নাটোরে এ্যানথ্রাক্সের প্রাদুর্ভাব, বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ

বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪

নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলায় এ্যানথ্রাক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, তবে বিস্তার রোধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং উপজেলা প্রশাসন। চিকিৎসার পাশাপাশি চালানো হচ্ছে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচী।

গত অক্টোবর মাসের প্রথমদিকে গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামে কয়েকটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাণিসম্পদ বিভাগ নমুনা সংগ্রহ করে সিরাজগঞ্জের আঞ্চলিক রোগ গবেষণাগারে প্রেরণ করে। নমুনাগুলোর মধ্যে একটিতে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেলে প্রাণিসম্পদ বিভাগ ঐ গ্রামের দুই হাজার ৩০০ গরু-ছাগলকে অ্যানথ্রাক্স টিকা প্রদান করে। পরে পাশের বেড়া গঙ্গারামপুর এবং মামুদপুর গ্রামে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে প্রাণিসম্পদ বিভাগের সংক্রমণশীল রোগতত্ত্ব ইউনিটের একটি দল গত শনিবার (০২ নভেম্বর) এলাকায় এসে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এ দু’টি গ্রামে বর্তমানে ১৪ হাজার গরু-ছাগলকে বিনামূল্যে টিকা প্রদান করার কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

গবাদিপশু থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমণশীল এ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে ছয়জনের শরীরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রমণশীল রোগ গবেষণা কেন্দ্রের মেডিকেল টিম গত সোমবার (০৪ নভেম্বর) মোল্লাপাড়া গ্রামে ছয়জনের মধ্যে তিনজনকে চিকিৎসা প্রদান করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মুজাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানান, “উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।”

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জুলফিকার মোঃ আখতার হোসেন জানান, “শুরুতেই অ্যানথ্রাক্স রোগে প্রাণী আক্রান্তের বিষয়টি আমাদের নজরে আসায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। টিকাদান কার্যক্রম চালু করার পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে লিফলেট বিতরণ এবং মাইকিং করা হচ্ছে, চলছে উঠান বৈঠক।”

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা আক্তার বলেন, “প্রাণিসম্পদ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন নিবিড়ভাবে কাজ করছে। অসুস্থ গরু জবাই করার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। জবাই করা গরুকে নিরাপদে মাটিচাপা দেওয়া ছাড়াও দু’জন মাংস প্রক্রিয়াকরণকারীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আর্থিক দন্ড প্রদান করা হয়েছে।”

উল্লেখ্য যে, এ্যানথ্রাক্স হল ‘ব্যাসিলাস এ্যানথ্রাসিস’ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রমণ। এ সংক্রমণ সাধারণত আক্রান্ত পশু জবাই করা, সেটির মাংস কাটাকাটি করা এবং মাংস ধোয়া বা রান্নার সময় অনেকক্ষণ মাংস, রক্ত ও হাড্ডির সংস্পর্শে থাকলে সেসময় আক্রান্ত পশুর রক্তের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে মানুষ থেকে মানুষে এ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ হয় না।

সাধারণত সংক্রমিত হওয়ার দুই থেকে পাঁচ দিন সময়ের মধ্যে লক্ষণের সূত্রপাত ঘটে।প্রথমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোঁড়া বা গোটা হয়ে থাকে ; ফোঁড়া ঠিক হয়ে গেলে হাতে, মুখে বা কাঁধের চামড়ায় দাগ দেখা যেতে পারে। একইসাথে ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহের কারণে, উঁচু মাত্রার জ্বর, ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে তীব্র শ্বাসকষ্ট এবং পরিপাকতন্ত্রের জটিলতাও এ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ।

এ্যানথ্রাক্স মুখবিবরীয় অঞ্চল, ত্বক ও পরিপাকতন্ত্রে হতে পারে। বেশির ভাগ এ্যানথ্রাক্স ত্বকের এ্যানথ্রাক্স, যা চিকিৎসা করলে, এমনকি চিকিৎসা না করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভালো হয়ে যায়। তবে অন্যান্য ধরনের এ্যানথ্রাক্সের পরিণতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খারাপ। এর মধ্যে সেপটিসেমিক এ্যানথ্রাক্স এবং এ্যানথ্রাক্স মেনিনজাইটিস এ মৃত্যুহার খুবই বেশি। তবে আশার বিষয় হল, বাংলাদেশের বেশিরভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই এ্যানথ্রাক্সের চিকিৎসা করানো হয়।

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক: মঈন উদ্দিন আহমদ শিবলী

প্ল্যাটফর্ম কনট্রিবিউটর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

বাংলাদেশের থ্যালাসেমিয়ার ঝুঁকি ও প্রতিরোধের উপায়

Thu Nov 7 , 2024
বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৪ থ্যালাসেমিয়া একটি জিনগত রক্তরোগ, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের সঠিক উৎপাদন ব্যাহত করে। হিমোগ্লোবিন হলো লোহিত রক্তকণিকার একটি প্রোটিন, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন কমে যায়, ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা দেখা দেয়। ‘থ্যালাসেমিয়া’ একটি গ্রিক শব্দ। ‘থ্যালাস’ অর্থ সমুদ্র এবং […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo