১. ভুল চিকিৎসার অপরাধে বরিশালে একজন চিকিৎসককে অপারেশন থিয়েটার থেকেই গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
২. ভুল চিকিৎসা দেয়ার অভিযোগে চাঁদপুরে একজন চিকিৎসককে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে রোগীর স্বজনেরা।
৩. ভুল চিকিৎসা দেয়ায় চট্টগ্রামে একজন ম্যাজিস্ট্রেট ডিউটি ডাক্তারকে লাঞ্ছিত করে এবং টেলিফোন সেট ও অন্যান্য জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।
গত দু-একদিনে বিভিন্ন পত্রিকার খবর এগুলো। “ভুল চিকিৎসা” শব্দটি এখন খুবই জনপ্রিয় কারন এটা ব্যাবহার করে খুব সহজেই চিরকালের গোবেচারা ডাক্তারদের উপর চোটপাট দেখানো যায়। না ভুল চিকিৎসা ক্যানভাসার, স্বপ্নে পাওয়া বটিকা বিক্রেতা, ঝাড়ফুকওয়ালা, কিংবা ফার্মেসির দোকানদারেরা করে না। একমাত্র পাশ করা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডাক্তারেরেয়াই ভুল চিকিৎসার ধারক ও বাহক এবং এটি ধরতে পারে সমাজের যেকোন শ্রেনীর, যেকোন পেশার মানুষ! তাই আইন আদালতের তোয়াক্কা না করে, রোগী মরলে কিংবা অসুস্থ হলেই দে দুই ঘা, ব্যাটা হাসপাতালে সবাই অসুস্থ তুই ডাক্তার একা সুস্থ থাকবি কেন?!
শনিবার সকাল ৮টায় চাঁদপুর শহরের প্রফেসরপাড়া মুন্সীবাড়ির শামছুল হক মুন্সী (৬৮) কে ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। ওইদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার আশিষ পান্ডে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় রেফার করেন। কিন্তু রোগীর আত্মীয় স্বজন তাকে ঢাকায় না নিয়ে ওই হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসার জন্য সময় ব্যয় করলে রোগীর অবস্থা আরো আশঙ্কাজনক ধারণ করে। পরে তাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এদিকে রোগীর আত্মীয়-স্বজন এই খবর পেয়ে বেপরোয়াভাবে চাঁদপুর রয়েল হাসপাতালে ব্যাপক ভাংচুর এবং কর্তব্যরত ডাক্তারকে তৃতীয় তলা থেকে মারতে মারতে এক পর্যায়ে তিনি রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময়ও রোগীর আত্মীয়-স্বজন ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ওই ডাক্তারকে টেনে হেঁচড়ে ২য় তলায় নামিয়ে আনেন। সেখানে ডাক্তারকে মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় বেদম মারতে থাকলে পুরো হাসপাতালের মেঝে ডাক্তারের রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। পরে ডা. আশিষ পান্ডেকে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্যে চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অন্যদিকে ওই রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা এমনই বেপরোয়া হয়ে যায় যে, তারা এর আগে চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালেও সুমন নামে এক অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকেও বেদম পিটিয়ে আহত করে। এই ঘটনায় হাসপাতালের অন্যসব রোগীরা ভয়ে হতভম্ভ হয়ে এদিক সেদিক পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় রয়েল হাসপাতালের ম্যানেজার মাইনুদ্দিন জানান, সন্ত্রাসীরা ডাক্তারের ওপর নগ্ন হামলা শেষে হাসপাতালের স্টাফদের ওপরও হামলা চালায় এবং হাসপাতাল ভাংচুর করে অফিসের ক্যাশ ভেঙ্গে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
সারা বাংলাদেশে রোগীর সংখ্যার তুলনায় ডাক্তার এমনিতেই অপ্রতুল। তার উপর ঈদের ছুটির সময়টাতে ১০ জন ডাক্তারের দায়িত্ব একারই সামলাতে হয় একজন নন মুসলিম ডাক্তারকে। ডাক্তারদের কোন ছুটি নেই, টানা ৪-৫ দিন তারা হাসপাতালে থেকেই ডিউটি করেন, ঈদের সময় বেশিরভাগ স্থানে খাবারের দোকানগুলোও বন্ধ থাকে, তাই খেয়ে না খেয়েও রোগী দেখে যেতে হয় দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তারদের। অথচ এদের উপরেই আমরা চড়াও হচ্ছি। আইন কে কাচকলা দেখিয়ে, রোগীর উশৃংখল লোকজন, সন্ত্রাসী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট পর্যন্ত ওটি রুমের ভেতর থেকে ডাক্তারদের টেনে হিচড়ে বের করে নিয়ে যাচ্ছে, রোগী মরেছে বলে। এদের কাছে প্রশ্ন একটাই, সৃষ্টি কর্তাই তো মৃত্যু দেন তাহলে এর পর থেকে কি সৃষ্টি কর্তার উপর হামলা করতে ঝাপিয়ে পড়বেন?