“স্যার একটা কথা বলব যদি কিছু মনে না করেন”।
“জি বলেন”।
“একটু বেশি দামি ওষুধ লিখে দেন। আর বেশি করে টেস্ট লিখে দেন। সম্ভব হলে CT scan কিংবা MRI.
টেস্টের প্রতি বীতশ্রদ্ধ এই জাতি স্বেচ্ছায় টেস্ট চেয়ে নিচ্ছে তার উপরে দামি ওষুধ। ঘাপলাটা ধরতে পারলাম
“কোম্পানি বিল দিয়ে দিবে নাকি?”
“জি স্যার। সাথে আপনার ভিজিটের টাকা বেশি করে লিখে একটা সিল দিয়ে দিয়েন”।
ওরে বাবা, এই দেখি টাটকা শয়তান।
বললাম, “আসলে আমি দামি ওষুধ লিখি না। কিন্তু আপনি যেহেতু বললেন তাই লিখে দিব। Avasin ইঞ্জেকশান! দাম মোটামুটি এক ভায়ালের দাম পড়বে ৬০ হাজার টাকা!
একটু চিন্তা করে বললেন, “ইঞ্জেকশান লিখে দিলে সমস্যা নাই কিন্তু এত দামি এইটা কিসের?
“ক্যান্সারের”
লাফ দিয়ে উঠিলেন, “ক্যান্সার কেন হবে? আমার তো চাকরিই থাকবে না”
ঠাণ্ডা গলায় বললাম, “আপনার মত দুর্নীতিবাজ মানুষ জাতির জন্য ক্যান্সারই। তাই ভাবলাম যদি কাজে লাগে!”
ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন। আর কথা না বাড়ায়ে চলে গেলেন।
… … …
ভদ্রমহিলা একজন স্কুল শিক্ষক। আসলেন একটা আবদার নিয়ে।
“আমি এসেছি একটু সাহায্যের জন্য। আপনি আমাকে আমার বাবার নামে একটা প্রেস্ক্রিপশান করে দেন যেটাতে তিন থেকে চার টাকার ওষুধ থাকে যাতে আমি প্রতি মাসে টাকা তুলতে পারি স্বামীর কোম্পানি থেকে”।
বললাম, “আপনি একটা ফলস প্রেস্ক্রিপশান লিখাতে আসছেন, একজন শিক্ষক হয়ে! ছাত্রদের কি এই শিক্ষা দেন? আজকে আমি আপনাকে ৩-৪ হাজার টাকার ব্যবস্থা না হয় করে দিলাম কালকেই আপনার মনে হবে ৬-৭ হাজার টাকা হইলে ভাল হত। আর এখান থেকে বের হয়ে আপনি পাশের বাসার ভাবীকে গল্প দিবেন, ‘আরে ডাক্তারকে কিছু টাকা দিলেই একটা প্রেস্ক্রিপশান পাওয়া যায়। কোন ব্যাপার নাকি? আমার কারনে সব ডাক্তাররা গালি শুনবে এটা হতে পারে না। আমার ডিগ্রী, যোগ্যতা, সার্টিফিকেট, জ্ঞান বিক্রির জন্য না। ভুল জায়গায়, ভুল লোকের কাছে আসছেন। ধন্যবাদ”।
… … …
মহিলার অনুরোধ “স্যার টেস্ট লিখে দেন বেশি করে আর ওষুধ সব চলবে লিখে দিয়েন। আর প্রেসক্রিপশান ইংলিশে লিখে দিয়েন পুরাটা। সাথে একটা বিল দিয়ে দিয়েন – ইংলিশে”
“কেন?”
“আমার হাসবেন্ড UNECSO তে চাকরি করে। বিল ডলারে হবে তাই”।
এত দিন দেখলাম দেশি চোর। ওরে বাবা এই দেখি ইন্টারনেশানাল চোর-বাটপার! আমি ধরে নিলাম যেহেতু UNESCO তে চাকরি করেন মোটা বেতন পান। তাও চুরি করা লাগবে! আসলে দুর্নীতি আমাদের জেনেটিক সমস্যা হয়ে গেছে।
… … …
খালি এই দেশের ডাক্তারই খারাপ। কমিশন খায়, দামি ওষুধ লিখে কোম্পানির মাল খায়, সিজার-অপারেশন করে। বাকি মানুষ সব তো দুধে ধোয়া! ৯৯ শতাংশ অসৎ মানুষের এই দেশে শুধু মাত্র একটা প্রফেশানের সব মানুষ থেকে পুরা সততা আশা করা বোকামি!
হাজার বার বলেছি, লিখেছি, শুনেছি “Honesty is the best policy”। পরীক্ষার খাতায় লিখেছি শুধু পাশ করার জন্য, ভাল নাম্বার পাওয়ার জন্য। আসলে আমাদের শিক্ষার মূল রসটা যায় আমার পেটে, মস্তিষ্কে না। যে জন্যই উচ্চ শিক্ষিত হয়েও আমারা নৌতিক শিক্ষা অর্জন করতে পারি না।
নিজেকে একটা প্রশ্ন করবেন। আপনার ঐ উচ্চ শিক্ষার কি মূল্য আছে, যদি ঐ উচ্চ শিক্ষা আপনাকে নৈতিক শিক্ষাই দিতে না পারে?
লিখেছেন:
ডা. কামরুজ্জামান চৌধুরী
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল