সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪
অন্যান্য খাতের মতো গত দেড় দশকে দূর্নীতির করালগ্রাসে আক্রান্ত ছিল বেসরকারি স্বাস্থ্যখাত। এ সময়ে দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অনুমোদন ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অধিকাংশই ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি কিংবা নেতা। সেবা প্রদানের পরিবর্তে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হওয়ায় বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত গত দেড় দশকে ন্যূনতম আলোর মুখ দেখেনি।
দূর্নীতির মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজকে। বিভিন্ন শর্ত ও আইনের ভিত্তিতে বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ চালানোর কথা থাকলেও ক্ষমতার উপর ভর করে সব শর্ত ও আইনই উপেক্ষা করা হয়েছে। কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে পরিণত করা হয়েছে লাভজনক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। প্রতি শিক্ষাবর্ষেই বাড়ানো হয়েছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি ফিসহ অন্যান্য ফি।
ফলসরূপ, বিপুল অর্থ ব্যয় করেও মানসম্মত শিক্ষা পাননি এসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। আইন অনুযায়ী – কলেজের পর্যাপ্ত জমি না থাকা, শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট, লাইব্রেরিতে অপর্যাপ্ত আসন সংখ্যা, মিউজিয়ামে সরঞ্জাম ঘাটতি, হাসপাতালে অপর্যাপ্ত শয্যা, আবাসন সংকট থাকলেও সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রভাব খাটানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে সংকটেও পরিচালিত হয়েছে এসব মেডিকেলের শিক্ষা কার্যক্রম। এতে প্রভাবশালীরা ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
“বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২২” -এর ৬ষ্ঠ ধারা ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বা ডেন্টাল কলেজ স্থাপনের শর্তাবলি’ অনুযায়ী, ৫০ আসনের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের জন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় কলেজের নামে ন্যূনতম দুই একর এবং মেট্রোপলিটনের বাইরে ন্যূনতম চার একর জমি থাকতে হবে। তবে মেট্রোপলিটন এলাকায় আইন পাসের আগে একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের নামে ন্যূনতম এক একর জমি থাকতে হবে। এই জমি কলেজের নামে নিরঙ্কুশ, নিষ্কণ্টক, অখণ্ড ও দায়মুক্ত হতে হবে। একাডেমিক ও হাসপাতাল মিলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ সর্বনিম্ন ২ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে।
তবে বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। রাজধানীর ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ, পপুলার মেডিকেল কলেজ, গ্রিনলাইফ মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, এনাম মেডিকেল কলেজ, ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ, মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর ভূঁইয়া মেডিকেল কলেজ ও গাজীপুরের ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের নথি বিশ্লেষণ করে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিমাণ জমি না থাকার পাশাপাশি নানা অসংগতির বিষয় উঠে এসেছে। এর মধ্যে – এসব মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী অনুপাতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট, লাইব্রেরিতে অপর্যাপ্ত আসন সংখ্যা, মিউজিয়ামে সরঞ্জাম ঘাটতি উল্লেখযোগ্য। এ সকল বিষয় উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শন ও ডিনস কমিটি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বারবার সময় বেঁধে দেয়ার পরেও ক্ষমতার প্রভাবে কোন শর্ত পূরণ করেনি এসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেশের ৭৩ বেসরকারি মেডিকেল কলেজের তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে প্রভাবশালীদের মালিকানাধীন মেডিকেল কলেজের জমির পরিমাণ, জমির মালিকানা, শিক্ষক-জনবলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিশেষজ্ঞ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আফজালুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “যত্রতত্র মেডিকেল কলেজের বেশিরভাগ মানসম্মত নয়। বেশিরভাগই ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়। ব্যবসায়িক স্বার্থে মেডিকেল কলেজ ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক স্বার্থে এগুলো ব্যবহার করতে দেওয়া ঠিক হবে না। আদৌ দেশে এত মেডিকেল কলেজ দরকার আছে কি না, সেটা ভেবে দেখা দরকার। প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করে দেখতে পারি দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে কত মেডিকেল কলেজ এ দেশে থাকা দরকার। এত মেডিকেল কলেজ প্রয়োজন না হলে, সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।”
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, “বেশকিছু মেডিকেল কলেজ মানসম্মত নয়। একেকটার একেক সমস্যা। কোনোটার অবস্থা একেবারে ভয়াবহ, বন্ধ করে দেওয়ার মতো। দায়িত্ব গ্রহণের পর দেখেছি ছয়টি মেডিকেল কলেজের অবস্থা খুবই খারাপ। সেই ছয়টি মেডিকেল কলেজ নিয়ে সভা করেছি। কয়েকটির অবস্থা আরেকটু ভালো। তুলনামূলকভাবে একটু ভালো বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোকে কীভাবে সচল কর যায়, সেই উপায় নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুশকিল হলো একটি মেডিকেল কলেজে নির্দেশ আছে পরিদর্শনের। সেখানে পরিদর্শন রিপোর্ট অনেক পুরোনো। ওই মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ওই পরিদর্শন রিপোর্টের পর কাজ করেছে। এখন পরিদর্শন টিম গঠন করতে গেলে বিএমডিসি প্রতিনিধি প্রয়োজন হয়। এই মুহূর্তে বিএমডিসি নেই। বিএমডিসি গঠন না হওয়া পর্যন্ত পরিদর্শনও করা যাচ্ছে না। আমরা আশা করছি, শিগগির বিএমডিসি গঠন করা হবে। এরপর পরিদর্শন রিপোর্ট ধরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এসব অসংগতির বিষয়ে জানতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের পক্ষ থেকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান, এমএইচ শমরিতা মেডিক্যাল কলেজের চেয়ারম্যান আহসানুল ইসলাম টিটু, এনাম মেডিকেল কলেজের ডা. এনামুর রহমান এবং ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খানের মুঠোফোনে কল করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে এসব প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংশ্লিষ্টদের কেউই বর্তমানে দেশে নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শন ও ডিনস কমিটি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বর্ণিত ১০ মেডিকেল কলেজই জমির মালিকানা নিয়ে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে।
রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত ডা. সিরাজুল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ পরিচালনার প্রধান শর্তই লঙ্ঘন করেছে। কলেজের ভবনের ১০ দশমিক ৬৪ কাঠা জমি নুরুল হাসান ফারুক, সামসুল হাসান ও মাহবুব হাসানের নামে এবং ৩৪ কাঠা জমি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ডা. সিরাজুল ইসলামের নামে রয়েছে। “বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২২”– অনুযায়ী একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রধান শর্ত পূরণে কলেজের নামে আরও ১৫২ শতাংশ জমি নামজারি করতে হবে।
কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ শর্ত পূরণ না করেই ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে ১০০ শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন পায়। এছাড়াও “বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২২” অনুযায়ী হাসপাতালে প্রায় ৩০ হাজার বর্গফুট ফ্লোর স্পেস ঘাটতি রয়েছে।
বিভিন্ন অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক দপ্তর গত বছরের ৬ জুন সুনির্দিষ্টভাবে ১৩টি বিষয়ে জানতে চেয়ে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. এমএ আজিজের কাছে একটি চিঠি দেয়। কিন্তু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি।
উল্লেখ্য যে, এর আগে ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত টাস্কফোর্স এবং র্যাব অভিযান চালিয়ে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের ল্যাব থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট এবং চারটি অপারেশন থিয়েটার থেকে বিপুল পরিমাণ সার্জিক্যাল সামগ্রী উদ্ধার করেছিল। নানা অনিয়মের অভিযোগে হাসপাতালটিকে তখন ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। ওই সময় এ হাসপাতালে যত মাইক্রোবায়োলজি রিপোর্ট তৈরি হয়েছে, সবই ভুয়া রিপোর্ট বলেও দাবি করেছিল র্যাব।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আনোয়ার খান। ঢাবির কলেজ পরিদর্শন ও ডিনস কমিটির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৮৬ দশমিক ৮৫ কাঠা জমি কলেজের নামে রেজিস্ট্রেশন আছে। “বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২২” অনুযায়ী আরও ৭০ শতাংশ জমি কলেজের নামে ক্রয় করে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে দলিলের কপি জমা দিতে নির্দেশও দেওয়া হয় ওই প্রতিবেদনে। কিন্তু কলেজের প্রতিষ্ঠাতা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতি শিক্ষাবর্ষে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে নিয়েছেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটির মালিকানা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সংসদ সদস্য এম মকবুল হোসেনের। আইন অনুযায়ী, মেডিকেল কলেজে ৯৫ শতাংশ জমি এবং কলেজ ও হাসপাতালের জন্য ২ লাখ ৫৫ হাজার বর্গফুট ফ্লোর স্পেস ঘাটতির পাশাপাশি হাসপাতালে ১৫০টি শয্যা ঘাটতি রয়েছে। এসব শর্ত পূরণ না করেই সকল নীতিমালা ভঙ্গ করে ক্ষমতার দাপটে প্রতি শিক্ষাবর্ষে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে এই মেডিকেল কলেজের।
ধানমন্ডির আরেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ – পপুলার মেডিকেল কলেজকে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ঢাকার মোহাম্মদপুরে কেনা ১১২ দশমিক ৬৩ কাঠার অতিরিক্ত আরও ৭ দশমিক ৩৭ কাঠা জমি কলেজের নামে কিনে দলিলের সার্টিফাইড কপি জমা দিতে বলা হয় ঢাবির ডিনস কমিটির প্রতিবেদনে। এসব নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা কর্ণপাত না করেই প্রতি শিক্ষাবর্ষে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি এবং কলেজের কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে, কলেজের নামে জমি কেনার কথা বলা হলেও আইন লঙ্ঘন করে মোহাম্মদপুর কাটাসুর মৌজায় বিভিন্ন দাগে ৯টি দলিলে ১১২ দশমিক ৬৩ কাঠা জমির গ্রহীতা হিসেবে কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নাম রয়েছে বলে জানা যায় এক জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে।
গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খান। তার কলেজে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ১৩০ শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও ১ লাখ ৪৯ হাজার বর্গফুট ফ্লোর স্পেস সংকট এবং হাসপাতালে ৯৮ হাজার ফ্লোর স্পেস ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া মেডিকেল কলেজে কোন অর্গানোগ্রাম নেই বলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে!
রাজধানীর গ্রিন রোডের গ্রিনলাইফ মেডিকেল কলেজকে বর্তমান অবস্থানে ৪৮ শতাংশ জমি ও ভবন ২০১৬ এবং ২০২১ সালের মধ্যে কলেজের নামে রেজিস্ট্রেশন করে দলিলের সার্টিফাইড কপি জমা দিতে বলা হয় ঢাবি কলেজ পরিদর্শন ও ডিনস কমিটির প্রতিবেদনে। সাথে কলেজের পাশে ক্রয়কৃত আরও ১০ কাঠা জামির দলিলের সার্টিফাইড কপি জমা দিতে বলা হয়। তবে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সার্টিফাইড কপি জমা দেওয়ার শর্ত পূরণ করেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীর সাভারে অবস্থিত এনাম মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ শয্যা অকুপেন্সি বৃদ্ধির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া টিউটরিয়াল রুম বৃদ্ধি, ক্লাসরুম ও মিউজিয়ামের পরিবর্তন এবং লাইব্রেরিতে আসন বৃদ্ধি করতে বলা হয়। কিন্তু মন্ত্রিত্বের প্রভাব খাটিয়ে কোন শর্তই পূরণ করেননি ডা. এনামুর রহমান।
২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কোন ধরনের শর্ত পূরণ ছাড়াই অনুমোদন দেওয়া হয় মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ধামলা গ্রামে অবস্থিত বিক্রমপুর ভূঁইয়া মেডিকেল কলেজকে। এ বিষয়ে সেসময় জাতীয় দৈনিকগুলোতে বেশ লেখালেখি হলেও আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলুর প্রভাব আর ক্ষমতায় এ মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম আরম্ভ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শন ও ডিনস কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই মেডিকেল কলেজের ৯৩ দশমিক ১৩ শতাংশ জমি ঘাটতি রয়েছে। কলেজ ও হাসপাতালের জন্য প্রায় ১ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস ঘাটতি রয়েছে। শর্ত পূরণে কলেজ কর্তৃপক্ষ বারবার ব্যর্থ হলেও ক্ষমতা ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কলেজের নবায়ন বাতিল অথবা কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
ধানমন্ডির আরেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ – বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ আইন বা মন্ত্রণালয়ের শর্ত পূরণ না করেই একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ঢাবির কলেজ পরিদর্শন ও ডিনস কমিটির এক প্রতিবেদনে অনুসারে, কলেজের নামে কোনো জমি বা ভবন না থাকায় কলেজের বর্তমান অবস্থানের ২ বিঘা জায়গা ও ভবন কলেজের নামে সাবকবলা দলিলমূলে রেজিস্ট্রি এবং কলেজের বর্তমান অবস্থানের পাশাপাশি আরও ৪ বিঘা জমি ক্রয় অথবা অন্যত্র জমি ক্রয় করে দলিলের সার্টিফাইড কপি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ শর্ত পূরণের তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
ঢাকার তুরাগের ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল নেই বলে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। মেডিকেল কলেজে ৫০ হাজার বর্গফুট ফ্লোর স্পেস ঘাটতি এবং হাসপাতালে ৭০ শতাংশ শয্যা অকুপেন্সি বৃদ্ধি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু কোন শর্ত পূরণ না করেও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এই মেডিকেল কলেজও।
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী