রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫
গাড়ি চাপায় নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যুর হলেও জামিন আবেদনে বলা হয়েছে – ‘ডাক্তারদের অবহেলায় ভিক্টিম মৃত্যুবরণ করেন’!
গত ৩০ মার্চ রাত ১১.৩০ মিনিটে বনানী বনানীর ১২ নম্বর সড়কে মেহেদি মালেক সজীবের চালানো গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো ঘ ১৮-৬৫৩১) চাপা পড়েন দীন মোহাম্মদ (৫০) নামের এক নিরাপত্তাকর্মী।

পরবর্তীতে পথচারীদের সহায়তায় দীন মোহাম্মদকে সংকটাপন্ন অবস্থায় নিকটবর্তী বনানী ক্লিনিকে নেয়া হলে সেখান থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে তার নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের (ম্যাক্স সিকিউর লিমিটেড) উদ্যোগে ন্যশনাল ইন্সটিটিউট অফ নিওরোসায়েন্স ও হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তিনি ৩১ মার্চ সকাল ৮.৩০ ঘটিকার দিকে মৃত্যুবরণ করেন।

অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টের বরাতে জানা যায়, তাঁর জোরাজুরিতে ম্যাক্স সিকিউর লিমিটেড-এর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা কর্মী দীন মোহাম্মদের গাড়ি চাপায় মৃত্যুর ঘটনায় ৯৮/১০৫ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ ধারায়, রাজধানীর বনানী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে আসামীর জামিন আবেদন ও হলফনামায় ‘ডাক্তারদের অবহেলায় ভিক্টিম মৃত্যুবরণ করেছেন’ – বলে উল্লেখ করা হয়।
গত ১০ এপ্রিল বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ঢাকায় দাখিলকরা হলফনামার (সূত্রঃ বনানী থানার মামলা নং-০৬ (৪) ২০২৫, ধারাঃ ২০১৮ সনের সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮/১০৫।) ৪নং পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে – “ভিকটিম সিএনজি এর আড়াল থেকে নিয়ম বর্হিভূত ভাবে দ্রুত রাস্তা পার হইতে গিয়া আমার গাড়ীর বাম পাসের দরজার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায়। স্থানীয় লোক তাৎক্ষনিক বনানী ক্লিনিকে নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়, সেখান থেকে ৩১/০২/২০২৫ ইং তারিখে রাত ৩.৩০ ঘটিকায় পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরের দিন সকাল ৮.৩০ ঘটিকায় ভিকটিম মৃত্যুবরন করেন। ডাক্তারদের ভুল সিদ্ধান্ত তথা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার কারনে ঘটনার ২ দিন পরে ভিকটিম মৃত্যুবরন করেন। ঘটনাটি সম্পূর্ন অনিচ্ছাকৃত একটি দুর্ঘটনা মাত্র। এতে আমার কোন দোষ ছিল না।”

একইদিনে বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ঢাকায় দাখিল করা জামিন আবেদনেও বলা হয়েছে – “দুর্ঘটনার পর রাত্র ১১.২০ ঘটিকায় ভিকটিমকে বনানী ক্লিনিকে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য বনানী ক্লিনিক কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রেফার করে এবং সেখানে ১ দিন চিকিৎসার পর ৩১/০৩/২০২৫ ইং তারিখে রাত্র ৩.৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিমকে চিকিৎসার জন্য পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরের দিন ০১/০৪/২০২৫ ইং তারিখে সকাল ৮.৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিম এর মৃত্যু হয়। মূলত ডাক্তারদের অবহেলায় ভিকটিম মৃত্যুবরন করেন। এখানে চালকের কোন দোষ নাই। সুতরাং আসামী জামিন পাওয়ার হকদার।”
কিন্তু মেহেদি মালেক সজীব গাড়িচাপা দেবার বিষয়টি জুলকারনাইন সায়েরের কাছে স্বীকার করেছেন উল্লেখ করে জুলকারনাইন সায়ের তার এক পোস্টে বলেন, “এই পোস্টটি লিখার আগে আমি মেহেদি মালেক সজিব’কে সরাসরি ফোন করি, এবং ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে, প্রথমে সংকোচের সাথে বলেন তিনি ঠিক জানেন না, আবার তারপর বলেন একটা দূর্ঘটনা ঘটেছিলো কিন্তু তিনি নিশ্চিত নন ভিকটিমের কি হয়েছে। তিনি দাবি করেন দূর্ঘটনার পর তিনি গাড়ি থেকে নেমেছিলেন। আমি তাকে জানাই যে ব্যক্তিটি মারা গেছেন, এবং আপনিই তাকে গাড়ি চাপা দিয়েছেন এবং সেখান থেকে সটকে পড়েছেন। পরবর্তীতে তাকে পরামর্শ দেই নিকটস্থ থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে ঘটনাটির বিস্তারিত বর্ণনা দেয়ার জন্যে।”
এভাবে যত্রতত্র চিকিৎসকদের দায়ী করলে জনগণ আস্থা হারাবে এবং চিকিৎসকের উপর হামলা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসকদের ভাষ্য, “গত শুক্রবারেও রংপুর, ভোলায় চিকিৎসকের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। গাড়ি চাপা দেবার চাক্ষুষ প্রমাণ থাকা স্বত্বেও চিকিৎসকদেরকে দায়ী করা হলে জনগণকে আমরা কীভাবে সেবা দিব? সবক্ষেত্রেই ত তখন জনগণ চিকিৎসকদেরকেই দায়ী ভাবতে পারে। এ বিষয়ে একটা বিহিত হওয়া জরুরি।” চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়নেরও দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের (ফেসবুক) পোস্ট।
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস