১৯২৩ সালের ১৬ এপ্রিল। ইংল্যান্ডের নটিংহ্যামশায়ারে এক রেল কর্মকর্তার ঘর আলো করে জন্ম নিলো ফুটফুটে এক শিশু। বাবা নাম রাখলেন স্ট্যুয়ার্ট এডামস। কে জানতো এই নামটিই একদিন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে?
মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেয় স্টুয়ার্ট। তার মনে হচ্ছিলো সে এখনো জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে পারেনি৷ সেই জেদ থেকে স্কুল ইস্তফা দেয়া। চাকুরি নিলেন BOOT নামক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে। পাশাপাশি চালিয়ে গেলেন ৩ বছরের শিক্ষানবিশ কোর্স। ১৯৪৫ সালে নটিংহ্যাম কলেজ থেকে বি.ফার্ম সম্পন্ন করে একই কোম্পানিতে রিসার্চার হিসেবে যুক্ত হলেন। তার উপর দ্বায়িত্ব পড়লো রিউম্যাটিক আর্থ্রাইটিসে অ্যাস্পিরিনের বিকল্প পেইন কিলার বের করা। কাজটা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিলো। কারন সেই সময়ে গোটা দুনিয়া জুড়ে অ্যাস্পিরিনের জয়জয়কার। কিন্তু এর মারাত্মক কিছু সাইড এফেক্ট উপকারের পাশাপাশি ভোগাচ্ছিলোও প্রচুর।
১৯৫৩ সালে স্টুয়ার্ট দুইজন সহকর্মী নিয়ে ভিক্টোরিয়া হাউসে কাজ শুরু করে দিলেন। এদিকে কোম্পানির অবস্থাও ভালো নেই৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাইহোক – স্টুয়ার্ট আর তার সহকর্মী নিকলসন কাজ শুরু করে দিলেন। প্রাথমিকভাবে ৬০০ কেমিক্যাল কম্পাউন্ড নিয়ে কাজ শুরু করলেও ১৯৫৬ সাল নাগাদ ফাইনাল ২০০ স্যালিসাইলেট কম্পাউন্ড নির্বাচন করা সম্ভব হলো । সেখান থেকে ১৯৬১ সালে “ফিনাইল এসিটিক এসিড”- কে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আনা হয়। কিন্তু সাইড এফেক্ট হিসেবে স্কিন র্যাশ ট্রায়ালে বিপত্তি বাধালো। ১৯৬২ সালে আরো মডিফাই করে “আইসো – ফিনাইল- বিউটাইল এসিটেড” কে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আনা হলো। এবার আর কোন বিপত্তি বাধলো না। ‘ Ibufenac ‘ নাম দেয়া হলো এটাকে। ফাইনালি ‘Ibufenac’ থেকে ১৯৬৯ এ ইউ.কে তে Ibuprofen এর যাত্রা শুরু হলো।
Ibuprofen নিয়ে একটি মজার গল্প প্রচলিত আছে। একরাতে স্যার স্টুয়ার্টের প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করতে শুরু করলে উনি দিগবিদিক চিন্তা না করে Ibuprofen খেয়ে ফেললেন। তখনও এটিকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আনা হয় নি এবং ফলাফল হলো চমৎকার। মাথা ব্যাথা গায়েব!
মহান এই আবিষ্কারক এই বছরের ৩০ জানুয়ারিতে আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গিয়েছেন৷ যেখানেই থাকুন ভালো থাকবেন স্যার..।
রুদ্র মেহেরাব
সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ
১৩ তম ব্যাচ