২৭ বছর বয়সী তরুণ চিকিৎসক রিচার্ড ক্যাশ যখন এই ভূখণ্ডে প্রথম আসেন তখন ১৯৬৭ সাল। বাংলাদেশ নামক কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিশ্ব মানচিত্রে ছিল না তখন। আমরা ছিলাম পাকিস্তানের উপনিবেশ। এই অঞ্চলে Infant Mortality Rate ছিল প্রতি ১০০০ জন্মে ১৭৬। রিচার্ড ক্যাশ এবং ডেভিড নালিন চাঁদপুরের মতলবে শুরু করেন ওরস্যালাইনের প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। এই ওরস্যালাইন ডায়রিয়া জনিত রোগে মৃত্যুর হার অভূতপূর্বভাবে কমিয়ে দিয়েছে আজ।
ICDDR,B ওরস্যালাইন (ORS- Oral Rehydration Solution) উদ্ভাবন করে। কিন্তু এই স্যালাইন উদ্ভাবনের পরেও বাংলাদেশে এই খাবার স্যালাইনের ব্যবহার ছিল অত্যন্ত কম। মাত্র ১০%। এই স্যালাইনের ব্যবহার বাড়ানোর বার্তা গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। তার সাথে নানা গবেষণার মাধ্যমে এই স্যালাইনকে আরও সহজ করে গড়ে তোলা যাতে গ্রামের মায়েরা এই স্যালাইন সহজে তৈরি করতে পারে। এভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যপরিচর্যার মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্র্যাকের উদ্ভাবনী ও কার্যকর পদক্ষেপগুলো পৃথিবীতে আজ গবেষণার বিষয়। আশির দশকে ওরস্যালাইনের প্রচলনের মাধ্যমে ব্র্যাক ডায়রিয়া রোধে যুগান্তকারী অবদান রাখে।
‘A Simple Solution: Teaching Millions to Treat Diarrhoea at Home’ নামক বইতে সেই আখ্যান বর্ণনা করেছেন ব্র্যাকের ভাইস চেয়ারম্যান ড. আহমেদ মোশতাক রাজা চৌধুরী এবং হার্ভার্ডের প্রফেসর রিচার্ড ক্যাশ।
৫০ বছর পর ২০১৭ সাল। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন রাষ্ট্র। বর্তমানে Infant Mortality Rate প্রতি ১০০০ জন্মে ৩১। হার্ভার্ডের টি চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের ৭৬ বছর বয়সী অধ্যাপক রিচার্ড ক্যাশ এখনও প্রতি বছর বাংলাদেশে আসেন। কারণ এই দেশকে তিনি ভালোবাসেন। এই মাটিকে তিনি ভালোবাসেন। তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের প্রফেসর।
২০০৫ সালের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের প্রথম ব্যাচ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সব ব্যাচে তিনি ইনট্রোডাকসন টু পাবলিক হেলথ এবং ইনফেকসিয়াস ডিজিস এপিডেমিলজি কোর্স পড়াতে আসেন। কিভাবে একটি বিষয় শতভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়, চিন্তা করা যায় কত দ্রুত এবং সহজে তা শিখতে পেরেছি তাঁর ক্লাশ থেকে।
বাংলাদেশের এই বন্ধু ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিদেশে জনমত তৈরির জন্য “Friends of Liberation War Honour” সম্মাননা পেয়েছেন।
লিখেছেন:
ডা. রজত দাশ গুপ্ত,
জে পি জি স্কুল অব পাবলিক হেলথ