৭ই জানুয়ারি, মঙ্গলবার,২০২০
ছোটো বেলায় কাল্পনিক গল্প শুনেছিলাম জলঢোঁড়া সাপ নাকি তার সমস্ত বিষ গর্তে রেখে পুকুরে মাছ খেতে নেমেছিল। তারপর যত বিপত্তির শুরু , শুরু হল বৃষ্টি আর বৃষ্টিতে সমস্ত বিষ গিয়ে মিশলো পুকুরে। বিষের মালিক হয়ে গেল টেংরা, মাগুর আর জলঢোড়া হয়ে গেল নির্বিষ।
জলঢোঁড়া নির্বিষ হলেও বাংলাদেশে বিষধর সাপের কমতি নেই। তবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি বড় সুসংবাদ হলো বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিষাক্ত সাপই সামুদ্রিক।তাই সমুদ্র ছাড়া এদের সাথে দেখা হবার সম্ভাবনাও কম ।
বাংলাদেশে মোটামুটি ৯৪ প্রজাতির সাপ পাওয়া গেলেও বিষধর মাএ ২৬ টি। ডাঙায় কয়েক প্রজাতির মধ্যে চন্দ্রঁবোড়া, কালাচ, রাজ গোঁখড়া ও পদ্ম গোখড়া উল্লেখযোগ্য।
চন্দ্রবোড়া(Russell’s Viper):- চঁন্দ্রবোড়া সাপ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দুর্লভ সাপ। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া বর্ধমান ও উত্তর চব্বিশ পরগনা সেইসাথে বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে এ সাপ বেশি পাওয়া যায়। নানা কারনে হঠাৎ করেই এই সাপের সংখ্যা বাংলাদেশে বাড়তে শুরু করেছে। সেই সাথেই প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ কেবল এ সাপটির কামড়েই প্রাণ হারাচ্ছেন। এদের বিষ হেমোটক্সিন সমৃদ্ধ তাই এন্টিভেনম সহজলভ্য নয়। সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই সাপের বিষের এন্টিভেনম নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে ভারতের কেরালা থেকে এন্টিভেনম আমাদের দেশে আমদানি করা হয়ে থাকে।
কিং কোবরা(King Cobra):- রাজ গোখরা,শঙ্খচুর ইত্যাদি নামে বলা হয়।
অতিকায় দীর্ঘ এই নিউরোটক্সিন বিষের ধারক।এটি একবার কামরালে রোগীকে সময়মতো হাসপাতাল না নিতে পারলে মৃত্যু অবধারিত। সাপটি মাটি থেকে বেশ উচু পর্যন্ত ফোনা তুলতে পারে।আমাদের দেশে এন্টিভেনম সহজলভ্য।
গোখড়া( Cobra):- পদ্ম গোখড়া, খয়ে গোখড়া, খরিশ ইলপিডি গোএের অতি পরিচিত নাম।
এরা মরণঘাতী নিউরোটক্সিন বিষ সমৃদ্ধ।এরা ফোনাও তুলতে পারে। পদ্মগোখরার মাথার(ফোনার) পেছনে ডিম্বাকৃতির চিহ্ন রয়েছে।আর খরিশ গোখরার মাথার(ফোনার) পেছনে U আকৃতির চিহ্ন রয়েছে। দ্রুত হাসপাতালে না নিলে মৃত্যু অনিবার্য। সময়মত এন্টিভেনম দিলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাচানো সম্ভব।
কালাচ(Common Krait):- গোখরা, কেউটের চেয়েও কড়া বিষের অধিকারী কালাচ।
এই সাপটির গায়ে হলুদ বা বাদামী রঙের দাগ আছে।দেশে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ কালাচের কামড়ে মারা যায়।এর দাঁত খুবই চিকন হওয়ায় এর কামড় অনুভব করা যায় না।তাই একে নিরব ঘাতকও বলা হয়।এর বিষ নিউরোটক্সিন সমৃদ্ধ। তবে এই বিষটি একটু ধীরগতিতে কাজ করে।এর কামড়ের উপসর্গগুলো হলো-বমি হওয়া,চোখের পাপড়ি পরে যাওয়া ইত্যাদি।এন্টিভেনম আমাদের দেশে সহজলভ্য।
শঙ্খিনী(Banded Krait):-শঙ্খিনীও কালাচের একটি গোএ।
কিন্তু এর শরীরের হলুদ দাগগুলো একটু মোটা আকৃতির হয়ে থাকে।এই সাপটি প্রচুর লাজুক কিন্তু ভয়ংকর বিষধর।এই সাপটি ধীরগতিতে চলাফেরা করে।।। একে চরম পর্যায়ে আঘাত না করলে কামরায় না।তবে এই সাপটি ভয়াবহ নিউরোটক্সিন বিষের ধারক।এই সাপটি অন্য সকল বিষাক্ত সাপ যেমন:-গোখরা,কালাচ,কিং কোবরা এমনকি রাসেলস ভাইপারও খেতে পারে এবং নিরবে মানুষের উপকার করে।
এন্টিভেনম পাওয়া যায় এমন কিছু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম :-
১. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
২.মিডফোর্ড হাসপাতাল
৩.চিটাগাং মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৪.কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৫.কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৬.ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৭.রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৮.রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৯.দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
১২. শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
এছাড়া ও অন্যান্য সরকারি, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর এবং উপজেলা পর্যায়ের বেশ কিছু হাসপাতালে এন্টিভেনম সহজেই পাওয়া যায়।
স্টাফ রিপোর্টার
শুভাশীষ সরকার।
বিষধর সাপ কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হয়। তারপর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হয়। এখন বিষ যদি হালকা মাত্রায় হয় তবে বেঁচে যায়। কিন্তু বিষ যদি বেশি মাত্রায় হয় তাহলে বাঁচে না।