নিপাহ ভাইরাসের কারণে ঠাকুরগাঁও এ প্রাণ হারান একই পরিবারের ৫ জন

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় অজ্ঞাত রোগে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর পেছনে দায়ী ছিল নিপাহ ভাইরাস। গত ৪ মার্চ দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. খাইরুল কবির এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান।

নিপাহ ভাইরাস

মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর নয় সদস্যের একটি দল নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছে। আইইডিসিআরের অনুসন্ধানে এসেছে, মৃত ব্যক্তিদের সবার জ্বর, মাথাব্যথা, বমি ও মস্তিষ্কে ইনফেকশনের (এনসেফালাইটিস) উপসর্গ ছিল। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের নমুনা নেওয়া সম্ভব হয়। সে নমুনায় নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। অন্য জীবিত সন্দেহভাজন রোগীদের রক্তে অবশ্য নিপাহ ভাইরাস পাওয়া যায়নি।

বাদুড়ের খাওয়া খেঁজুরের কাঁচা রসের মাধ্যমে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। আইইডিসিআর এর পক্ষ থেকে খেজুরের কাঁচা রস পানে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পর হাত-পা সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং নিপাহ–আক্রান্ত রোগীদের সেবায় স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের মাস্ক ও গ্লাভস পরতে হবে।

উল্লেখ্য, তিন সপ্তাহ আগে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভান্ডারদহ মরিচপাড়া গ্রামের আবু তাহের (৫৫) হঠাৎ অসুস্থ হন এবং ৯ ফেব্রুয়ারি মারা যান। একই উপসর্গ নিয়ে ১৫ দিনের ব্যবধানে তাঁর দুই ছেলে ইউসুফ আলী (৩০) ও মেহেদী হাসান (১৭), স্ত্রী হোসনে আরা (৪৫) এবং জামাতা হাবিবুর রহমান (৩৫) মারা যান।

আকস্মিক এই ঘটনায় ওই গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কোন রোগের কারণে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, চিকিৎসকেরা তাৎক্ষণিকভাবে তা নিরূপণ করতে পারেননি। ঘটনা অনুসন্ধান করতে রোগের ধরন, প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাবের ওপর নজরদারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের একটি ‘আউটব্রেক ইনভেস্টিগেশন’ দল পাঠায়। পরে আরও চার সদস্যের আরেকটি দল মূল দলে যোগ দেয়। তদন্ত দলটি ১ মার্চ পর্যন্ত বালিয়াডাঙ্গী এলাকা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করে এবং হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মৃত ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। তদন্ত দল পরে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দেয়।

বর্তমানে বিভিন্ন সময়ে মৃত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে তাঁদের স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার:
সামিউন ফাতীহা
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

অল্পেকটু ভালোবাসা নিয়ে সরকারী হাসপাতালে আসুন

Mon Mar 11 , 2019
“অল্পেকটু ভালোবাসা নিয়ে সরকারী হাসপাতালে আসুন” বিশেষ কলাম | রাজীব দে সরকার আপনার প্রিয় মানুষটি অসুস্থ কিংবা সুতীব্র শারীরিক যন্ত্রণায় কাতর। আপনি স্বাভাবিকভাবেই উৎকন্ঠিত, উদ্বিগ্ন এবং বিমর্ষ। আপনার লক্ষ্য, হাসপাতালে গিয়ে আপনার প্রিয় মানুষটির দ্রুত কষ্ট লাঘবের ব্যবস্থা করা। আপনি হাসপাতালে এলেন আপনার স্বজনকে নিয়ে। চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশী আরো অনেকেই […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo