প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ জুন ২০২০, সোমবার
ডা. ফারহানা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক
কমিউনিটি মেডিসিন,
শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ
বাংলাদেশ এখন সত্যিই এক চরম দুঃসময়ে উপস্থিত। গত কয়েক মাস ধরে নানা জল্পনা কল্পনা চলছিলো আগামী মাসে করোনা পরিস্থিতি আরো নাজুক হবে এই শঙ্কায়। সকল আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা ৯০ হাজার অতিক্রম করেছে এবং প্রাণহানীর সংখ্যা হাজার অতিক্রান্ত। এপিডেমিওলজিকাল মডেল অনুযায়ী এ সংখ্যা জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান হবে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত।
এই পরিস্থিতিতে দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা আমাদের চোখের সামনে জাজ্জ্বল্যমান। গত কয়েক দশকের স্বাস্থ্যখাতে সীমাহীন দূর্নীতি আর অস্বচ্ছতা এখন দেশের মানুষকে উসুল করতে হচ্ছে নিজের জীবন দিয়ে। একটি হাসপাতাল বেড, আইসিইউ, আর সেন্ট্রাল অক্সিজেনের হাহাকার পুরো দেশ জুড়ে। একটু হাইফ্লো ক্যানুলা অক্সিজেনের অভাবে প্রথিতযশা চিকিৎসকের মৃত্যু আমাদের বিবেকের ভিত নাড়িয়ে দিচ্ছে। একমাত্র সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ঠিকভাবে চিকিৎসা পাবেন সে আশায় মৃত্যুপথযাত্রী স্বনামধন্য অধ্যাপক বলে যান, “আমার সারা জীবনের অবদানের ফলাফল তাহলে এই!”
আমার দৃষ্টিতে এর প্রধান কারণ মানুষ হিসাবে আমাদের বাংলাদেশীদের Human Integrity, বা সহজ ভাষায় সততা ও ন্যায়পরায়ণতার প্রবল অভাব। আমরা কেউই এই দায় থেকে মুক্ত নই। অপরাজনীতি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এত রাজনীতিপ্রেমী জাতি বিশ্বে আর আছে কিনা সন্দেহ!
এখনো সময় আছে নিজেদের কিছুটা পরিবর্তনের। প্রকৃতি ক্রমাগত আমাদের বার্তা দিয়ে যাচ্ছে নিজেদের পরিবর্তন করার। নিজেদের মধ্যে মানবিক গুনাবলী ফেরত আনার। আমরা শুনেও না শোনার ভান করে যাচ্ছি আর ক্রমাগত দোষ চাপাচ্ছি অন্যজনের ওপরে।
দেশের ধনী দরিদ্র সবাই যেহেতু এখন এক কাতারে, অল্পতেই বিদেশ যাওয়ার সুযোগ যেহেতু এখন পাওয়া যাবেনা, এই একটা সুযোগ আমাদের স্বাস্থ্যব্যাবস্থাকে একটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমাদের উল্লেখযোগ্য অর্জন আছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্য করার, মাতৃ এবং শিশু মৃত্যুর নিম্নগতির মাধ্যমে। হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা কাঠামোয় অনেক উন্নয়নশীল দেশের থেকে আমরা বেশ আগানো। কিন্তু সকল অর্জনই ম্লান হয়ে যাচ্ছে সেকেন্ডারি আর টারশিয়ারি সেবার অভাবে। জাতীয় বাজেটে এই খাতে যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ যোগান এবং তার যথাযথ ব্যাবহার এই সময়ের বিরাট চাহিদা।
চরম অনিরাপত্তা, আর আশংকার মধ্যেও এটুকু আশা, মানুষ ফিরুক তার বিবেকে। সংশোধিত হই আমরা। এই দুঃসময় কাটবেই, মানুষ হার মানতে পারে না। রোগমুক্ত এবং দুর্নীতিমুক্ত সুদিনের প্রত্যাশায়।