কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও টক্সিকোলজী বিষয়ক চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন ব্যানট্রপটক্স ২০১৫। দুইদিনব্যাপী এ সম্মেলনে স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানীদের উপস্থাপিত প্রবন্ধের উপর আলোকপাত করা হয়। এতে সাড়া দেশের সাত শতাধিক চিকিৎসক অংশ গ্রহণ করেন।
১৭ এবং ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ এ অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলন। ১৭ তারিখ রাতের বেলা স্থানীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। এসোসিয়েশন ফর এ্যাডভান্সমেন্ট অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রেসিডেন্ট ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহা-পরিচালক অধ্যাপক ডা আবুল ফয়েজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা বক্তব্য রাখেন।
সেদিন সকালেই সেমিনারে আগতদের স্বাগতম জানান কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা অশোক কুমার দত্ত। এরপর বৈজ্ঞানিক সেশনের উদ্বোধন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডামোহাম্মদ ইসমাইল খান। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরিচালক অধ্যাপক ডা আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা মোহাম্মদ রিদয়ানুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা রোবেদ আমিন, আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক ড. দীনেশ চন্দ্র মণ্ডল সহ অনেকে। তরুণ চিকিৎসক এবং গবেষকরা এখানে তাদের গবেশনাপত্র উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষক্রিয়া (Toxicology) ও ট্রপিক্যাল ও সংক্রামক ব্যাধি এখনও বেশ গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা। যদিও বর্তমানে অসংক্রামক ব্যাধির গুরুত্ব বাড়ছে।
ফাইলেরিয়া, কালাজ্বর নির্মূলের পাশাপাশি ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস, ডায়রিয়া প্রভৃতি রোগের সুনিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রয়োজন। এছাড়া নতুন নতুন সংক্রামক ব্যাধি এবং ‘এন্টি-মাইক্রোবিয়াল’ রেজিসটেন্স নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর কারণ বিবেচনায় দেশের সরকারী হাসপাতাল সমূহে বিষক্রিয়া প্রথম দিকের সমস্যা। বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক এখনও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর প্রধান কারণ। প্রতিনিয়ত পত্রিকায় ‘যাত্রাপথে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংবাদ থাকে যা নিশ্চয় সবাইকে বিচলিত করে। বেশীরভাগ বেসরকারী হাসপাতালে বিষ ক্রিয়ার রোগী ভর্তি করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা থাকলে এর প্রতিরোধ কঠিন নয়। দেশের হাসপাতাল সমূহে নতুন নতুন ধরণের বিষক্রিয়ার কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার বিবেচনায় সর্পদংশনের চিকিৎসা ও প্রাথমিক চিকিৎসা উন্নয়নের দাবী রাখে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী বছরে প্রায় ৬ লাখ সর্পদংশনের ঘটনা ঘটে যাতে প্রায় ছয় হাজার মানুষ প্রতি বছর মারা যায়।
সেমিনারে আরো বলা হয়েছে, বিষক্রিয়া (Toxicology) ও ট্রপিক্যাল ও সংক্রামক ব্যাধি নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ মূলত সরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান সমূহের উপরে বর্তায়। এর মধ্যে বেশিরভাগই বিজ্ঞান ভিত্তিক রোগ নির্ণয় পদ্ধতি নেই। বিশেষ করে বিষক্রিয়ায় রোগ নির্ণয় পদ্ধতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায়। বিষক্রিয়া ও সর্পদংশন একটি জরুরী স্বাস্থ্য সমস্যা। বিষক্রিয়া-এর সমন্বিত ধরণ অনুযায়ী জরুরী ভাবে কারণ নির্ণয় ও দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা বড় হাসপাতাল সমূহে চালুকরা আবশ্যিক। দুই দিন ব্যাপি ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও টক্সিকোলজি বিষয়ে বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে এ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যা সমূহের উপরে বৈজ্ঞানিক উপস্থাপন এবং দেশের ও বিদেশের বিজ্ঞানীদের উপস্থাপিত প্রবন্ধসমূহ বাংলাদেশের চিকিৎসকদের জ্ঞানবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। একই সাথে সম্মেলন শেষে গৃহীত মূল সুপারিশগুলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমূহ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা করছি।