প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১ আগষ্ট, ২০২০, শনিবার
অধ্যাপক বেনজীর আহমেদ
সাবেক পরিচালক,
রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা,
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
ব্যতিক্রমতম ইদ!
বয়স বাষট্টি চলিতেছে! বকরি ইদের স্মৃতি বছর ছাপান্ন সাতান্ন হইতে পারে; তীব্র জার (শীত), প্রচন্ড গরম, ঝড়, বান নানান কিছুর মধ্য দিয়া এই ইদগুলি আসিয়াছে। সেই সকল কিছুকে ক্রোশ ক্রোশ ব্যবধানে ছাড়াইয়া ইদুল ফিতরের পর, ব্যতিক্রমতম ইদুল আজহা সমাগত। দুনিয়া কাঁপানো নানান ঘটনা সমূহকে মামুলি বানাইয়া করোনা মানবজাতিকে যে ঘুটান ঘুটাইল, তাহা পূর্বে ঘটে নাই এবং ভবিষ্যতে ঘটিবে কিনা তাহা জানার দুর্ভাগ্য হইবে না নিশ্চিত। জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘণ্টা; জন্ম বিবাহ মৃত্যুসহ ইহজগতে এমন কোন অনুষঙ্গ নাই যাহাতে করোনা প্রভাব ফেলে নাই। সুতরাং ইদের মত আমাদের দেশের সর্ববৃহৎ সামাজিক অনুষ্ঠানে তাহার তীব্র প্রভাব পড়িবে তাহাই স্বাভাবিক।
যে দেশে ১.২০ কোটি পশু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত হয়, তিন হাজার কোটি টাকার মসলা লাগে, ২০ কোটির কেজির অধিক গোস্ত দেয়া নেয়া খানা পিনা চলে- সেটি কত বড় মাপের সামাজিক মজমা তাহা বলাই বাহুল্য। করোনা এই ইদের উপর কি বিশাল প্রভাব ফেলিতেছে, তাহার একটি নির্দেশক হইতেছে ১.২০ কোটির মধ্যে হয়তো ৪০-৫০ লাখ পশু অবিকৃত থাকিবে, কোরবানি হইবে না। আমাদের বিল্ডিংএ আগে গড়ে ২৫/৩০ টি কোরবানি হইতো সেখানে হইবে ৫/৬ টি; সহজেই বোঝা যায় কোরবানির কোপটা কিরূপ পড়িয়াছে। তবে ইহাই সব নহে; এই ইদে ভয় ভীতি, তিন সহস্রাধিক মৃত্যু, লক্ষ লক্ষ করোনা সংক্রমনের দু:সহ স্মৃতি নানা উপসঙ্গ যুক্ত হইয়া ব্যতিক্রমতম ইদ হিসাবে পরিগনিত হইবে। আমরা জ্যৈষ্ঠগণ তো বেশী স্মৃতি লইয়া যাইতে পারিব না, তবে কিশোররা তাহাদের বার্ধক্যে হয়তো ষাট সত্তর বছর পর এই ব্যতিক্রমতম ইদের স্মৃতি রোমন্থন করিবে। এই বার ইদের সবচাইতে বড় চাওয়া করোনার বাকী সময়টায় ‘নিরাপদে থাকুন’। বিপদ যত বৃহৎ হোক তাহাকে মোকাবিলা করিতেই হইবে, চরম বিষাদের মাঝেও আনন্দের খোরাক লইতে হইবে, ইহাই জীবন ইহাই জীবনের জয়গান। আমরা শিক্ষা লইতে পারি- বিলাস বসন ভূষণ, যা তক তক অহংকারময় জীবনের চাইতে, সাধারণ মানবিক বন্ধু বৎসল জীবন অধিক আনন্দের, অধিক কাম্য।