প্ল্যাটফর্ম নিউজ, রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১
রাত তখন সাড়ে ৯টা। গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এই সময়টাতে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সাগরদাঁড়ি ট্রেনটিতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে উঠেছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন নামে এক প্রসূতি। তিনি সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ছ’ বগিতে ছিলেন। ট্রেনে ওঠার পরপরই তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি ট্রেনের কন্ডাক্টিং গার্ড রুবায়েত হাসান জানতে পারেন। তিনি বিষয়টি গার্ড ইনচার্জ আজিমুল হোসেনকে জানালে ট্রেনের মাইকে সন্তান প্রসবের ব্যাপারে মাইকে একজন চিকিৎসকের সাহায্য কামনা করা হয়। ওই ট্রেনে ‘ঙ’ বগীতে নিজের আসনেই বসেছিলেন ডা. ফারজানা তাসনিম। ঘোষণা শুনে প্রথমে কিছুক্ষণ হতবিহ্বল হয়ে থাকার পর নিজেকে আর সামলাতে পারেননি, আবেগ আর মানবতার টানে তিনি ছুটে যান ‘ছ’ বগিতে সেই প্রসূতি সাবিনার কাছে। যেয়ে দেখেন বাচ্চা হবার উপক্রম। রেল কর্মীদের কাছে চেয়ে নিলেন ফার্স্ট এইড বক্স। সেখানে যা ছিল তা দিয়েই সংক্ষিপ্ত সার্জারির কাজটি করে মা ও সন্তানকে আলাদা করলেন। তাদের প্রয়ােজনীয় পরামর্শ দিয়ে ছুটে গেলেন তার নির্ধারিত আসনে। ট্রেনের মধ্যে সন্তান প্রসব করা সাবিনা ইয়াসমিনের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায়। সন্তান প্রসবের জন্যই তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তার আগেই ট্রেনের মধ্যে সন্তান প্রসব করায় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন তিনি। ঝুঁকিতে ছিল তার সদ্যোজাত কন্যাসন্তানও। তবে ডা. ফারজানা তাসনিম দেবদূতের মতো হাজির হয়ে তাদের রক্ষা করেন।
৪২তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ডা. ফারজানা তাসনিম সহকারী সার্জন হিসেবে যোগদানের অপেক্ষা করছেন। রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর বগুড়ার শহীদ জিয়াাউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ইন্টার্ন করেন সেখান থেকেই। এরপর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আরবান হেলথ কেয়ারে চাকরি করেছেন। তার বাবা সোলায়মান আলী গণপূর্ত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী।সাবিনা ও তার কন্যাসন্তান এখনও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আছে। সাবিনাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মা-মেয়ে দুজনই এখন ভালো আছে।