তথ্য দিয়েছেন ঃ ডা: আজিজুল কাহার স্যার
নির্ণয়ঃ
১) বাজারে তিনরকম উচ্চরক্তচাপ পরিমাপক যন্ত্র পাওয়া যায়। মার্কারি, এনেরয়েড, ডিজিটাল। এর মধ্যে মারকারিটা সবচেয়ে ভালো কিন্তু খুব কম ডাক্তারই এটা ব্যাবহার করেন। সবাই গণহারে যেটা ব্যাবহার করে সেটা এনেরয়েড। এই এনেরয়েড প্রতি ৬ মাস পরপর মার্কারি যন্ত্রের সাথে মিলিয়ে নিয়ে ঠিক করার কথা যেটা আমরা কেউই করি না।
২) ব্লাড প্রেসার মাপার ক্ষেত্রে কাফ এর পরিমাপ খুব গুরুত্বপূর্ন। মোটা মানুষদের জন্য ১২*৪০, সাধারন মানুষদের জন্য ১২*২৪ এবং চিকন এবং বাচ্চাদের জন্য ১২*১৮ সাইজের কাফ হচ্ছে আদর্শ পরিমাপক। এর হেরফের হলে বিশেষ করে Obese রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারন কাফ ব্যাবহার করলে প্রেসার ১০মিমি পর্যন্ত বেশি আসতে পারে।
৩) বিপি মাপার সময় রোগীকে কমপক্ষে ৫ মিনিট চুপচাপ বসিয়ে রাখতে হবে, রোগী চেয়ারে পেছনে হেলান দিয়ে বসে, দুই হাত টেবিলের উপর থাকবে, মাপার সময় রোগী কোন কথা বলবে না, রোগীর মূত্রথলি খালি থাকতে হবে, রোগীকে উদ্বেগ কমিয়ে বসতে হবে, বিপি মাপার কমপক্ষে ৩০ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত রোগী কোন পান, সিগারেট, জর্দা, গুল, চা, কফি, ইত্যাদি খেতে পারবে না। বিপি মাপার সময় কাপড় এমনভাবে গুটিয়ে হাতের উপর আনা যাবে না যাতে হাতের উপর কাপড়ের প্রেসার তৈরী হয়। এগুলো হচ্ছে প্রেসার মাপার সাধারন নিয়ম। দেখা গেছে বিপি মাপার সময় কথা বলতে থাকলে ১০মিমি, ব্লাডার পূর্ন থাকলে ১০মিমি, ঝুলন্ত হাতে ৬-১০ মিমি বেশি আসতে পারে, আবার দাঁড়ানো থেকে বসার সাথে সাথে মাপলে ২০মিমি পর্যন্ত কম আসতে পারে।
৪) বিপি মাপতে হবে দুই হাতেই, এবং কমপক্ষে দুবার করে। দুইবারের মধ্যে যদি বেশি হেরফের থাকে তাহলে তৃতীয়বার মেপে গড় করতে হবে।
৫) কখনোই একবার মাত্র বিপি মেপে উচ্চরক্তচাপ বলা যাবে না। বিপি ১৪০-৯০ এর বেশি পেলে এ্যম্বুলেটরি বিপি মনিটরিং করতে হবে। আমাদের দেশে এটা সেভাবে সম্ভব নয় বলে বাসায় বিপি মাপতে বলতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে দুবার করে মোট ৭ দিন (কমপক্ষে ৪ দিন) মাপতে হবে এবং প্রথম দিনের প্রথম রিডিংটা বাদ দিয়ে বাকিগুলো গড় করে যদি ১৪০-৯০ এর বেশি পাওয়া যায় তখন HTN বলা যাবে।
৬) অসকালটেরি গ্যাপঃ কিছু রোগীর বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে প্রেসার মাপার সময় প্রকৃত সিস্টোলিক প্রেসার এবং শব্দ শুনতে পাওয়ার মাঝে একটা গ্যাপ তৈরী হয়। দেখা যায় শব্দ শোনা যাচ্ছে ১৪০ এ কিন্তু আসলে প্রেসার ১৮০। এটাই অসকালটেটরি গ্যাপ। এটা এড়ানোর জন্য সব রোগীর ক্ষেত্রেই প্রথমে পালপেটরি মেথডে সিস্টোলিক প্রেসার দেখতে হবে। ব্রাকিয়াল আর্টারির উপরে হাত রেখে ব্লাডার ফোলাতে হবে যতক্ষন না পালস বন্ধ হয়। যেখানে বন্ধ হবে সেটাই সিস্টোলিক, এরপর বাতাস ছেড়ে দিয়ে আবার স্টেথো লাগিয়ে সিস্টোলিক এর ৩০মিমি উপরে মিটার উঠাতে হবে এবং সাধারন নিয়মে প্রেসার দেখতে হবে।
৭) হোয়াইট কোট হাইপারটেনশনঃ কিছু রোগীর হাসপাতালে কিংবা চেম্বারে আসলে দুঃচিন্তা বা উদ্বেগে প্রেসার বেশি পাওয়া যেতে পারে কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় প্রেসার স্বাভাবিক থাকে। এদের ক্ষেত্রেও বাসায় ৭ দিন প্রেসার মাপতে বলতে হবে।
নিয়ন্ত্রনঃ
১) উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসা করার সময় সবচেয়ে বড় ভুল আমরা যেটা করি সেটা হল আমরা রোগীদের বলি না এটা একটা অনিরাময়যোগ্য রোগ। ওষুধ এবং অন্যান্য ব্যাবস্থাপত্র সারাজীবন মেনে চলতে হবে। এটা না বলার কারনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা কিছুদিন ওষুধ খেয়ে প্রেসার স্বাভাবিক পেলে ওষুধ বন্ধ করে দেয়।
২) ওষুধ ছাড়াও “লাইফস্টাইল মডিফিকেশোন” এর কথা প্রায় কখনোই বলা হয় না এবং বলা হলেও ভালোমত বুঝিয়ে দেয়া হয় না।
৩) উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের ওষুধগুলো রক্তচাপ পুরোপুরি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে বেশ কিছুদিন সময় নেয়। দেখা গেছে ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারগুলো ২-৬ সপ্তাহের মাঝে রক্তচাপ স্বাভাবিক করে। অন্যান্য ওষুধগুলোতেই প্রায় এরকম সময় লাগে। এই সময়ে মাঝে রোগী এবং ডাক্তার উভয়েই কাংখিত ফলাফল পেতে ব্যার্থ হন এবং ওষুধ পরিবর্তন ও সংযোজন করতে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে এই সময়ে রোগীরা বিকল্প চিকিৎসাপদ্ধতির আশ্রয় নেন।
৭) উচ্চ রক্তচাপ ডায়াগনসিস করার সাথে সাথে কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম এবং রেনাল সিস্টেম এর প্যাথলজি চেক করে নিতে হবে।
এবার মিলিয়ে নিন এইসব নিয়ম কানুনের কয়টা আপনি পালন করেন!
very useful post for doctors