বাংলাদেশ তথা সারা পৃথিবীতে কর্মস্থলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়টি উদ্বেগজনক ভাবে আলোচিত হচ্ছে।সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর চিকিৎসকরা তাদের পেশাগত দায় থেকে চিকিৎসার বাইরেও নানামুখী সেবা দিয়ে থাকেন। যে দায় অন্য কোনো পেশাতে দেখা যায় না। একজন চিকিৎসককে রাত দুপুরে রেস্ট রুম থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করা যায় ‘ভাই ছাপ বাতরুমটা কুন্দিকে?’ যেটা পুলিশকে জিজ্ঞেস করা তো দূরের কথা কল্পনাও করা না। উকিল কে মামলা খাওয়ার ভয়ে জিজ্ঞেস করা যায় না।যায় শুধু চিকিৎসককে।
চিকিৎসা একটি টেকনিক্যাল বিষয়,এই স্পর্শকাতর একটা বিষয়ে হাসপাতালে একজন রোগীর সাথে না হলে চার থেকে পাঁচজন নন টেকনিক্যাল লোক ঢুকে। আমাদের হাসপাতাল নিরাপত্তা কাঠামোতে যাদেরকে রেস্ট্রিক্ট করার কোনো উপাদান নেই। মানে একটা উপজেলা হাসপাতালে যতজন ডাক্তার আছে ততজন নিরাপত্তা কর্মীও নেই। আবার দুজন নিরাপত্তার কর্মীর একজনও গানম্যান নেই।
রোগীর সাথে আসা বাড়তি লোক গুলোকে যদি আমরা হাসপাতালের মতো একটা স্পর্শকাতর স্থানে ঢোকার মুখেই আটকে না দেই তাহলে টেকনিক্যাল লোক মানে ডাক্তারদের সাথে এই নন টেকনিক্যালদের ঝামেলা হবেই। একশোজন মরনাপন্ন রোগীর পাঁচজন মৃত্যু বরন করলেও উক্ত হাসপাতালের কর্মঘন্টার সারাদিন যাবে ঘটনা সামাল দিতে।
সেটাই হচ্ছে এখন বাংলাদেশের বেশীরভাগ হাসপাতাল গুলোতে।প্রতিদিনই বাংলাদেশের কোনো না কোনো হাসপাতালে চিকিৎসকদের সাথে রোগীর লোকদের হাতাহাতি হচ্ছে।অথচ যার সাথে এগুলো হচ্ছে তার হাসপতালে ঢোকার ই কথা না।
বগুড়ার শজিমেক এর ঘটনাটা তেমনি একটা ঘটনা।সেখানে এক ইন্টার্ন ডক্টরকে অনাকাংখিতভাবে রোগীর লোকজন ‘ইভ টিজিং’ করে।যেটা তার সহপাঠীরা মেনে নিতে পারেনি।তারা যথা সম্ভব রেসপন্স করে।ফেলো কলিগের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তারা রোগীর লোকজনের সাথে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে যায়।
ফলশ্রুতিতে যা ঘটার তাই ঘটে! সরকারের মন্ত্রী ঘোষনা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ইন্টার্নিশিপ স্থগিত করার।অথচ হাসপাতালের ঢোকার মূল দরজা দিয়ে এই লোকগুলিকে আটকাতে পাড়লে এই ঘটনাই ঘটতো না।
একটু তলিয়ে দেখলে বুঝা যায়,এর জন্য দায়ী রাস্ট্রের ফেলিউর যন্ত্র।ইন্টার্নরা না।তাই তাদের বিরুদ্ধে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা সামনের চিকিৎসা-দিনের জন্য শুধু ভয়াবহ ই নয় আত্নঘাতী ও বটে।
রোগীর লোকের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা পুরো সিস্টেমের ফেলুউর। টেকনিক্যাল লোকদের কাজগুলোকে এভাবে উন্মুক্ত এবং অবাধ করে রাখলে নন- টেকনিক্যাল লোকদের সাথে সংঘাত অনিবার্য।এবং নিকট অতীতে এ ধরনের ঘটনায় চিকিৎসক আহত কিংবা নিহত হলেও মন্ত্রী মশায়ের ভূমিকা ছিলো ন্যাক্কারজনক ভাবে এক পেশে। এ অবস্থায় চার নবীন চিকিৎসকের ইন্টার্নশীপ স্থগিত করলে যে উদ্ভুত অবস্থার সৃষ্টি হবে তার টোটাল দায়ভার মন্ত্রী মশায়কেই নিতে হবে।
অবিলম্বে এই ইন্টার্ন চিকিৎসকদের উপর আরোপিত একপেশে জবরদস্ত নিষেধাজ্ঞা কিংবা শাস্তির পথ পরিহার করুন।নইলে এর জন্য আমাদের সকলকেই মূল্য দিতে হবে।কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
অবাধে রোগীর লোকজনের হসপিটাল কম্পাউন্ডে প্রবেশ রহিত করুন।
লিখেছেন ঃ ডা. সেলিম শাহেদ, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ