প্যারাসিটামল আসলো কীভাবে?
“প্যারাসিটামল” – এই শব্দটির সাথে কোনো পরিচিতি নেই কিংবা এই বস্তুটি কখনো গ্রহণ করেন নি, এমন মানুষের অস্তিত্ব আজ রূপকথা। প্যারাসিটামল নামক নিত্যদিনের এ সঙ্গীর জন্ম কীভাবে হলো, সেই মজাদার ইতিহাস জেনে নেয়াই এই লেখার উদ্দেশ্য।
সময়টা ১৬৩৮ এর কাছাকাছি হবে। এক রাতে স্প্যানিশ রাজা লুইস জেরিম্যানু ফার্নান্দেজ ডি ক্যাপ্রিরিওর স্ত্রী এনার প্রচন্ড জ্বর আসলো। টারশিয়ারি (ম্যালেরিয়া) ফিভার। রাজার মনে শান্তি নেই, চোখে ঘুম নেই। প্রিয় রানী শয্যাশায়ী- কোন কিছুতেই যেন মন বসছে না! খবর পেয়ে লুক্সার গভর্নর রাজাকে চিঠি দিলেন। চিঠিতে লিখলেন Cinchona নামক গাছের বাকল সেবন করলে রোগ আরোগ্য হবে। এটা উনি পরীক্ষা করে দেখেছেন। চিঠি পড়ে রাজার মনে স্বস্তি ফিরে এলো। সেই থেকেই Antipyratic হিসেবে Cinchona গাছটির ব্যবহার শুরু।
কিন্তু বিপত্তি বাধলো ১৮৮০ দশকের দিকে। বহুল ব্যবহারের দরুণ হারিয়ে যেতে বসলো এই মহান গাছ cinchona। মানুষ হন্যে হয়ে বিকল্প পথ খুঁজতে লাগলো। ১৮৮৬ সালে Acetanilide এবং ১৮৮৭ সালে Phenacetin নামক দুটি Antipyratic আবিষ্কৃতও হলো। তবে মজার ব্যাপার হলো, ইতিমধ্যে স্যার হারমোন নর্থোপ মোরস p-Nitrophenol থেকে প্যারাসিটামল নামক একটি ড্রাগ বানিয়ে ফেললেন, যদিও ঐসময়ে তার এই উদ্ভাবনিকে চিকিৎসা বিজ্ঞান মেনে নেয় নি। ১৮৯৯ সালে বের হয়ে আসলো আরো একটি মজার তথ্য। Acetanilide সেবনকারীর মূত্রে Metabolites হিসেবে ‘Paracetamol’ পাওয়া যায়।
১৯৪৬ সাল। নিউইয়র্কে “The Institute for the Study of Analgesic and Sedative Drugs” এর আয়োজনে কনফারেন্স ডাকা হলো। বিজ্ঞানী বার্নারড ও জুলিয়াসের উপর দায়িত্ব পড়লো কেন Non-Aspirin Agents গুলো পটেনশিয়ালি লিথাল এবং Methemoglobinemia ডেভেলপ করে তা খুঁজে বের করা। ১৯৪৮ সালে উনারা খুঁজে বের করলেন যে Acetanilide এর Antipyretic হিসেবে কাজ করার মূল নেপথ্যই হচ্ছে এর Metabolites “প্যারাসিটামল”। কাজেই Acetanilide ব্যবহার না করে শুধু প্যারাসিটামল ব্যবহার করলে কোন জটিলতা তৈরি হবে না। তখন থেকে Acetanilide এর বদলে প্যারাসিটামল এর ব্যবহার শুরু হয়৷ পরবর্তীকালে ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ও ১৯৫৬ সালে যুক্তরাজ্যে বানিজ্যিকভাবে এর প্রচলন শুরু হয়।
সেই থেকে প্যারাসিটামলের যাত্রা চলছে আজ অবধি।
রুদ্র মেহেরাব
সাহাবুদ্দীন মেডিকেল কলেজ
১৩ তম ব্যাচ
প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার:
সামিউন ফাতীহা
সেশন ২০১৬-১৭
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর