিছে?”

কৌতূহল হল। হিস্টোরির বাইরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,””যেইটা” মানে কি? বানর ধাক্কা দিছে?”

রোগী বলল,”না,,, আমার মৃত্যু।”

আমি বললাম,”এভাবে বলেন কেন?”

রোগী বলল,”ওই রাতে আমার মৃত্যু আমাকে তেতুল গাছের মগডালে উঠাইছিল, ওই রাতে আমার মৃত্যু আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিছিল,,মৃত্যুর চেহারা জানেন? ভয়ংকর হলুদ চোখ,পোড়া চেহারা,লাল জিভ লকলক করে বের হয়ে থাকে সুচালো দাত বের করা হাসি,মৃত্যুভয় আরো বাড়িয়ে দেয়।”

আমার বুক শুকিয়ে গেল।

রোগী বলল,”আমার দুইটা ছোট বাচ্চা আছে,এখন আমি মরলে ওদের কি হবে।”

আমি ভাবলাম,”ব্যাথা কমাতে আমাদের মেডিকেলে তো কিটোরোলাক বা ন্যালবান ইঞ্জেকশন দেয়।মরফিন তো দেয় না। এই লোক বলে কি?”

রোগী বলল,,”আমাকে রাতে আপনারা একটু লোকজনের ভিতর রাখতে পারেন? এই ব্লকের রোগীরা রাতে চলে যাবে।আমি একা হয়ে যাব। আজ রাতে ওইটা আবার আসবে।”

আমি ভাবলাম,,”যথেষ্ট হইছে।ট্রমার হিস্টোরি লাগবে না লেখা।” চলে আসলাম।

সেই রাতে এক ইন্টার্ন ভাইয়ের ডিউটি ছিল।কিন্তু ভাইকে অপারেশন থিয়েটারে লাগত। ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলল,”একঘণ্টা একটু আমার জায়গায় বসতে পারবি?”

আমি রাত ১২ টায় গেলাম ভাইয়ের অনুরোধে।

রাত তখন সাড়ে বারোটা। অন্ধকার,,,ফাকা চারিদিক,,,,

বসে থাকতে ভাল লাগল না। ভাবলাম,ওয়ার্ডে একটু ঘুরে আসি।

ওয়ার্ড সন্ধ্যার মধ্যে ফাকা হয়ে গেছে। দুই একজন রোগী আছে। সকালের সেই লোকটা একটা ব্লকে একা।

এক ৬ ফুট লম্বা নারীমূর্তি লোকটার বেডের পাশে দাঁড়ানো। মূর্তির গায়ে সাদা এক শাড়ি,চুল জটাপড়া।বেডের উপর ঝুকে আছে।

বেডের লোকটাকে দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু আহত কুকুরের মত কেউ কেউ শব্দ শোনা গেল।

আমি কাপতে কাপতে বললাম,”ক-ক-কে?”

মূর্তি ঘুরে তাকাল।পোড়া চেহারা। লাল লকলকে জিভ। হলুদ জ্বলন্ত চোখ। সূচাল দাতের মুখভর্তি হাসি।

ভয়ংকর আতংক চোখেমুখে নিয়ে রোগীর মৃত ফ্যাকাশে মুখ ছাদের দিক ফেরানো।

নারীমূর্তি আর আমি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি। মূর্তি চোখে অসম্ভব রকমের এক ঘৃণা।

আমি নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছি।কাউকে একথা বললে নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে।

তবে কাউকে জানানোর সুযোগ পাব কি?

 

5 thoughts on ““অলৌকিক ” (মেডিকেলিয় হরর ফিকশন) – ডাঃ টি এম রায়হান মাসুদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

অবশেষে তুমি.. - রুদ্র মেহেরাব

Sun Sep 2 , 2018
প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ -৫ ” অবশেষে তুমি.. ” লেখকঃ রুদ্র মেহেরাব সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ ঘটনা ১ঃ মায়ার খুব মন খারাপ হচ্ছে। স্টার্নামের মতো একটা সহজ আইটেম সে পেন্ডিং খেয়েছে। গোটা ক্লাসে সে ই একমাত্র পেন্ডিং খাওয়া বান্দা! স্যার প্রচন্ড বকলেন। রাগ করে উঠে যেতে বললেন। আরেকটু হলে স্যারের সামনেই কেদে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo