বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫
গত ১৭ জানুয়ারি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন আয়েশা সিদ্দিকা নামের একজন এ্যাথলেট। চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে গত ১৯ জানুয়ারি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য চিকিৎসককে ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করে একটি পোস্ট দিলে সেটি ভাইরাল হয়। স্বাভাবিকভাবেই এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং চিকিৎসক সমাজেও এর তীব্র নিন্দা দেখা যায়।
পরবর্তীতে, এভারকেয়ার হাসপাতালে যোগাযোগ করে জানা যায় ভিন্ন বক্তব্য! তাদের ভাষ্য রোগী পূর্বে গ্রহণ করা “কার্বামাজেপিন” ওষুধের হিস্ট্রি চিকিৎসকের কাছে গোপন করেছেন যা ক্ষেত্রে এলার্জিক রিএকশান এর সূত্রপাত এবং এটিও স্টিভেনস জনসন সিনড্রোমের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
আয়েশা সিদ্দিকা তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টে লিখেছেন – “Me Vs Me!
The biggest question is what happened? Right? I have Drug allergies to “Cotrim, penicillin, tetracycline, NSAID”
[আলাদা করে আবার বাংগালীর মগজ না খাটানো ডাঃ দের জন্য মেশন করা including ‘Paracetamol’]
তার পোস্ট এর ভাষ্য অনুযায়ী, জ্বরের জন্যে প্যারাসিটামল প্রদান করার কারণেই তিনি এই মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা স্টিভেন জনসন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও, সমস্যা হবার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তার এলার্জিক রিএকশান এর কারণ ধরতে পারেনি বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
যদিও এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনো কোন আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রদান করেনি তবে এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে নাম প্রকাশ না করবার শর্তে সেখানে কর্মরত একজন জানান, রোগী ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ার জন্য চিকিৎসা সেবা নিতে আসার চার-পাঁচ দিন আগে থেকে কারবামাজেপিন নামক ট্যাবলেট গ্রহণ করছিলেন এবং তিনি এই হিস্ট্রি লুকিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, কারবামাজেপিন এর অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল ‘স্টিভেন জনসন সিনড্রোম’। জ্বর এবং ব্যথার জন্য তাকে প্যারাসিটামল ইনজেকশন দেওয়ার সময় তাকে অবহিত করা হলেও তিনি তার এলার্জির কথা কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানাননি। তিনি Paracetamol কে NSAID এর অন্তর্ভুক্ত হিসেবে উল্লেখ করলেও মূলত এটি NSAID নয় এবং বিশ্বজুড়ে এটি একটি Over the counter ওষুধ ও প্রেসক্রিপশন ছাড়াই সহজলভ্য একটি ওষুধ। রোগীর Paracetamol এ এলার্জিক রিএকশন এর হিস্ট্রি থাকলে সেটিও NSAID এর সাথে আলাদা উল্লেখ করতে হয়।
পরবর্তীতে তিনি পুনরায় স্টিভেন জনসন সিনড্রোম নামের এলার্জিক রিঅ্যাকশনের জন্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। এসে তিনি অভিযোগ করেন, প্যারাসিটামলই তার স্টিভেনস-জনসন সিনড্রোম (SJS)-এর কারণ এবং তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার দাবি করেন। অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, তিনি ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার হুমকি দেন, কারণ তার অনেক ফলোয়ার রয়েছে, এবং তিনি সেটি পোস্টও করেন।
এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে চিকিৎসকদের অনেকের কাছে প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক মতামত চাইলে তাদের ভাষ্য, কোন রোগীর সাথে কোন মেডিকেল নেগলিজেন্স বা অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার ঘটনা হলে তারা সরাসরি আইনের আশ্রয় নিতে পারে। তদন্তসাপেক্ষে চিকিৎসক বা হাসপাতালের অবহেলা বা ভুল প্রমাণিত হলে চিকিৎসক এর বিএমডিসি রেজিষ্ট্রেশন স্থগিত বা বাতিল এবং হাসপাতাল এর বড় অংকের ক্ষতিপূরণ ও রেজিস্ট্রেশন বাতিলও হতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হবার আগেই এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা ফেসবুকে পোস্ট দিলে মানুষের কাছে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে ভুল বার্তা পৌছাবে। এতে জনগণ আতঙ্কিত হওয়ার পাশাপাশি দেশের জরুরী স্বাস্থ্য সেবা অত্যন্ত বাজেভাবে বিঘ্ন হতে পারে মনে করছেন তারা।
উল্লেখ্য যে, উন্নত বিশ্বে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবাদান কেন্দ্রগুলোতে ভায়োলেন্স করলে কিংবা মিথ্যা অভিযোগ করা হলে জেল-জরিমানার পাশাপাশি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে থেকে অভিযোগকারীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশেও এ ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, রোগীর সাথে কোন অন্যায় করা হলে তিনি যাতে ন্যায্য বিচার পান তাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন স্বাস্থ্যখাতে জনগণের ভরসা ফিরিয়ে আনতে।
প্ল্যাটফর্ম/