করোনা ভাইরাসের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ আগষ্ট,২০২০, শনিবার

কোভিড-১৯ আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই কয়েক সপ্তাহের (৩-৪ সপ্তাহ) মধ্যে পুরোপুরি সেরে ওঠে। তবে বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, কিছু রোগীর ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠার পরও লক্ষণ থেকে যাচ্ছে। বয়স্ক ব্যক্তি এবং বিভিন্ন গুরুতর রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কোভিড-১৯ এর দীর্ঘকালীন লক্ষণগুলি সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।

সময়ের সাথে দীর্ঘায়িত হওয়া সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ক্লান্তি
  • কাশি
  • শ্বাসকষ্ট
  • মাথা ব্যথা
  • শরীর ব্যথা

যদিও কোভিড-১৯ প্রাথমিকভাবে ফুসফুসকে আক্রান্ত করে, তবে এটি অন্যান্য অঙ্গের ও ক্ষতি করতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশের এই ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে এমন অঙ্গগুলির মধ্যে রয়েছে:

■হৃদযন্ত্র:
কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার কয়েক মাস পর, হৃদযন্ত্রের পেশীগুলির স্থায়ী ক্ষতি দেখা গিয়েছে। ইমেজিং পরীক্ষাগুলো করার মাধ্যমে এই তথ্য জানা যায়। যাদের উপসর্গ অতি সামান্য ছিল, তাদের ক্ষেত্রেও হৃদপেশীতে ক্ষত দেখা গেছে, যা ভবিষ্যতে হার্ট ফেইলিউর (হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া) সহ, হৃদযন্ত্রের অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

■ফুসফুস:
কোভিড-১৯ এর অন্যতম সাধারণ লক্ষণ নিউমোনিয়ার কারণে ফুসফুসের অ্যালভিওলাই (ক্ষুদ্র বায়ুপূর্ণ থলি)-এর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। ফলস্বরূপ, টিস্যুর এ ক্ষত থেকে দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

■মস্তিষ্ক:
কোভিড-১৯ তরুণদের মধ্যেও স্ট্রোক, খিঁচুনি এবং গুলেন বারি সিনড্রোম (প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণকারী রোগ, যেখানে হাত-পা খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে) – এর কারণ হতে পারে।
এমনকি কোভিড-১৯, পার্কিনসন রোগ এবং আলজাইমার এর মত স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

■রক্ত জমাট বাঁধা এবং রক্তনালীতে সমস্যা:
কোভিড-১৯ এর কারণে রক্তের কোষগুলি জমাট বাঁধে এবং ক্লট তৈরি করে। এই ক্লটগুলি রক্তের কৈশিকনালিকাতে আটকে রক্ত চলাচল বাঁধাগ্রস্থ করে, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। এছাড়াও কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের হৃদপেশীর ক্ষতিগুলো কৈশিকজালিকায় ক্লট জমে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণেই হচ্ছে বলে ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা।

রক্তের জমাট বাঁধার কারণে অন্যান্য যে সকল অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হয় তার মধ্যে রয়েছে ফুসফুস, পা, লিভার এবং কিডনি। কোভিড-১৯ রক্তনালীগুলিও দুর্বল করতে পারে, যা লিভার এবং কিডনিতে সম্ভাব্য দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার জন্য দায়ী।

■মেজাজ ও ক্লান্তিজনিত সমস্যা:
কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি বিশেষ করে যারা হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন, জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের এই অভিজ্ঞতা- করোনা পরবর্তীকালে ট্রমামেটিক স্ট্রেস সিন্ড্রোম, হতাশা এবং উদ্বেগের মত মানসিক সমস্যা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।

এ নতুন ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলের ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। সে কারণে বিজ্ঞানীরা গুরুতর একিউট রেস্পিরেটরি সিন্ড্রোমের (সার্স) মতো রোগগুলোর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পর্যালোচনা করছেন।

সার্স থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে এমন অনেক ব্যক্তির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি দেখা গিয়েছে; যা বিশ্রাম নিয়েও উন্নত হয় নি, বরং বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক কর্মকাণ্ডে আরো বৃদ্ধি পায়। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ ধরনের লক্ষণ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।

কোভিড-১৯ দীর্ঘমেয়াদী এর প্রভাব এখনও অজানা এবং এটি সময়ের সাথে সাথে মানুষকে কিভাবে প্রভাবিত করবে তা নিয়েও চিন্তিত বিজ্ঞানীরা।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত এবং এর থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে, তাদের অঙ্গগুলি স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে কীনা তা পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। বর্তমানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত অনেকের সম্ভাব্য লক্ষণগুলো দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, কেউ আবার পুনরায় আক্রান্ত হচ্ছে। সে কারণে বিজ্ঞানীরা মাস্ক পরা, ভিড় এড়িয়ে চলা এবং হাত পরিষ্কার রাখার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।

তথ্যসূত্র:
https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/coronavirus/in-depth/coronavirus-long-term-effects/art-20490351

Gowri Chanda

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯ এ প্রাণ হারালেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন, ঝিনাইদহ শাখার সাবেক সভাপতি

Sat Aug 22 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০২০ করোনা মহামারীতে শহীদ হলেন আরেকজন চিকিৎসক। এবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন ডা. এ বি এম সিদ্দিকুল ইসলাম। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (BMA) এর আজীবন সদস্য, BMA ঝিনাইদহ শাখার সাবেক সভাপতি ও IPH এর অবসরপ্রাপ্ত সহ-পরিচালক ছিলেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo