মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০২০
ডা. আশরাফুল হক
সহকারী অধ্যাপক
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এবং প্লাস্টিক ইনস্টিটিউট
ভাইরাস এমন একটি জিনিস যার নিজের আলাদা কিছু নেই। মানুষের শরীরে প্রবেশের পর, দেহের কোষ বা সেল কে ব্যবহার করেই সে বেঁচে থাকে। কোষ বা সেলকে ব্যবহার করার কারনেই শরীরে নানারকম লক্ষণ দেখা দেওয়া শুরু করে। করোনা বা কোভিড-১৯ এর ব্যতিক্রম নয়।
এই ভাইরাস শ্বাসযন্ত্রের বিশেষ করে ফুসফুসকেই মুলত আক্রান্ত করে। আক্রান্ত করার পর থেকে কোষ বা সেল থেকে নানাধরনের কেমিক্যাল (সাইটোকাইন, কেমোকাইন) নিঃসরণ করে যা রক্তের সাথে মিশে থাকে। রক্তের সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা করে ধারণা পাওয়া যায় কতটুকু ক্ষতি করেছে ভাইরাসটি।
এদিকে শ্বাসযন্ত্রের মাঝে ভাইরাসে অবস্থানের কারণে নানা লক্ষণ প্রকাশ পায় যা দিয়েও ধারণা পাওয়া যায় ক্ষতির মাত্রা সম্পর্কে। করোনা বা কোভিড-১৯ থেকে আরোগ্য লাভ করা রোগীর শরীরে একধরনের এন্টিবডি তৈরি হয় যা দিয়ে আরেকজন আক্রান্ত মানুষকে সুস্থতা দানের পথ উন্মোচন করা অনেকক্ষেত্রেই সম্ভব হয়। প্রয়োজন শুধু রোগীর লক্ষণ নিরুপণ ও রক্তের সঠিক রিপোর্ট অনুযায়ী সঠিক সময় নির্বাচন করা। সঠিক সময় একারনেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেহের কোষ বা সেলের ক্ষতির মাত্রা বেশি হয়ে গেলে প্লাজমার কাজ করার আর কোনো সুযোগ থাকেনা উপরন্তু অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় প্লাজমা প্রদানের পর ক্ষতির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
রোগীর কি কি লক্ষণ খেয়াল করা দরকার?
১) শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি মিনিটে ৩০ বারের বেশি হওয়া,
২) শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০% এর নিচে নেমে যাওয়া, বাইরে থেকে অক্সিজেন প্রদান ব্যতিরেকে (জাতীয় গাইডলাইনে যদিও অক্সিজেনের মাত্রা ৮৮% রয়েছে, সতর্কতার স্বার্থে ৯০% ধরা হয়েছে)
৩) বুকের এক্সরে অথবা সিটি স্ক্যান করে যদি দেখা যায় ২৪-৪৮ ঘণ্টার মাঝে ৫০% এর বেশী ফুসফুসের ক্ষতি হয়েছে।
রক্তের কি কি রিপোর্ট জানা জরুরী?
১) সিরাম ফেরিটিন (Serum ferritin) এর মাত্রা ১০০০ এর বেশি হয়ে গেলে ধরে নেওয়া যায় কোষ বা সেলের ক্ষতির মাত্রা গুরুতর এবং তখন প্লাজমা প্রদান করলেও বিশেষ উপকার পাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা (জাতীয় গাইডলাইনে যদিও ৬০০ কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট করতে কিছুটা সময় চলে যায় আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে তাই কিছুটা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে),
২) সিআরপি (CRP),
৩) ডি- ডাইমার (d-dimer)
সঠিক সময়ে সঠিকভাবে প্লাজমা প্রদানের স্বার্থে সচেতনতাই কাম্য।