হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ডাক্তারের ভুলের কারণে বিষাক্রান্ত ছাত্রলীগ নেতা মারা গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত এলাকাবাসী প্রায় দুই ঘন্টা হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপতালের আরএমও ডাঃ মহসিন করিমকে হাসপাতালের একটি কক্ষে আটকে রাখে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরের নাতিরাবাদ এলাকার সফর আলীর পুত্র ছাত্রলীগ নেতা সজল মিয়া (২২) কিছুদিন ধরে মোটর সাইকেল ক্রয় করে দেয়ার জন্য তার পরিবারের লোকজনের কাছে টাকা চেয়ে আসছিল। কিন্তু তার পরিবার টাকা না দেয়ায় গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সে বিষপান করে ছটপট করতে থাকে। পরিবারের লোকজন তার এ অবস্থা দেখে বেলা ১টা ১০ মিনিটে তাকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করান। কিন্তু হাসপাতালের ইমার্জেন্সী বিভাগে সজল বিষাক্রান্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও তৎক্ষণিক কোন ডাক্তার তার চিকিৎসা করেননি। বিকেল ৪টার দিকে হাসপাতালে আরএমও ডাঃ মহসিন করিম তাকে দেখে সুস্থ বলে সার্জারী ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সন্ধ্যায় সজলের আত্মীয়রা আরএমও’র কাছে গিয়ে জানতে চান, সজলকে কিছু খাওয়ানো যাবে কি-না। এ সময় আরএমও মহসিন করিম বলেন, খাওয়ানো যাবে। তারপর সজলের মা-বাবা সজলকে দোকান থেকে ব্রেড পানি কিনে খাওয়ান। এর কিছুক্ষণ পর সজল ছটপট করতে থাকে। সাথে সাথে তার মা-বাবা আরএমও মহসিন করিমের কাছে গিয়ে তাকে দেখার অনুরোধ করেন। তিনি সজলকে দেখে রাত প্রায় ৯টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপরই তার আত্মীয় স্বজনরা ডাক্তারের অবহেলায় সজল মারা গেছে বলে অভিযোগ এনে আরএমও মহসিন করিমের শার্টে ধরে টানাহেচড়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে মহসিন করিম নিজেকে রক্ষা করতে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের নার্সদের রুমে গিয়ে আস্থয় নেন। এ খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে নাতিরাবাদ এলাকার শতাধিক যুবক হাসপাতালে গিয়ে মহসিন করিমের শাস্তি দাবি করে মেডিসিন বিভাগের নার্সের রুম ঘেরাও করে রাখেন। এখবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান। কিন্তু তারা ব্যর্থ হন। পরে এএসপি নাজমুল ইসলাম ও এএসপি সাজ্জাদুর রহমানের নেতৃত্বে একদল দাঙ্গা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাত প্রায় ১০টার দিকে সজলের মা ও বোন দেখতে পান তার শরীরে লাগানো স্যালাইন দিয়ে ওষুধের পানীয় ফোটা চলাচল করছে। এ সময় তারা সজল বেঁচে আছে বলে চিৎকার শুরু করেন। সাথে সাথে হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রথমে তার আত্মীয় স্বজনদের বলেন সে বেঁচে আছে। এক পর্যায়ে তাকে সিলেট নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার দেলোয়ার হোসেন গিয়ে আবারও তার শরীর পরীক্ষা করে তারেক মৃত ঘোষণা করেন। পুনরায় সজলের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর হাসপতালে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় সুবিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুকিদুল ইসলাম মুকিদ, সহ-সভাপতি সাইদুল ইসলাম পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ সময় এএসপি নাজমুল ইসলাম বলেন, ঘটনার তদন্ত করে যদি আরএমও মহসিন করিম জড়িত থাকেন তাহলে তার উপযুক্ত বিচার করা হবে। পরে এএসপি নাজমুল ইসলাম ডাঃ মহসিন করিমকে হাসপাতাল কোয়ার্টারে নিয়ে যান।
পরে স্বজনরা সজলের মৃতদেহ বাসায় নিয়ে যান। বুধবার দুপুরে জোহরের নামাজের পর চৌধুরী বাজার জামে মসজিদে জানাজার নামাজ শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে।
(সূত্রঃ দৈনিক খোয়াই)