প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ই নভেম্বর, ২০২০, মঙ্গলবার
লেখাঃ কানাডা প্রবাসী চট্টগ্রামের সন্তান
ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন
এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ক্যান্সার ডিপার্টমেন্ট
ডালহৌসি ইউনিভার্সিটি, কানাডা
বর্তমানে চট্টগ্রামে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। শুধুমাত্র একটি কোবাল্ট মেশিন দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগ ন্যূনতম সেবা দিচ্ছে। পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি চট্টগ্রামে একশ বেডের প্রস্তাবিত ক্যান্সার হাসপাতাল ভবনের কাজ অতিশীঘ্রই শুরু হবে এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবন ভেঙ্গে এই ক্যান্সার হাসপাতালটি করা হবে। এই ব্যাপারে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করেন এবং বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আমার ধারণা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান মহিবুল হাসান চৌধুরীকে ক্যান্সার হাসপাতালের ব্যাপারে পুরোপুরি ধারণা দেওয়া হয়নি। প্রথমত চট্টগ্রামে প্রয়োজন একটি পূর্ণাঙ্গ স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যান্সার হাসপাতাল। যার সেবা পাবে কুমিল্লা থেকে টেকনাফের জনগণ এবং দেশের আরো অনেকেই। আমরা সবাই অবগত, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি। হাজার হাজার রোগীর স্বজনদের পদচারণায় পুরো মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে সেবা দিতে ডাক্তার নার্সদের দুর্বিষহ অবস্থা।
সুতরাং প্রস্তাবিত ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য যে জায়গা দরকার তা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে নেই। রেডিয়েশন মেশিন রাখার জন্য কমপক্ষে ২০টি বাংকারের জায়গা পরিকল্পনায় থাকতে হবে। শুরুতে হয়তো ২-৪টি বাংকারের জায়গা প্রস্তুত করতে হবে। রেডিয়েশন প্রোটেকশনে নিয়ম মেনে বাংকার তৈরি করা জরুরি। বাংকারের দেয়ালের পুরুত্ব সাধারণত ৬-৮ ফুট হয়ে থাকে যাতে করে রেডিয়েশন লিক করে রুমের বাইরে না যায়। সেক্ষেত্রে মেডিকেল কলেজ চত্বরে প্রয়োজনীয় জায়গা আছে বলে আমার মনে হয় না।
ক্যান্সার এমন একটি রোগ যে মাল্টিডিসিপিলিনারি এপ্রোচ ছাড়া এটার চিকিৎসা সম্ভব নয়। ক্যান্সার কেয়ার টিমে সাধারণত অনেক বিভাগের ডাক্তার, অনকোলজি নার্স এবং সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মীরা থাকেন।
ডাক্তারদের মধ্যে রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, মেডিকেল অনকোলজিস্ট, সার্জিকেল অনকোলজিস্ট, গাইনি অনকোলজিস্ট, নিউরোসার্জন রেডিওলজিস্ট, প্যাথলজিস্টসহ আরো কিছু বিভাগের ডাক্তারের উপস্থিতি অত্যাবশ্যক। এছাড়াও মেডিকেল ফিজিসিস্ট, অনকোলজি নার্স, ক্লিনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং আরো অনেক এল্যায়েড হেলথ ওয়ার্কারের ভূমিকা অপরিহার্য। এছাড়া প্রস্তাবিত ক্যানসার ইউনিট (হাসপাতাল) এ এইচডিআর (হাই ডোজ রেট) ব্রাকিথেরাপি ইউনিট লাগবে কমপক্ষে ৪টি। শুরুতে হয়তো ২টি ইউনিট লাগবে।
বাংকারের পাশে থাকবে রোগীর বসার জায়গা, পর্যাপ্ত টয়লেট, চেঞ্জ রুম, সিটি সিমুলেশন রুম, রেকর্ড রুম এবং অন্যান্য অফিসের জন্য জায়গা। বাংকার নির্মিত হতে হবে বন্যামুক্ত গ্রাউন্ড ফ্লোরে। একই ফ্লোরে থাকতে হবে রেডিওলজি বিভাগ এবং সিটি স্ক্যান, এমআরআই ও ম্যামোগ্রাম মেশিন এবং রেডিওলজিস্টদের অফিস/রিপোর্টিং রুম।
এছাড়াও আরো জায়গা লাগবে অন্তত ৫০টি কেমোথেরাপি চেয়ার স্যুইটের জন্য। যেখানে আউটডোর রোগীদের কেমোথেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
আরো স্থানের দরকার হবে বহির্বিভাগ রোগী ইউনিট, পেশেন্ট ওয়েটিং এরিয়া, ডাক্তারদের কনসাল্টিং রুম, রেডিয়েশন প্ল্যানিং রুম, ডাক্তারদের অফিস রুম এবং অন্যান্য বিভাগের জন্য ডেডিকেটেড স্থান।
পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবিত ক্যান্সার হাসপাতাল হলে রোগী ও রোগীর স্বজনের সংখ্যাও অনেক বাড়বে। মোটকথা এত কিছু একোমোডেট করার মতো জায়গা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ চত্বরে নেই।
বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোঅনকোলজি (রক্তের ক্যান্সার) ও পেডিয়াট্রিক (শিশুদের) ক্যান্সার বিভাগ অপর্যাপ্ত জায়গা নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত ক্যান্সার হাসপাতালে এই দুই বিভাগকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে চট্টগ্রামে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টারও চালু করার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
আমার প্রস্তাবিত কয়েকটি স্থান বিবেচনায় আনা যায়। একটি হলো ফৌজদারহাট থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত এরিয়াতে। দ্বিতীয়টি এশিয়ান ওমেন ইউনিভার্সিটির আশে-পাশে এবং তৃতীয় সম্ভাব্য স্থান হলো অক্সিজেন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝামাঝি কোন একটি জায়গায়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকেই এই সুন্দর কাজটি করে চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। সবদিক বিবেচনা করে যদি ক্যান্সার হাসপাতালটি করা না যায় তাহলে চট্টগ্রামে ক্যান্সার চিকিৎসার সংকট চলতেই থাকবে। আর হাসপাতালের নামে গড়ে তোলা দালান হবে আরেকটা শ্বেতহস্তী।
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক পূর্বকোণ