প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৮ জুন ২০২০, সোমবার
করোনায় শুরু হওয়া দীর্ঘ সাধারণ ছুটি এবং লকডাউনে ঘরবন্দী মানুষের মাঝে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক ও হতাশা। বিগত ৮ মার্চ ২০২০ প্রথম বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। জনসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ১৮ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটির ঘোষণা দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়।
সেই থেকে করোনার মহামারীতে ঘরবন্দী আমাদের সঙ্গী পরিবার, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস আর জানালা দিয়ে দেখা একটি বিচ্ছিন এলাকা। এসময়ে অনেকেরই খারাপ ও বাজে দিকগুলো সামনে আসছে। সংকটপূর্ণ মুহূর্তে আমাদেরকে মানসিকভাবে আস্বস্ত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জেবায়ের মিয়া।
লকডাউনের কারণে লম্বা সময় ধরে ঘরে থাকাকালীন কিছু মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন উদ্বিগ্নতা, দুঃশ্চিন্তা, নিদ্রাহীনতা, বিষন্নতা, আচরণগত সমস্যা (খিঁট খিঁটে মেজাজ), মাদকাসক্তি, আত্মহত্যা ইত্যাদি। এইসব প্রতিরোধে আমরা কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবো। যেমন –
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত পুষ্টিকর স্বাভাবিক খাবার, কিছুক্ষণ রোদে থাকা, বেশি বেশি তরল খাবার, হালকা কুসুম গরম পানি পান করা, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, চোখে মুখে হাত না লাগানো, সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, ইত্যাদি কাজগুলি করে যাবো।
২. মানসিক স্বাস্থের উন্নতির জন্য নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করবো। ঘরে হাটি হাটি করবো। শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করবো ৫ মিনিট ধরে অন্তত দিনে তিন বার। দড়ি লাফ, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, যোগ ব্যায়াম, ইয়োগাও করতে পারি।
৩. পছন্দের গান শুনতে পারি, নাটক দেখতে পারি, মুভি দেখতে পারি, ডকুমেন্টারি দেখতে পারি।
৪. মনকে শান্ত রাখার জন্য প্রার্থনা, নামাজ একাকী পড়তে পারি।
৫. প্রতিদিন নির্দিষ্ট নিয়মে ঘুমাবো এবং ঘুম থেকে উঠবো।
৬. সু অভ্যাস যেমন ছবি আকাঁ, রান্না করা, সেলাইয়ের কাজ ইত্যাদি যেটা যার পছন্দের কাজ সেগুলি করবো। তাতে করোনার চিন্তা মাথা থেকে দূর হবে। মনে প্রশান্তি আসবে।
৭. করোনায় ভেংগে না পড়ে মোকাবেলার জন্য অন্য মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। প্রিয়জনদের সাথে মোবাইলে কথা বলতে পারি। ই মেইলে চিঠি লিখতে পারি। ফেসবুক মেসেঞ্জারে, হোয়াটসঅ্যাপে, ইমু, ভাইবারে ভিডিও কলে বন্ধু বান্ধব, প্রিয়জনদের সাথে কথা বলতে পারি।
৮. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তিত করতে পারে এমন খবর দেখা, পড়া ও শোনা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছেন। করোনা ভাইরাস নিয়ে বেশী বেশী খবর পড়লে মানসিকভাবে আতংকিত হওয়ার আশংকা তৈরী হয়। তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাও অসম্ভব হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদিতে হ্যাসট্যাগ বা কি-ওয়ারড মিউট করে রাখা যায় যেন সেগুলি সামনে না আসে।
৯. অতিরিক্ত হাত ধোয়া থেকে বিরত থাকুন। যাদের সূচিবায়ু (ওসিডি) রোগ রয়েছে তারা এমনিই পরিস্কার -পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অতিরিক্ত সতর্ক থাকেন। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার প্রচারের কারণে তারা আরও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে পারেন। অনেক সময় সাবান ও স্যানিটাইজার ব্যবহার আসক্তিও হতে পারে। সেই দিকটিও খেয়াল করতে হবে।
পরিশেষে এই মহামারীর হাত থেকে বাঁচার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে সবাই সাহায্য চাই। যেন খুব তাড়াতাড়ি আমরা এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারি। এই গ্লোবাল পেন্ডেমিকে মানসিক সংকট রোধ করার জন্য আমাদেরকে হতে হবে স্বাভাবিক সময়ের থেকে আরও বেশি আন্তরিক।
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি/রাকিবা ইয়াসমিন লিজা