খবরেরকাগজে মোড়ানো খাবার ও একটি গণস্বাস্থ্যঝুঁকি

এই ব্যাপার টা অবশ্য চোখে পড়ার মতো না, কিন্তু চোখে পড়লে বোঝা যাবে যে এটা মোটেও ফেলনা সমস্যা নয়। এখানে খাবারের কোন সমালোচনা করা হবে না কিংবা ফাস্ট ফুডের অপকারিতাও বোঝানো হবে না। কারণ এই বিষয়টি খাবার নিয়ে নয় বরং খাবারের প্যাকেট নিয়ে।

সোজাসোজি বলতে গেলে,ব্যাপারটা আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় সবখানেই পাবলিকেরা স্ট্রিট ফুড বা ফাস্ট ফুড যেমন পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলিপি, ছোলা ভাজা, চপ, সিঙ্গাড়া, বার্গার এসব তো আছেই তাছাড়া আমড়া, তেঁতুল, জলপাই, আনারস, বড়ই এসবের আচারও কিনে নেয় নিউজপেপারের বানানো প্যাকেটে করে বা বাদামী রঙের কিছু পাতলা কাগজের প্যাকেটে করে। এই ব্যাপারটা আসলে কেউ অস্বীকার করবেনা আশা করি। ২০১২ সালে US library of medicine এবং National Institute of health এর সহায়তায় ভারতীয় বিজ্ঞানীরা একটা গবেষণা চালায় এই কাগজের প্যাকেটের উপরে এবং ২০১৪ তে বিস্তারিত একটি আর্টিক্যাল প্রকাশ করে Our Food: Packaging and Public Health নামে। ওখানে যা বলা হয়েছে তাই এখানে খুব সংক্ষেপে তুলে ধরা হবে,

আমরা প্রতিনিয়ত তেলে ভাজা খাবার জিনিস বা কাটা সবজি, পেঁয়াজ, রসুন এগুলো নেওয়ার সময় খেয়াল করিনা যে ঐ কাগজের প্যাকেট তেল বা পানি শুষে সিক্ত হয়ে উঠেছে অথবা আমরা অনেকে তেলের খাবারের অতিরিক্ত তেল বের করার জন্য অনেক সময় খবরের কাগজে চেপে তেল বের করি। এই তেলে ভেজা নিউজপেপার কতটা মারাত্মক সেটা আসলে আমাদের মাথায় ছিলোনা এতদিন। পশ্চিমা বিশ্বে এই অভ্যাস নেই বলে তাঁরা এটার উপর তেমন গুরুত্ত্ব না দিয়ে প্লাস্টিক প্যাকেজিং এর উপরে গুরুত্ত্ব দিয়েছিলো। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই নিউজপেপারের ছাপার কালি তেল বা পানিতে সহজেই দ্রবীভূত হয়ে খাবারে তাৎক্ষণিক মিশে যায়। এই নিউজ পেপারের কালি তৈরী হয় বিভিন্ন petroleum based minarel oil এবং benzophenon যা আমাদের Hormone Disruptor হিসেবে কাজ করে ।

এই কালিতে আরো থাকে arylamines নামক ক্যামিকেল গুলো যেমন benzidine, 2-Naphthylamine ও 4-Aminobiphenyl এই তিনটি ক্যামিকেল ব্লাডার ও ফুসফুস ক্যান্সারের ১০০ ভাগ ভূমিকা রাখে।

এগুলো ছাড়াও হরেক রকমের colorants, pigments, binders, additives আর photo-initiators ব্যবহৃত হয় যা পাকস্থলীর ক্যান্সার সহ বিবিধ অসুবিধা সৃষ্টি করছে। এই সমস্ত কিছুই তেলে দ্রবীভূত হয়ে আপনার আমার শরীরে এসে জমা হচ্ছে।

এবার আসি কালি ছাড়া ঐ কাগজে কি কি আছে সে প্রসঙ্গে।

আমাদের যেসব নিউজপ্রিন্টের কাগজের উপরে খবর প্রিন্ট করা হয় সেগুলো প্রায়ই রিসাইকেল করা কাগজ। গবেষকেরা এগুলার কাঁচামাল পরীক্ষা করে দেখেন যে সেই কাঁচামালে থাকে বিভিন্ন প্রসাধনী, যেমন চোখের প্রসাধনী, চুলের রঙ , সিঁদুর, লেড ভিত্তিক রঙ, সিরামিক উপাদান আছে প্রচুর পরিমাণে।

এছাড়াও কারখানার বর্জ্য, পুরানো ব্যাটারীর অবশেষ, মূর্তির ধ্বংসাবশেষ পর্যন্ত পাওয়া যায় যার অধিকাংশই সীসা সমৃদ্ধ ও সীসার বিষক্রিয়ার জন্য দায়ী।

এছাড়াও প্লাস্টিক গঠনকারী ক্যামিকেল diisobutyl phthalate ও di-n-butyl phthalate ও প্রচুর আছে যা পুরুষের টেস্টোস্টেরন রিসেপ্টরগুলো নষ্ট করে দেয়। মনে রাখতে হবে এসব কিছুও আমাদের মজার তৈলাক্ত খাবারের সাথে ঢুকছে আমাদের দেহে।

এই রিপোর্ট প্রকাশের পরে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান খাদ্য প্যাকেজিং এর উপরে কয়েকটা আইন তৈরী করে।

কিন্তু আমাদের দেশের আজ পর্যন্ত প্লাস্টিক প্যাকেজিং এর নিয়ম থাকলেও, এই নিউজপ্রিন্ট প্যাকেজিং সংক্রান্ত তেমন কিছু আইন বা নিয়ম বা নির্দেশবলী খুঁজে পাওয়া যায় না, যদিও খাবারের এই অভ্যাস সাধারণ জনগনের ভেতরে অত্যন্ত সুলভ।ডাক্তারের পরামর্শবিহীন বছরের পর বছর এন্টি আলসারেন্ট খেয়ে যাচ্ছে এমন জনগণের সংখ্যা অসম্ভব রকমের বেশি ইদানীং।

কেউই আসলে নিশ্চিত বলতে পারবে না যে এরকম কোন অভ্যাসের কারণে এই তথাকথিত “গ্যাস্টিকের সমস্যা”র কতটুকু সম্পর্ক আছে, তবু নিউজপ্রিন্ট ও ছাপার কালির স্বাস্থ্যঝুঁকি যেহেতু প্রমাণিত তাই সতর্ক করতে সমস্যা কোথায়?

সূত্র:
ডাঃ আসির মোসাদ্দেক সাকিব
চমেক ১১-১২

প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার
সুমাইয়া নার্গিস
শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

অস্ট্রিয়ায় পিএইচডির খুটিনাটি.......!

Wed Dec 5 , 2018
অস্ট্রিয়া ইউরোপের বেশ ধনী একটা দেশ, শিল্পের নগরী ভিয়েনা যার রাজধানী। দেশটা মোজার্টের জন্য খ্যাত হলেও, বিজ্ঞানেও কম না কিন্ত। Doppler, Boltzmann, Schrodinger দের দেশ বলে কথা। আমরাও অবশ্য পিছিয়ে নাই! আমাদের দেশীয় একজন ঐখানে বেশ বিখ্যাত, উনি কিন্ত বেশ বড়লোক মানুষ, তাই নাম বলা ঠিক হবে না। যাই হোক, […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo