প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৪ নভেম্বর ২০২০, শনিবার :
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
চিকিৎসক, কাউন্সিলর,
সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার,
ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, বাংলাদেশ।
বিয়ে হয়েছে বছর খানেক, প্রেমের বিয়ে। আলাদা বাসা নিয়ে টুনাটুনির সংসার। দুজনেই নিজ পরিবারে খুব আদরের। এই আদরের নামেই বিয়ের পর উভয় পরিবারের খবরদারি শুরু হল। প্রথম প্রথম সেটা যত্ন মনে হলেও ধীরে ধীরে অসহ্য হয়ে উঠলো উভয়ের কাছেই। জয়েন্ট ফ্যামিলিতে না থাকা স্বত্ত্বেও দুজনের মধ্যে শুরু হল “আমার বাড়ী তোমার বাড়ী” নিয়ে টানাপোড়ন। এর মধ্যে বাচ্চা কেন নিচ্ছে না সেই দুশ্চিন্তায় পরিবারের লোকজনের তো বটেই এমনকি পাড়ার মাসতুতো নানার পিসতুতো খালার পোষা বিড়ালটিও ঘুম হচ্ছে না বিধায় উপদেশের বন্যা বইয়ে দিতে থাকলো। একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়গুলো আর একান্ত থাকলো না। সেটা ঝড় তুললো চা এর টেবিলে, পারিবারিক দাওয়াতে বা ফোনের আলোচনার বিষয়বস্তুতে।
মেয়েটি বলছিলো- ধরুন, কেউ যখন ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোয় টানাপোড়েনে থাকে তখন অন্যরা নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে বা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সেটাকে জাজ করে বা উপদেশ দেয়। ওর বাড়ীর হলে ও বলে, “এতো রিএক্ট করবার কি আছে ?” আমার বাড়ী হলে আমি বলি, “এমন করার কী আছে, এটাকে স্বাভাবিকভাবে নাও।” মাঝখান থেকে আমাদের দূরত্ব অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
এরপর সেই কাউন্সেলিং টেবিলের গল্প-
সব সম্পর্কেরই নিজস্ব প্যাটার্ন থাকে। আস্তে আস্তে সেটা দানা বাঁধে। আপনার জুতোর মাপ আর যাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে তার জুতোর মাপ এক না, তাই উপদেশ দিতে গেলে বা সেই সস্পর্কর সমস্যাগুলোর সমাধানে কাউকে সাজেশন দিতে গেলে ওই প্যাটার্ন অনুযায়ী দেয়া অন্যের পক্ষে সম্ভব না। গায়ে পড়ে উপদেশ দেওয়া হয়তো আপনার মনে হচ্ছে মহৎ কাজ কিন্তু বিশ্বাস করুন যাকে দিচ্ছেন তাঁর জন্য দারুন বিরক্তিকর, হয়তো আপনি বড় বলে সে কিছু বলতে পারছে না।
দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সংসার করছে, তাদের সমস্যা তাদের সমাধান করতে দিন, তাদের বুদ্ধিমত্তায় আস্থা রাখুন।
অন্যের সম্পর্কে যারা পিনোকিও’র মতো লম্বা নাক গলিয়ে উপদেশের বন্যা বইয়ে দেয় না তাদের জন্য অনেক শ্রদ্ধা।