সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে লিখেছেন ঃ ডা. আমেনা বেগম ছোটন
তোমাদের সবাই কে অভিনন্দন। প্রফে পাশ করা সোজা কথা না, ইন ফ্যাক্ট মেডিকেল লাইফে সোজা বলে কিছু নেই। তোমরা না চাইলেও আমরা সিনিয়র রা তোমাদের নানাবিধ উপদেশ দেবার চেষ্টা করছি, বিষয় টা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি তে দেখবে আশা করি।
আমি কোন ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ নই। একদম সাধারণ কিছু কথা বলব। ফেসবুকের কল্যাণে তোমরা নিশ্চয় জান, আমাদের বাংলাদেশের ডাক্তার দের দেশের মানুষ একেবারেই সহ্য করতে পারে না। আমরা খারাপ, কসাই, ব্যবহার খারাপ ইত্যাদি ইত্যাদি।
নিশ্চয় সিনিয়র দের কাছ থেকে এইটাও শুনেছ, ট্রিটমেন্ট নিলে নে না নিলে না নে। এত্ত এত্ত রোগি, লিমিটেড রিসোর্স এর মধ্যে বেটার সার্ভিস দেওয়া সম্ভব না। ওয়ার্ডে নিতান্ত বদ কিসিমের রোগির এটেন্ডেন্ট থাকে, এই গুলারে মাইর দেয়া দরকার।
রোগি- ডাক্তার কে বেশি খারাপ, এইটা আমাদের দেশে ডিম আগে না মুরগী আগে টাইপ একটি ইস্যু যার সমাধান কোন দিন হবে না। এইটা ঠিক যে ইন্টার্ন বা জুনিয়র লেভেলে তোমাকে প্রায় সাধ্যাতীত সংখ্যক রোগী ম্যানেজ করতে হতে পারে ( আবার নাও পারে, ডিপেন্ড অন ইয়োর রোস্টার) কিন্তু এ সময় টা যদি তুমি মনে কর যে তুমি রোগির বা তার লোকের সাথে মেজাজ দেখাতে পার এবং দেখিয়ে ফেল এইটাই তোমার অভ্যাস হয়ে যাবে। তুমি আর কখনো রোগী ভালবাসে এমন ডাক্তার হতে পারবে না। ব্যাপার টা অনেক টা বাচ্চাদের মত। তুমি প্রাইমারী স্কুলে কিছু না শিখলে গ্রাজুয়েশন লেভেলে সেটা শিখতে পারবে না। প্রমাণ হচ্ছে আমাদের প্রফেসর লেভেলের ডাক্তার দের ও লোকে গাল পাড়ে। জুনিয়র লেভেলে যে খিটখিটে স্বভাব ডেভেলপ করেছে, হাজার টাকা ভিজিট বা লাখ টাকা বেতন অথবা কাড়িকাড়ি ডিগ্রি সেই স্বভাব কে আর শুধরাতে পারে না।
সুতরাং প্রতিজ্ঞা করবে, যত অড সিচুয়েশন হোক, মেজাজ খারাপ করবে না। এইটা একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবে, যে তুমি সিচুয়েশন কনট্রোল বা হ্যান্ডলিং এ কতটা দক্ষ হতে পার। তোমার কথায় রোগি কতখানি আশ্বস্ত হচ্ছে? যদি না হয়, কি বললে আশ্বস্ত হতে পারে? নেক্সট রোগির সাথে কনভারসেশনে কি লেভেল আপগ্রেড করল? যেহেতু তুমি নতুন, অবশ্যই সিনিয়রের হেল্প নিবে।অন ডিউটি সিএ, আই এম ওর কন্টাক্ট রাখবে। ভেজাইল্যা রোগি ( ভার্সিটির স্টুডেন্ট, পলিটিকাল পার্টি, সাংবাদিক আলা রোগি, ভেরি সিক পেশেন্ট ) দেখলে সাথে সাথে ফোন।
আর কাউন্সেলিং, পেশেন্ট রিসিভ করলে, তারপর রোগির সাথে যে বুঝদার লোক আছে, তাকে দু এক কথায় বুঝিয়ে বলবে প্রভিসনাল ডায়াগ্নসিস। কনফার্ম করবে না। বলবে আমি ইনিশিয়াল ট্রিটমেন্ট দিলাম, সিনিয়র ড আবার দেখবে। লোকে ইন্টার্ন বলে পাত্তা না দিলে দুখ পাবার কিছু নেই। তোমরা আসলেই তেমন কিছু জাননা ( আতেল দের কথা আলাদা, তারা প্রফেসর লেভেলের নলেজ রাখে) আর জানলেও নলেজ কিভাবে এপ্লাই করবে সেটা জান না, সেটাই শিখবে।
ওয়ার্ড সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সম্পর্ক ভাল রাখবে। নার্স, ওয়ার্ডবয়, দারোয়ান, এমন কি দালাল দের সাথেও। ট্রাস্ট মি, তুমি বাজে পরিস্থিতি তে পরলে এরা সবার আগে তোমাকে রেস্কিউ করতে পারবে। এরা কিছু চুরিচামারি করবে, ইগ্নর দ্যাট। ভুলেও এদের সাথে রিলেশন খারাপ করবে না।
তুমি কার কাছ থেকে শিখবে? কমন সেন্স। যাকে তোমার কাছে এফিসিয়েন্ট মনে হয়। যার ব্যবহার ভাল, তার কাছে কাউন্সেলিং শিখবে। যার কাজ ভাল তার কাছে কাজ শিখবে। যে স্টুপিড টাইপ, তার কাছে শিখবে কি করা উচিৎ না। প্রশ্ন করবে, শিখতে চাইবে, অলওয়েজ বি কমুনিকেটিভ। আমাদের পেশার ৬০% কমুনিকেশন বাকি টা নলেজ এপ্লিকেশন। চুপ করে থাকাটা শ্বশুরবাড়ি ছাড়া আর কোথাও কোন গুণের কথা না।
উপরের কথা গুলি যত সহজে বললাম, করা তত কঠিন। তারপর ও চেষ্টা করবে, তোমাদের ব্যাচ থেকে যাতে আর না শুনতে হয়, বাংলাদেশের ডাক্তার রা খারাপ।
গুগলের বা মেডিকেল সাইট গুলোর হেল্প নিতে পার।Doctor’s communication skill, language how to manage difficult patient, how to manage your stress, workload.
ছবিতে মডেলঃ তুনাজ্জিনা,আবিদ এবং বনফুল
ছবি তুলেছে ঃ ডাঃ ফয়সাল মিশু