চিকিৎসক নন, স্যান্ডো গেঞ্জি পরেই ডিএমএফ করছেন সার্জারি

রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

পেশায় সে মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট (স্যাকমো)। তার কাজ চিকিৎসকদের সহায়তা করা, কিন্তু তিনি করছেন সার্জারি (শল্য চিকিৎসা)! সার্জারির সময় ছিল না কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চিকিৎসক, এ্যানেস্থেশিওলজিস্ট মানা হয়নি কোন নিয়মকানুন, নেয়া হয়নি কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা (সেফটি ম্যাসারস)! সারাদেশে প্রায় প্রতিটি জেলাতেই এমন অপকর্ম করে আসছেন এ পেশায় সংশ্লিষ্টরা। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে রোগীদের ঠকানোর পাশাপাশি মৃতপ্রায় করা কিংবা মৃত করাই যেন তাদের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল যশোরের কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট (স্যাকমো) এভাবে সার্জারি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে। পরবর্তীতে তাকে তৎক্ষনাৎ ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হয়। অদ্ভুত বিষয় হলো তিনি স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত অবস্থায় করছিলেন সার্জারি!

কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. হালিমের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টে তিনি জানিয়েছেন,

“প্রায় অসম্ভব রকমের একটা কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলা চলে। দীর্ঘদিন ধরে এক স্যাকমো ওটি করে বেড়াই, খোজ পাওয়া যায় কিন্তু প্রমাণ পাওয়া যায়না। ছোটখাটো সাক্ষী মিললেও নানা রকম চাপে নতি স্বীকার করে হয়তো মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

এসব ভুয়া ডাক্তার এবং ডাক্তারের অধিকারের ব্যাপারে বরাবরই সোচ্চার আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কেশবপুর এর সম্মানিত এনেস্থিসিয়া কনসালট্যান্ট Md Johirul Haque Wasim মহোদয়।

UHFPO এ অবহিত করে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উনার নেতৃত্বে একটা টিম গিয়ে হাতে নাতে ধরি। সাথে সাথে ছবি, ভিডিও ও সব ধরনের প্রমাণ রাখি। ওটির ভেতরে গিয়ে আমার নিজেরই চক্ষু চড়কগাছ। হার্নিওপ্লাস্টি অপারেশন করছে, কোন সার্জন নাই এনেস্থেটিস্ট নাই। এবং আমরা যাবার পরেও বীরদর্পে তারমতো কাজ করেই যাচ্ছে। গায়ে ওটি গাউন তো দুরের কথা একটা ওটি ড্রেস ক্যাপ কিছুরই বালাই নাই।

আমাদের আসার খবর ইতোমধ্যে সব জায়গায় পৌছে গেছে। চারিদিক থেকে বিভিন্ন ফোন আসতেই আছে। নানা সময়ে দরজা দিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে গেছে। আমরা বাহুবল দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেছি।

UNO, AC Land সবাইকে জানানো হয়েছে। উনারা আসতে দেরি করছেন, আর ক্রমেই যেন চাপ বাড়ছে। আশেপাশের বিভিন্ন উটকো পাতি নেতা এসে বিভিন্ন তদবির করার চেষ্টা করছেন।

বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার পর ম্যাজিস্ট্রেট আসলেন। সকল ভিডিও ফুটেজ দেখানো হল। আমাদের কনসালট্যান্ট এই সংক্রান্ত আইন ও তাকে স্মরণ করে দিলেন। Po LLআমরা আমাদের মতো করে বললাম।

দীর্ঘক্ষণ বিচার বিশ্লেষণ করে এসিল্যান্ড দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।

উল্লেখ্য এর পূর্বে কেশবপুর এর ইতিহাসে কখনো কোন ভুয়া ডাক্তারের এরকম শাস্তি হয়নি। আমাদের UHFPO মহোদয়, বিশেষত, এনেস্থিসিয়া কনসালট্যান্ট স্থানীয় হবার সুবাদে সম্ভবত শেষ পর্যন্ত এই “ন্যুনতম ” শাস্তি দেওয়া গেল।

আদেশে সিগ্নেচার করার পর একদল পাতি নেতা এসে সুপারিশ করা শুরু করল। শেষ পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। জানিনা ওই নেতা গুলো আরও কিছু আগে আসলে কি ঘটনা ঘটত।

আর এই পুরো সময়টা সাহস সঞ্চয় করে থাকাটাও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জিং ছিলো আমার নিজের, ইমদাদ হোসেন শামীম এর জন্যও।

এই শাস্তিতে কতটুকু কি হবে জানিনা। তবে ইতোপূর্বে এতটুকু শাস্তিও কখনো কাউকে নিশ্চিত করা যায়নি।”

বিষয়টি জানাজানি হলে সবার মাঝে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়! বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, “এসব ডিএমএফ রোগীদের সাথে প্রতারণা করছে। একইসাথে রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গতকালের ঘটনায়ও ন্যূনতম সেফটি নিশ্চিত করা হয়নি। রোগী অস্ত্রোপচারের সময়েই মৃত্যুবরণ করতে পারত। এমনি পরবর্তীতে সেপসিস হয়েও মারা যেতে পারত।”

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা সংস্কার করতে এসব মেডিকেল এসিস্ট্যান্টদের রোগী দেখার অবৈধ বিষয়গুলো সম্পূর্ণ নির্মূল করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করছেনতারা।

প্ল্যাটফর্ম/

প্ল্যাটফর্ম কনট্রিবিউটর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

খাদ্যবাহিত রোগে প্রতিবছর মৃত্যু হয় প্রায় সোয়া ৪ লাখ শিশুর

Sun Feb 2 , 2025
রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খাদ্যবাহিত রোগে প্রতিবছর বিশ্বে ৪ লাখ ২০ হাজার শিশুর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির মতে, মারা যাওয়া এসব শিশুর বয়স পাঁচ বছরের নিচে। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এক গবেষণা প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরেন ঢাকা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo