#প্রসংগ_গো_মুত্র_পান
সম্প্রতি অনলাইন নিউজে ভারতে গো-মুত্র পানের হিড়িক পড়ার খবর বেশ প্রচার পাচ্ছে। যারা গ্লাসের পর গ্লাস ঢোক ঢোক করে হলুদাভ গো-মুত্র পান করে তৃপ্তির লম্বা ঝাঁঝালো ঢেকুর তুলছেন, তাদের ধারনা গো-মুত্র পানে- জ্বর, গ্যাস্ট্রিক আলসার, খিচুনী, লেপ্রসি, ক্যান্সারের মতো রোগ সেরে যায়। আর মনে প্রানে এটা বিশ্বাস করে লিটারে লিটার গো-মুত্র কিনে পান করার হিড়িক পড়ে গেছে ভারতের সর্বত্র।
কি আছে এই গো-মুত্রে?
আসলে গো-মুত্র আর মানব মুত্রের উপাদান প্রায় একই। শতকরা ৯৫% ভাগ পানি, কিছু মিনারেলস যেমন সোডিয়াম, পটাসিয়াম, কিছু হরমোনাল মেটাবলাইটস, আর এমোনিয়া। যে গো-মুত্র পানের হিড়িকে বাজারে মুত্রের দাম দুধের দামের তিন গুন সেটা সাধারণ গো-মুত্র নয় কিন্তু। এটা হলো ‘গর্ভবতী গাভীর’ মুত্র। গরু গর্ভবতী থাকায় তাতে নাকি এসব রোগের উপশমকারী উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। তাই দুধ রেখে দলে দলে গ্লাসে গ্লাসে গো-মুত্র পানের হিড়িক পড়েছে।
অনেক আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ বলছেন ভিন্ন কথা। যেহেতু ধরনীতে সবুজ গাছ গাছালিতে সব রোগের উপাদান বিদ্যমান , আর গরুর প্রধান খাদ্য এই সবুজ ঘাস, তাই তাদের হাইপোথিসিস, গো-মুত্রে গাছ গাছালির ভেষজ গুনাগুন থাকাটাই স্বাভাবিক।
বিশ্বের কোথায় কোথায় গো-মুত্র পান হয়?
গো-মুত্র পান যে কেবল ভারতেই তা কিন্তু নয়। এই কর্মটিতে মুসলিম প্রধান দেশ নাইজেরিয়া এবং বৌদ্ধ প্রধান দেশ মায়ানমার ও অগ্রগামী। গো-মুত্রে ক্যান্সার, খিচুনি, লেপ্রসি, পেপটিক আলসার এর উপশম হয়েছে কিনা খবর টি নিশ্চিত করা না গেলেও, গো-মুত্র পানের বিষক্রিয়ায় অনেক মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
বাংলাদেশে গো-মুত্রের ভবিষ্যৎ
ভবিষ্যতে বৈজ্ঞানিক গবেষনায় গো-মুত্রে যদি সত্যিই এসব রোগের উপশমকারী কোন কিছুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তবে বাংলাদেশেও বিভিন্ন ডেইরি ফার্ম বাজার জাত শুরু করবে, ‘গরুর খাঁটি মুত’ অথবা ‘খাঁটি গরুর মুত’। আর গো-মুত্র পান করে টিভি বিজ্ঞাপনে ‘তৃপ্তির ঝাঁঝালো ঢেকুর’ তুলে ৭’৫ রিখটার স্কেল মাত্রার চিংড়ি মাছের মতো লম্ফ দিয়ে বলে উঠবেন সুন্দরী মডেল গন, ‘টলার, শার্পার, স্ট্রংগার….’।
কলাম লেখকঃ
ডা. মোহাম্মদ সাঈদ এনাম
ডি এম সি, কে-৫২
সাইকিয়াট্রিস্ট
মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন
মেম্বার, ইউরোপিয়ান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন