গত কিছুদিন আগে যশোরে অবস্থিত আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজে একটি ঘটনা সম্পর্কে হয়ত আপনারা অনেকেই কম বেশি জানেন। প্রথমে হয়ত আমরা সবাই জানতে পারি কিছু গন মাধ্যম থেকে। খবরের শিরোনাম ছিল এরূপ “যশোরে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইন্টার্নি চিকিৎসককে যৌন হয়রানির অভিযোগ”
বেশ একটা নড়েচড়ে উঠার মত খবর । যদি শিরোনাম এবং খবর কে সত্যি ধরে নেওয়া হয় তাইলে এসব ঘটনা আসলেই অহরহ ঘটছে চারদিকে। তাই অবিশ্বাস করার কথা চিন্তায় আসে না এবং শিরোনাম অথবা খবর অনুযায়ী মেয়ে যেহেতু ভিকটিম , তাইলে মেয়েটার প্রতি একটা সমবেদনা এবং লাঞ্চনাকারির উপর ঘৃণা চলে আসে স্বাভাবিকভাবেই। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও তাই হল মেয়েটার জন্য সকলের একটা সিম্পেথি তৈরি হল এবং সকলে অপরাধী কে শাস্তি দেওয়ার জন্য খুব উঠেপড়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়ে গেল।
কিন্তু এর মধ্যে কিছু মানুষ বলে যাচ্ছিল, যার বিরুদ্ধে কথা উঠেছে তিনি এমন হতেই পারেন না। এখানেই আমরা এডমিন রা একটু থেমে গেলাম আর খুব দ্বিধার মধ্যে পড়ে গেলাম আসল ঘটনা তাইলে কি?
তাই এডমিন দের মধ্যে কয়েকজন তাই অনুসন্ধানে নেমে গেলেন । ইতোমধ্যে আমাদের কাছে অনেকে ইনবক্স করছিলেন যে এই ঘটনা সত্য হতে পারে না। কারণ যার বিরুদ্ধে কথা উঠেছে তিনি খুবই ভাল একজন মানুষ।
এরই মধ্যে পরের দিন উক্ত মেডিকেল কলেজের ফেইসবুক অফিসিয়াল পেইজ থেকে জানা গেল আসলে পত্রিকায় যা এসেছে , তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ঘটনা।
সেই পেইজের সুত্র ধরে আমরা সেই ঘটনার প্রতক্ষদর্শী দের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছি এবং সেইদিন ও পরে কি কি ঘটেছে তাদের ভাষায়ই নিচে প্রকাশিত হল।
শারমিন সুলতানা রিপা, আদ্ব- দীন সাকিনা মেডিকেল কলেজ এর প্রথম ব্যাচ এর একজন ছাত্রী। বতর্মানে আদ্ব- দীন হাসপাতালে ইন্টার্ন হিসেবে কর্মরত। গত ২০/ ০৭/ ১৭ তারিখ হতে তার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি প্লেসমেন্ট ছিল। রিপার সাথে আর ও একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক যোগদান করেন। গত ২৬ ও ২৭ জুলাই রিপা কতৃপক্ষের কোন অনুমতি ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুপস্থিত থাকে। পরবর্তীতে ২৮ তারিখ এসে পূর্ববর্তী ২ দিন সহ হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে। ঝিকরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ইন্টার্ন কো-অর্ডিনেটর ডা. রিচমন্ড রোনাল্ড গোমেজ কে ব্যাপারটি জানানো হয়। তিনি রিপাকে জিজ্ঞেস করেন উক্ত তারিখে রিপা উপস্থিত ছিল কিনা।
উত্তরে রিপা সরাসরি বিষয়টি অস্বীকার করে এবং অন্যান্য মেয়েদের (ইন্টার্ন) দোষারোপ করে যে তার বিরুদ্ধে সবাই মিথ্যা কথা বলছে। তারপর ডা. রিচমন্ড স্যার ঘটনারর সত্যতা প্রমানের জন্যে রিপার সহকর্মীকে (যার সাথে রিপার প্লেসমেন্ট ছিল) তাকে ডাক দেন।
তখন রিপা ভয় পেয়ে ০৩/ ০৮/ ১৭ তারিখে বেলা আনুমানিক ১ টার দিকে স্যার এর কাছে যায় (ওই সহকর্মী উপস্থিত হওয়ার আগেই)।
এখানে উল্লেখ্য যে, ঐ সময় রুমে ২ জন ইন্টার্ন, মেডিসিন এর রেজিস্ট্রার স্যার সহ রোগীর লোক এবং আদ্- দ্বীন এর একজন কর্মচারী উপস্থিত ছিল।
সবার সামনেই সে তার দোষ স্বীকার করে। এরপর স্যার বলেন যে, “এই বিষয়ে আমার একার কোন সিদ্ধান্ত নাই, অথোরিটি যেই সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই হবে। তুমি ডিউটি করতে থাকো, পরে দেখা যাবে।” তারপর ও রিপা স্যার এর রুমে দাড়িয়ে থাকে।
তখন আমাদের রেজিস্ট্রার স্যার রিপাকে বলেন, তুমি যাও ডিউটি করো। স্যার বিদেশ থেকে আসলে এই বিষয়ে কথা হবে। তখনও রিপা ওখানে দাঁড়িয়েই থাকে, এরমধ্যে হঠাৎ রিপা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। আমাদের এক ইন্টার্ন তাকে অর্থপেডিক্স রুমে নিয়ে আসে (অর্থপেডিক্স রুম এবং মেডিসিন রুম পাশাপাশি)
সেখানে আমরা আরও ৬ জন রিপার শারীরিক পরীক্ষা করি, আমাদের অর্থপেডিক্স এর স্যার ও রিপার পরীক্ষা করেন এবং সবকিছুই নরমাল পাওয়া যায়। মেডিসিন এর অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর স্যার রিপাকে চিকিৎসা দেন।
এর মধ্যে রিপার বাবাও আসেন। তিনি তার মেয়ের অসুস্থতার খবর জেনে এসেছিলেন ।
এরপর আনুমানিক ৪. ৩০ টার দিকে রিচমন্ড স্যার রোগী দেখা শেষ করে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ করে রিপার বাবা- মা, শশুড় সহ আর ও লোকজন কিছু না বলেই স্যারের রুমে ঢুকে যায় এবং স্যারকে মারতে থাকে আর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। স্যারের চশমা ভেঙে ফেলে, মোবাইল ছুড়ে ফেলে এবং স্যারের হাত থেকে ব্যাগ ও পড়ে যায়।
স্যারকে বাঁচাতে উপস্থিত ইন্টার্নরা এগিয়ে যায় এবং তাদের উপরেও হামলা করা হয়। চিৎকার চেঁচামেচিতে অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট এর ইন্টার্ন রাও এগিয়ে আসে, দারোয়ান সহ কর্মচারীরাও এগিয়ে আসে। স্যারকে রক্ষা করে তারা। ঐ সময় স্যারের কপাল কেটে যায়, মাথায় বিভিন্ন যায়গায় ফুলে যায়।
কিছুক্ষণ পর কলেজের প্রিন্সিপাল সহ অন্যান্য প্রফেসর ও হাসপাতালের পরিচালক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে রিপার বাবা- মাকে ডাকা হয়। তারা অকপটে রিচমন্ড স্যারকে মারধোরের কথা অস্বীকার করে এবং রিপা যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুপস্থিত ছিল সেটাও তারা জানেনা বলে জানায়।
কিন্তু আমাদের ইন্টার্নীগণ, হাসপাতালের কর্মচারী, দারোয়ান ঘটনা বলে এবং স্যারের মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রমাণিত হয় যে রিপার বাবা-মা,শ্বশুর অপরাধী।
সন্ধ্যায় স্যার,আরেকজন এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এবং প্রত্যক্ষদর্শী ইন্টার্নসহ যশোর কোতওয়ালি থানায় একটা অভিযোগ দায়ের করেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের সকল শিক্ষক, চিকিৎসক, ইন্টার্ন ডাক্তার,শিক্ষার্থী, স্টাফ যশোর প্রেস ক্লাবের সামনে গত ৫.৮.১৭ তারিখে মানববন্ধন করে এবং প্রশাসন এর কাছে রিপার পিতা মাতা কর্তৃক স্যারের লাঞ্ছনার বিচার চায়।এবং সকল ইন্টার্নরা রিপার সাথে ইন্টার্নী করবেনা বলে একমত হয়।
রিপা ভয় পেয়ে ৫.৮.১৭ তারিখ সন্ধ্যা ৭:৩০ এ থানায় স্যারের নামে একটা ভুয়া জিডি করে।তার আগে সকাল ১০টায় থানা থেকে এস.আই শাহীন রিচমন্ড স্যারকে ফোন করে বলেন কম্প্রোমাইজ করতে এবং যা হয়েছে তা ভুলে যেতে অনুরোধ করতে থাকেন। স্যার প্রতিউত্তরে বলেন,জীবন থাকতে তিনি কম্প্রোমাইজ করবেন না।
স্যার কম্প্রোমাইজ করতে অসম্মতি জানালে, ৬ তারিখ সন্ধ্যায় রিপা,তার স্বামী এবং তার পিতাসহ একটি প্রেস ব্রিফিং করে। প্রেস বিফিং এ তারা স্থানিয় বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সাংবাদিকদেরকে বলা হয় যে ডাঃ রিচমন্ড রোনাল্ড গোমেজ রিপা কে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তাকে কুপ্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় রিচমন্ড তাকে উত্ত্যক্ত করে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলেছেন। শিক্ষকদের হাতে ৫০ শতাংশ নাম্বার থাকায় তাকে কোর্স সম্পন্ন করতে দেয়া হবে না বলেও হুমকি দেয়া হয়েছে। লোকাল পত্রিকাসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে এইসব মিথ্যা ন্যক্কারজনক কথা লেখা হয়। অথচ এসব কথার কোন ভিত্তি নেই কারণ এসব কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
মেয়েটা শুধু নিজের দোষ ঢাকার জন্য এত বড়, নোংরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। অথচ সে কর্মস্থল ফাঁকি দেওয়ার অপরাধে তাকে হয়ত তাকে এমন কোন শাস্তি ভোগ করতে হত না যে সে এমন একটি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে তাও আবার স্যার এর মত এত অমায়িক মানুষের বিরুদ্ধে।
উপরের পুরো ঘটনা টি জানা গেছে সেই সময়কার সকল প্রতক্ষ্যদর্শীদের কাছ থেকে।
আমাদের দায়িত্ব ছিল আসল ঘটনা টা জেনে আপনাদেরকে জানানো। এখন আপনারা নিজেরাই বিবেক বুদ্ধি দিয়ে বিচার করবেন কে দোষী আর কে নির্দোষ।
এই লেখাটা লেখার আগ পর্যন্ত রিপার পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কোন বক্তব্য আসে নাই। তাই আমরা যা যা জানতে পেরেছি সব এখানে প্রকাশ করলাম।