প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৮ জুলাই, ২০২১, রবিবার
প্ল্যাটফর্ম অফ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি, চট্টগ্রাম জোনের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। গত ২৪ জুন মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজে প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। ‘করি বৃক্ষ রোপন, সুশোভিত করি নবীনের জীবন’ – এই স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জোনের আওতাধীন মেডিকেল কলেজ সমূহে চারদিনব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২১ এর মূল উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলার অধীনে যে সকল মেডিকেল ক্যাম্পাসে গাছপালা তুলনামূলকভাবে কম, সে সকল জায়গাকে নির্দিষ্ট করে গাছ লাগানো। চট্টগ্রামের পাঁচটি মেডিকেল কলেজ – মেরিনসিটি মেডিকেল কলেজ, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ, ইন্সটিটিউশন অফ এপ্লাইড হেলথ এন্ড সাইন্স, চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ এবং কুমিল্লার দুইটি মেডিকেল কলেজ – কুমিল্লা সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ, ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। মেডিকেল কলেজসমূহে প্রায় সাত হাজার টাকা সমমূল্যের ছায়াদানকারী গাছ, মূলত কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, চেরি, আম্রপালি ও কদম গাছ লাগানো হয়। ইন্সটিটিউশন অফ এপ্লাইড হেলথ এন্ড সাইন্স, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ ও মেরিনসিটি মেডিকেল কলেজে ১০ টি করে মোট ৩০টি এবং বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজে মোট ৫০টি গাছ লাগানো হয়। ময়নামতি মেডিকেল কলেজে ৪টি, কুমিল্লা সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজে ৫টি ও ক্যাম্পাসের বাইরে ৪টি সহ কুমিল্লায় সর্বমোট ১৩ টি গাছ লাগানো হয়।
২৪জুন, বৃহস্পতিবার মেরিনসিটি মেডিকেল কলেজে এই কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্ল্যাটফর্ম অফ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি, চট্টগ্রাম জোন এর সম্মানিত উপদেষ্টামণ্ডলী, মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ ও প্ল্যাটফর্ম চট্টগ্রাম জোনের এক্টিভিস্টগণ।
এই প্রজেক্টের পরিকল্পনা, সার্বিক আর্থিক সহায়তা ও অনুপ্রেরণায় ছিলেন প্ল্যাটফর্মের সম্মানিত উপদেষ্টা ডা. সামান্তা রহমান। তিনি বর্তমানে লন্ডন এর ইপসম এন্ড সেন্ট হেলিয়ার ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে জুনিয়ার ক্লিনিক্যাল ফেলো হিসেবে কর্মরত আছেন। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. সামান্তা রহমান জানান,
“দেশের বাইরে চলে আসার পর সবসময়ই আমার মনে হতো যেকোন সুযোগ পেলেই যেন আমার এলাকার মানুষের জন্য কিছু করতে পারি। কিন্তু কিভাবে কাজ করলে সেটার ফল সবাই দীর্ঘদিন ভোগ করতে পারবে বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরিবেশ বিষয়ক আর্টিকেল পড়ে বুঝলাম গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে যে অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে তার মধ্যে অন্যতম হল আমার প্রাণের চট্টগ্রাম, যার অধিকাংশই পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। বৃক্ষরোপণ এর মাধ্যমে সেই ব্যাপারটা কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাছাড়া ধর্মে আছে, এই বৃক্ষ যতদিন ছায়া দিবে কিংবা অন্য প্রাণীদের ফল দিবে, তা সোয়াবের খাতায় যুক্ত হবে। সেই চিন্তা থেকেই চট্টগ্রাম জোনের সবার সাথে কথা বললাম, তারা চমৎকারভাবে পুরো ব্যাপারটা আয়োজন করলো। আশা করি আমরা সামনেও এ ধরনের পরিবেশ বান্ধব বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়ে সচেষ্ট হবো। পুরো টিমকে আবারো ধন্যবাদ সাফল্যের সাথে পুরো প্রোগ্রামটি সম্পাদনা করার জন্য।”
চারদিনব্যাপী এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির প্রথমদিন ২৪ জুন মেরিনসিটি মেডিকেল কলেজে এবং পরবর্তীতে ২৬ জুন চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ, ময়নামতি মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ, ২৭ জুন ইন্সটিটিউশন অফ এপ্লাইড হেলথ এন্ড সাইন্স, চট্টগ্রাম এবং ৩ জুলাই বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজে আয়োজন করা হয়।
এই আয়োজন সম্পর্কে প্ল্যাটফর্ম চট্টগ্রাম জোনের সভাপতি ডা. তৌফিক উল আলম জানান,
“প্ল্যাটফর্ম চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সংগঠন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বৃক্ষরোপণের মত কাজে আমাদের সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে এসেছে। আমরা আমাদের নিয়মিত কাজের বাইরে, এমন সবুজ আন্দোলন অব্যাহত রাখবো।”
মেডিকেল ক্যাম্পাসভিত্তিক কর্মসূচি আয়োজনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে চট্টগ্রাম জোনের সাধারণ সম্পাদক ডা. সুবহে জামিল সুবাহ জানান,
“কোভিড-১৯ এর এই সময়টায় আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা। মেডিকেল কলেজগুলোর ক্যাম্পাসে ছায়াদানকারী গাছ লাগানো এবং এগুলোর পরিচর্যা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের জন্য কিছুটা হলেও অক্সিজেনের ব্যবস্থা হবে। আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে হোক শুরু, এক সময় পুরো দেশ সবুজে সুশোভিত হবে।”
বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে, এ নিয়ে পরিবেশবিদ থেকে সচেতনমহল সকলেই চিন্তিত। এর মাঝেও প্রাচীন বৃক্ষ, বন – নগরায়নের করালগ্রাসে জর্জরিত হওয়ার খবর পত্রিকায় দেখা যায় হর হামেশাই। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকায় খালি জায়গা, রাস্তার ধারে গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে খুব শীঘ্রই পরিবেশকে প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব।