১২ মে, ২০২০, মঙ্গলবার
ডা. শরমিন আক্তার সুমি
সহকারী অধ্যাপক,
শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি
রুমটিতে ঢুকলেই নাক ডাকার তীব্র শব্দে আপনার মায়া হবে। মনে হবে, আহা! মানুষটা কতই না আরাম করে ঘুমাচ্ছে!
আর দু’জন মানুষ নিঃশব্দে তার দুই হাতে কাজ করে যাচ্ছে। একটা টান দিলেই শাদাটে চামড়া সরে যাচ্ছে। পাতলা স্বচ্ছ পর্দার মতো টিস্যু সরে যাচ্ছে দুদিকে। যেন খুলসি নদীর পানিতে জেলী ফিস সরে সরে যাচ্ছে, আর ধীরে ধীরে পানি বের হয়ে আসছে।
আরও একটা টান দিলেই ভেতর থেকে ঝাপ দিয়ে বের হয়ে আসছে, বাদামি রঙের পেশী। কত কষ্টেই না যেন সে তার নিজের প্রকোষ্ঠেই বন্দী ছিল।
একটা জলজ্যান্ত ৩৪ বছরের যুবক বিছানায় শুয়ে আছে, আর দুজন নারী তার হাত চিড়ে যাচ্ছে আর রক্তে ভেসে যাচ্ছে তার টেবিল। কিন্তু যুবকের ঘুম ভাঙছে না। তাই তার কোন প্রতিরোধও নেই। আসলে এনাস্থেশিয়া কনসালটেন্ট এর নির্ধারিত ডোজের ওষুধের সাহায্যেই রোগী ওটি টেবিলে ঘুমাচ্ছেন। তার হাতের পুরো চামড়া পুরু হয়ে পুড়ে যাওয়ায় তার হাতে Fasciotomy নামক একটি অপারেশন করা হচ্ছে। এরপর ৬ জন মানুষ মিলে, মোটামুটি এক ঘন্টা লাগিয়ে তার পুরো শরীর ব্যান্ডেজ করলেন।
এই কাজে সাহায্য করার জন্য ওটি বয়দের কিছু বখশিশ দিলেন ইউনিট প্রধান স্যার। রোজার মাস বলে কথা।
আর মাত্র তিন দিন আগেই যুবকটি সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক ছিলো। কোন সমস্যাই ছিলো না। হয়তো প্রেয়সীর সাথে কথাও বলেছে নিয়মিত। মা দিবস উপলক্ষে মাকে কি উপহার দেবে, তাও ঠিক করে রেখেছিলো। কিন্তু একটি মাত্র ভুল তাকে আজ এতোখানি অসহায় করে তুললো।
মশারীর ভেতরেই লাইটার জ্বালিয়েছিলো সে। সেই ক্ষুদ্র লাইটার কিভাবে বার্স্ট হয়ে এমন একটা ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসবে কে জানতো।
যুবকটি ভর্তি হওয়ার আগে পরে মিলে গোটা পঞ্চাশেক রেফারেন্স এ খোঁজ নিয়েছে মানুষ। দ্রুততম সময়ে সকল চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু অনেক প্রচেষ্টাও তাকে স্রষ্টার কাছে ফিরে যাওয়া থেকে কেউ ফেরাতে পারলো না।
মাত্র তিনদিন আগের সম্পূর্ণ সুস্থ একটা মানুষ নিশ্চিত নিশ্চিহ্ন।
ঘরে থাকুন। ঘরেও নিরাপদে থাকুন প্লিজ।