প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৪ অক্টোবর ২০২০, রবিবার
সালমা শবনম
আবৃত্তি শিল্পী
সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ‘পঙ্ক্তি’।
ভাষা পরিবর্তনযোগ্য। স্থান-কাল ভেদে ভাষা পরিবর্তন হয়েছে। লেখার ভাষার চেয়ে বলার ভাষা পরিবর্তন হয়েছে দ্রুত গতিতে, এখনও হচ্ছে। নানারকমের শব্দ আমাদের বলার ভাষার ভেতরে প্রবেশ করে সময়ের সাথে সাথে। আবার বলবার ধরণের মধ্যেও পরিবর্তন হয়। এত্ত পরিবর্তনের মাঝেও মানুষ সময়ের সাপেক্ষে একটি মান নির্ধারণ করতে চেয়েছে যুগে যুগে…. সেটিই সেই কালের, সেই সময়ের মান ভাষা বা প্রমিত ভাষা।
বাংলা ভাষাও এসবের ব্যতিক্রম নয়। আমরাও বাংলার জন্যে একটি মান ভাষা বা প্রমিত ভাষা নির্ধারণ করেছি। আবারও বলছি এই প্রমিত বা মান ভাষাটি আপেক্ষিক। আজ যা প্রমিত, কাল তা পুরনো হতে বাধ্য। তবে যতক্ষণ সেটি আমার কালকে প্রতিনিধিত্ব করছে ততক্ষণ সেটি অবশ্যই অনুসরণীয়।
নয়ত আনুষ্ঠানিক যেকোন কিছু আটপৌরে হতে বাধ্য। এবং একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সুকৌশলে প্রমিত ভাষাকে পাশ কাটিয়ে যাবার প্রবনতা সর্বত্র। বাংলাভাষার এই দৈন্যদশার জন্যে কে বা কারা দায়ী এই তর্কে এই লেখায় যেতে চাইছিনা, কেননা তাতে করে লেখাটির দৈর্ঘ্য অযাচিতভাবে বাড়তে থাকবে।
এতসব হতাশার মাঝেও আশার ক্ষীণরেখাটি বিদ্যমান সেটি জোর দিয়েই বলা যায়। উচ্চারণ নিয়ে কাজ করছে, এমন অসংখ্য সংগঠন সারাদেশে বিরাজমান। মূলত: সেগুলো আবৃত্তি সংগঠন। পাশাপাশি আশাজাগানিয়া যে ব্যাপারটি সেটি হলো, আবৃত্তি বেজড সংগঠন না হয়েও শুদ্ধ উচ্চারণে গুরত্ব দেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও নেহায়েত মন্দ নয়।
তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান প্ল্যাটফর্ম। চিকিৎসকদের নানাদিক নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি সম্প্রতি উচ্চারণ কর্মশালার আয়োজন করে ভাষার প্রতি তাঁদের দায় স্বীকার করবার যে চমৎকার উদাহরণটির সৃষ্টি করল, সেটি আমাকে সত্যি আপ্লুত করেছে।
কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন প্রায় ২৫ জন চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী এবং চিকিৎসক। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতো কঠিন একটি বিষয় আয়ত্ব করবার পাশাপাশি ভাষার প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা সত্যি প্রশংসার দাবী রাখে। প্রতিষ্ঠানটি শিগগির দ্বিতীয় ব্যাচের কর্মশালার আয়োজন করতে যাচ্ছে। অভিনন্দন রইল।
সমাজের প্রতিটি পেশার, প্রতিটি স্তরের মানুষের মধ্যে যদি ভাষার প্রতি এমন মমত্ববোধ জাগ্রত হয়, তবে বাংলাভাষার বর্তমান দৈন্যদশা কাটতে খুব বেশি সময় লাগবেনা বলে আমার বিশ্বাস।
‘মোদের গরব, মোদের আশা,
আ মরি বাংলা ভাষা!’