প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ নভেম্বর, ২০২০, মঙ্গলবার
ডা. ফিরদাউস কাদরী বাংলাদেশের গর্ব। যিনি কিনা একটি কার্যকর টিকা (ভ্যাক্সিন) আবিষ্কার করে জায়গা করে নিয়েছেন বিল গেটস এর অন্যতম হিরোদের তালিকায়। তিনি তাঁর জীবনের ২৫ বছর ধরে কাজ করে গেছেন কলেরা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের লক্ষ্যে। ডা. ফিরদাউস কাদরী বর্তমানে বাংলাদেশের একজন অন্যতম গুণী বিজ্ঞানী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করার পর যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ লিভারপুল থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।এরপর তিনি আইসিডিডিআরবি (International Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh) এর ইমিউনোলজি বিভাগের অধীনে পোস্টডক্টরাল ডিগ্রি লাভ করেন। এবং একই বিভাগে সহকারি বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বর্তমানে আইসিডিডিআরবি (International Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh)এর এমিরেটাস বিজ্ঞানী এবং ‘Infectious diseases division’ এর ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র পরিচালক এবং সেন্টার ফর ভ্যাকসিন সায়েন্সেস বিভাগের পরিচালক। গত ৩ বছরে তিনি বাংলাদেশের একটি বস্তিতে প্রায় ৪ লাখেরও বেশি কলেরা টিকার অংশগ্রহণকারীদের নেতৃত্ব দান করেছেন।
তাঁর এই কার্যকর ভ্যাকসিন বিশেষ করে অসংখ্য দরিদ্রদের জীবন বাঁচিয়েছে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের মতো জনসংখ্যাবহুল দেশে নিরাপদ পানি এবং নিরাপদ স্বাস্থ্যব্যবস্থা মেনে চলা খুবই কষ্টকর। যেহেতু কলেরা পানিবাহিত রোগ এবং এটি খুব দ্রুত ছড়াতে পারে পানির মাধ্যমে সেহেতু এর ভয়াবহতা ও অনেক বেশি। ভয়াবহ এই রোগটি যাতে আর কারো মৃত্যুর কারণ না হয় তাই তিনি সঠিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা, জ্ঞানচর্চা ও নিরাপদ পানি নিশ্চিতের পাশাপাশি কলেরা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করেন দীর্ঘ ২৫ বছর। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে যখন রোহিঙ্গা প্রবেশ ঘটে তখন নিরাপদ পানি এবং নিরাপদ স্বাস্থ্যব্যবস্থার কোনো চিহ্ন ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে কলেরা যাতে ভয়াবহ রূপ না নেয় এর জন্য খুব দ্রুত সত্তর হাজার রোহিঙ্গাকে ওরাল কলেরা ভ্যাকসিন সহ অন্যান্য ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। যার ফলে কলেরাসহ আরো অনেক মহামারী রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এছাড়াও তিনি ২০০৫ সালে ‘Bangladesh Academy of Sciences’ থেকে গোল্ড মেডেল, ২০১২ সালে ‘Christophe Mérieux Prize’ এবং ২০১৩ সালে ‘Annanya top ten awards’ অর্জন করেন। এই বছর (২০২০) তিনি L’Oréal-UNESCO For Women in Science Awards লাভ করেন।
তিনি তাঁর কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন সংক্রামক রোগ গবেষণায় নতুন কর্ণধার তৈরিতে এবং তরুণ গবেষকদের শিক্ষা ও গবেষণা উদ্বুদ্ধ করতে। বর্তমানে তিনি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন আবিষ্কারে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ডা. ফিরদাউস কাদরী আমাদের অহংকার এবং বাংলাদেশের গর্ব। তাঁর এই অবদান এবং সাফল্যের কথা কখনো ভুলবার নয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক
জান্নাতুন নূর আয়মন