প্রফের মাস জুলাই! ভাবতেই ভয় লাগে।
একটা প্রফ যে কত্ত বড় একটা চাপ একজন মেডিকেল ছাত্রের জন্য তা শুধু আমরাই জানি। আমি স্টুডেন্ট খুব বেশী ভালো না।
তবে পাশ করার জন্য স্টুডেন্ট খুব বেশী ভালো দরকার হয় না।মেডিকেলে পাশ করার জন্য দরকার প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন পড়ে ফেলা। আর কিছু বুদ্ধি খাটিয়ে অল্পতেই পাশ করা যায়।
আমার লেখাটা অতি ভালো স্টুডেন্টরা এড়িয়ে চলবেন, প্লীজ।আমার মত যারা দুর্বল স্টুডেন্ট শুধুমাত্র তাদের জন্য লেখাটা। আশা করি পাশ করে যাবেন….!
নিজের এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলছি। আজ লিখিত পরীক্ষা নিয়ে লিখছি:
১.যেহেতু সময় একেবারেই নেই তাই এখন শুধুমাত্র গুরুত্বপুর্ন প্রশ্ন গুলো পড়ে ফেলতে হবে।
শেষ ৫ বছরের বোর্ড এর প্রশ্ন সলভ করলে মোটামুটি ৯০-৯৫% প্রশ্ন কমন পড়ার সম্ভাবনা আছে।
যদি তাও সম্ভব না হয় তবে প্রতি চ্যাপ্টার এর সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন গুলো বেছে পড়ে ফেলতে হবে। কোন মতেই মেইন প্রশ্ন গুলো না পড়ে যাওয়া যাবে না।
প্রত্যেক প্রশ্নের সাথে ছবিগুলো শিখে নিতে হবে। ছবি আপনার খাতার চেহারাই পালটে দিবে। ভালো ছবি আঁকতে না পারলেও যদি নূন্যতম ধারনা থাকে তবে ছবি দিততে ট্রাই করুন।
২.পরীক্ষার আগেই আপনার প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র, কলম (ফ্রী করে নিতে হবে), পেন্সিল,স্কেল সব কিছু আগেই রেডি করে রাখুন।
প্রতিটা প্রশ্নের জন্য টাইম ভাগ করে নিন।একটা হাত ঘড়ি বেঞ্চির উপর রাখুন যাতে ওটাতে সব সময় চোখ যায়।টাইম ভাগ করে লেখার ট্রাই করুন।
এমন ভাবে ভাগ করুন টাইম যাতে ৫-১০ মিনিট এক্সট্রা পাওয়া যায়।(যদিও আলটিমেটলি এই টাইমটা পাবেন না, জানি 😛 )
৩. কোন ভাবেই কোন প্রশ্নের উত্তর ছেড়ে আসা চলবে না।এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
ধরুন আপনি প্রশ্ন উত্তর পারেন না। না পারলেও,ওই টপিক সম্পর্কে যতটুকু জানেন ততটুকুই লিখুন।
ধরুন AGN এর প্যাথোজেনেসিস আসলো। কিন্তু,আপনি পারেন না। আপনি যদি AGN এর ডেফিনিশন পারেন তবে তাই লিখে আসুন।
(এটার খুব বড় একটি কার্যকারিতা আছে। যখন ১/২ নাম্বার এর জন্য পাস আটকে যাবে তখন এটাই আপনাকে বাঁচাবে)
৪. সম্পূর্ণ নিজের উপর ভরসা করে যাবেন। মনে রাখবেন, বন্ধুরা ১০/১৫ নাম্বার হেল্প করতে পারে বড়জোর কিন্তু ৫০% বা ৬০% হেল্প করতে পারবে না।
৫. কোন মতেই পরীক্ষার আগের রাতে ঘুম আসতে চাইবে না।তাও চেস্টা করতে হবে কিছুটা ঘুমিয়ে নিয়ে মাথাটা ঠান্ডা করে নেয়া।
রোজা না থাকলে অবশ্যই নাস্তা করার ট্রাই করুন। কমপক্ষে একটা মিষ্টি খান।
৬. খাতার এবং OMR ফর্ম এ রোল নাম্বার এবং রেজিস্ট্রেশন নাম্বার লিখে কয়েকবার রিভিশন দিয়ে নিবেন। মনে রাখবেন, এখানে ভুল হলে সব শেষ। ভুল করে যদি বুঝতে পারেন তবে অবশ্যই স্যার কে জানান।
৭. প্রত্যেক সাবজেক্টে দুইটা গ্রুপ থাকে। সিনিয়রদের কাছ থেকে অথবা টিউটোরিয়াল স্যারদের কাছ থেকে জেনে দিন কোন গ্রুপ ইন্টারনাল আর কোন গ্রুপ এক্সর্টারনাল দেখবে।
এক্সর্টারনালরা যে গ্রুপ দেখবেন ওই গ্রুপের টপিক গুলোর উপর জোর দিন এবং আগে ওই গ্রুপ এর উত্তর দিতে চেস্টা করুন।
৮. একটা খুবই ইম্পর্টেন্ট টপিক, অনেক অনেক খবর আসবে প্রশ্ন ফাঁস হবার। এটা একেবারেই ভুয়া নিউজ ছাড়া কিছুই না।এতে কান দিয়ে সময় নষ্ট করবেন না প্লীজ।
৯. প্রতিদিন রিটেন পরীক্ষার পর লম্বা একটা ক্লান্তির ঘুম দিন এবং মনে মনে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য মনকে প্রিপেয়ার করুন।
পরীক্ষা খারাপ হলে টেনশন এর কিছু নাই। মনে রাখবেন, সব যদি পারতেন তবে১০০% এই পাস হতো। ৬০% এ পাস হতো না।আর যদি ৬০% এর চাইতেও খারাপ হয় তবে মনে করুন যা হবার হলো। টেনশন করে লাভ নাই।
১০. যখন রিভিশন দিবেন তখন অবশ্যই আপনার চাইতে যারা স্টুডেন্ট দুর্বল তাদের কে ফোন দিবেন। যখন দেখবেন বন্ধুটি আপনার চাইতে পিছিয়ে আছে তখন আপনি ঠান্ডা মাথায় পড়তে পারবেন।
কিন্তু, যদি দেখেন কেউ আপনার চাইতে খুব বেশী এগিয়ে তখন আপনার মাঝে একটা টেনশন কাজ করবে। আর এজন্য ভালোমত, রিভিশন দিতে পারবেন না। টেনশনে সোজা টপিকগুলো ভুলে যাবেন।
সর্বোপরি….
আল্লাহ্ ‘র উপর ভরসা রাখুন। যা হবার তা হবেই।
চেষ্টা করে যান, ইনশাআল্লাহ পাশ করে যাবেন।
মেডিকেলে পাশ ফেল মামুলি ব্যাপার। আমার দেখা,এক বড় ভাই ৫ বার শুধু প্যাথলজিতে ফেল করেন টানা। তাও আশা না হারিয়ে লেগে থাকেন। এক সময় পাস ও করে যান….
অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো পরিক্ষার্থীদের জন্য 🙂
লিখেছেন: নাহিদ হাসান রিফাত
পরিমার্জনা: বনফুল