প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৯শে ডিসেম্বর, ২০২০, মঙ্গলবার
রােগীর চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতকারীরা গত ২৫ ডিসেম্বর জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ভাঙচুর, কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্স ও হাসপাতালের অন্যান্য স্টাফদের মারধর করে। হামলায় আহত হন জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. চিরঞ্জীব সরকার ও কর্তব্যরত কয়েকজন স্টাফ। হামলাকারীদের প্রতিরোধে এগিয়ে এলে আহত হন ডা. মােঃ লুতফর রহমান (ইউএইচএন্ডএফপিও, সদর) ও ডা. হাবিবুল্লাহসহ অন্যান্য কয়েকজন স্টাফ ও ইন্টার্ন চিকিৎসক।
এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা হামলাকারীদের হাত থেকে সরকারি সম্পত্তি ও সরকারি কর্মকর্তাদের রক্ষা করার বদলে উল্টো সরকারি চিকিৎসকদেরকে লাঞ্ছিত করে, গায়ে হাত তোলে।
অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে জামালপুর সদরের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমানকে কলার চেপে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায়। সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করেই তাঁদের থানায় নেয়া হয়।
এই ঘটনায় হামলাকারী ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো জামালপুর সদর হাসপাতালে ধর্মঘট চলছে। তাঁদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে জেলার অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও চিকিৎসকরা বন্ধ রেখেছেন বহির্বিভাগ সেবা। তবে জনগণের ভোগান্তি এড়াতে চলমান রয়েছে ভর্তি রোগীর চিকিৎসা ও জরুরি সেবা।
চিকিৎসকরা জানান, “হাসপাতালের জরুরি সেবা এবং ভর্তিকৃত রোগীদের সেবা চলমান রয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বিএমএ এবং স্বাচিপের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।”
উল্লেখ্য, প্রতিটি হামলার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার ৫ দিন অতিবাহিত হলেও মামলা না হওয়ায় এবং কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় চিকিৎসকদের মাঝে নিরাপত্তাহীনতা ও ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে।
জামালপুর বর্বরতার ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চেয়ে সারা দেশের নানা প্রান্তের চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বারে প্র্যাকটিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁদের এ সিদ্ধান্তের প্রতি সংহতি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বার্তা প্রদানের মাধ্যমে একাত্মতা পোষণ করেছেন দেশের প্রথিতযশা কিংবদন্তিতুল্য চিকিৎসকবৃন্দ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, “আমি যদি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতাম, তবে নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করার দাবিতে আজ অবশ্যই চেম্বার বন্ধ রাখতাম। জামালপুরে চিকিৎসক নিগ্রহের বিচার চাই।”
অন্যদিকে, মুগদা মেডিকেল কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির লিখেন, “আমার চেম্বার আজ খুলবেনা। জামালপুরে চিকিৎসকের উপরে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ দেশের আরেক খ্যাতিমান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. টিটু মিয়া লিখেন,
“প্রিয় সহকর্মীর উপর আক্রমণ করার প্রতিবাদে আমি আজকে আমার প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ রাখছি।”
বাংলাদেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আজিজুল কাহহার লিখেন, “আমার চেম্বার আজ খুলবেনা। জামালপুরে চিকিৎসকের উপরে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।”
বিএসএমএমইউ-র ইন্টার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত লিখেন, ” My chamber is closed today. We need safe work place for doctors.”

তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন। আজ, ২৯ শে ডিসেম্বর বিএমএ-র এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসােসিয়েশন জামালপুর শাখা কর্তৃক গৃহীত সকল কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় বিএমএ-র পক্ষ থেকে একাত্মতা প্রকাশ করা হচ্ছে। অবিলম্বে উক্ত সন্ত্রাসী হামলার সাথে জড়িতদেরকে গ্রেফতার ও কর্তব্যে অবহেলাকারী জামালপুর সদর থানার ওসিকে প্রত্যাহারসহ জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং দেশের সকল হাসপাতাল ও চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপালনরত চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের কর্মস্থল নিশ্চিত করার জন্য দেশের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানায় বিএমএ।