বর্ণাঢ্য জীবন শেষে পরলোকে পাড়ি জমালেন ডা. শুভাগত চৌধুরী

‘পৃথিবীর পুরনাে পথের রেখা হ’য়ে যায় ক্ষয়,

প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়’…

নক্ষত্রের মতো করে ৭৫ বছরের বর্ণাঢ্য জীবন শেষ করে না পরলোকে পাড়ি জমালেন দেশবরেণ্য চিকিৎসাবিজ্ঞানী, জনপ্রিয় লেখক ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী।

দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর মাল্টিপল মায়েলোমায় ভুগছিলেন তিনি। ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে অবশেষে হার মানলেন ডা. শুভাগত চৌধুরী।

ডা. শুভাগত চৌধুরীর জন্ম সিলেট ১৯৪৭ সালে। প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন সিলেটে শিশুস্কুলে। এরপর চলে যান কলতাকায়; পাঠ আরম্ভ করে রবি ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে। ১৯৬১ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন শুভাগত চৌধুরী। দুই বছর পর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে ভর্তি হন।

তবে সেখানে পড়াশোনা করেননি তিনি। চিকিৎসা বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ভর্তি হন সিলেট মেডিকেল কলেজে। এখান থেকেই ১৯৬৯ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন।

১৯৬৯ সালেই বায়োকেমিস্ট্রির শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাতে যোগ দেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালে তৎকালীন পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (আইপিজিএমআর) প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি অর্জন করেন তিনি। এরই মধ্যে ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিকেল বায়োকেমিস্ট্রির উপর এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে শিক্ষা গ্রহণ করেন দেশে ও বিদেশে নানা উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে।

চিকিৎসা বিষয়ে গবেষণা করেছেন লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য ভ্রমণ করেছেন ইংল্যান্ড, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকা। তার গবেষণার বিষয় প্রাণ রসায়ন, পুষ্টি ও চিকিৎসা শিক্ষা পদ্ধতি। তিনি নিউইয়র্ক সায়েন্স অ্যাকাডেমির নির্বাচিত সদস্য।

ডা. শুভাগত এরই মধ্যে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। ২০০১ সালের দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন হোন তিনি। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন ২০০৪ সালে।

এরপর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এক বছর চাকরি করেন। তার পরে বহু বছর ধরে বারডেম হাসপাতালের ডিরেক্টর (ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস) পদে চাকরি করেন তিনি।

চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ে দেশি-বিদেশি জার্নালে ৫০টিরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। এ ছাড়া বইও লিখেছেন ৫০টির বেশি। চিকিৎসাক্ষেত্রে অবদানের জন্য শেরেবাংলা জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও।

সবশেষ আজ (১৫ জানুয়ারি) সকালে বাসায় অচেতন হয়ে পড়লে তাকে ইব্রাহিক কার্ডিয়াক হাসপাতালে নেয়া হয়। পরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস

Moin Uddin Ahmad Sibli

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ঢামেকে আবারও ভুয়া চিকিৎসক আটক

Wed Jan 15 , 2025
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের তৃতীয় তলা থেকে ডালিয়া আক্তার (৩২) নামে এক ভুয়া নারী চিকিৎসককে আটক করেছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা। এ সময় ওই নারী চিকিৎসকদের সাদা অ্যাপ্রোন পরা ছিলেন এবং তাঁর গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলানো ছিল। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে ওই […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo