চলুন জেনে নেই আপনি কি জানেন পৃথিবীতে আবিষ্কৃত প্রথম ভাক্সিনের নামটি কি ? ” ভাক্সিন ” আর “ভ্যাক্সিনেশন” শব্দটি কোথা থেকে আসলো? এ সবগুলো প্রশ্নের উত্তর একটি বিষয়ে, সেটা হচ্ছে “Small Pox”, সহজ বাংলায় যা “গুটি বসন্ত” নামে পরিচিত। এডওয়ার্ড জেনার সাহেবকে বলা হয় গুটি বসন্ত টিকার জনক। জেনার সাহেব তাঁর সারা জীবন ব্যয় করেছিলেন গুটি বসন্ত টিকার পদ্ধতির প্রচলন ঘটাতে। ১৭৯৬ সালের কথা, জেনার সাহেব গুটিবসন্তের টিকা প্রথম তাঁর মালির আট বছরের পুত্র জেমস ফিপস এর উপর প্রয়োগ করেন। এর মাধ্যমেই পৃথিবী জানতে পারে গুটিবসন্তের টিকার কার্যকারিতার কথা। এইভাবেই পৃথিবীবাসী প্রথমবারের মত দেখল কঠিন কোনো রোগকে আগে থেকেই আটকে ফেলা সম্ভব, আর আবিষ্কার হল পৃথিবীর প্রথম “vaccine” এর, অভিধানে যুক্ত হল নতুন দু’টি শব্দ…”vaccine” আর “vaccination”…তবে ইতিহাস আরও পুরোন…চলুন ফিরে যাই আরও ২০ বছর আগে….. এই ঘটনার ২০ বছর আগের কোনো একদিন ইংল্যান্ড এর গ্লস্টারশায়ারের এক কৃষক, নাম বেঞ্জামিন জেস্টী, বারান্দায় বসে বসে ভাবছেন গুটি বসন্তের ভয়ানক অবস্থার কথা। সারা গ্রামে গুটি বসন্তের তান্ডবে শয়ে শয়ে মানুষ মরছে। এর কোন টিকাও নেই ।শুধু ঈশ্বর এর কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া কিছুই করার নেই কারো। বেঞ্জামিন সাহেব ভঁয় পান। তাঁর সমস্ত চিন্তা তাঁর স্ত্রী পুত্রের জন্য। বেঞ্জামিন সাহেব ভাবতে থাকেন। হঠাৎ তাঁর মনে পড়ে যায়, এলাকার গরু খামারিদের যাদের গরুর পক্স রোগ হয়েছিল তাদের কারোই গুটি বসন্ত রোগ হয়নি। এর মানে হয়ত এই দুই রোগে যোগাযোগ থাকতে পারে! এনা আর মেরি নামের বেঞ্জামিন সাহেবের দুই কর্মচারী ছিল। তাদের একবার গো-বসন্ত রোগ হয়েছিল আগে। একবার হল কি, গ্রামে ব্যাপক ভাবে গুটি বসন্ত হল। তাদের গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের গুটি বসন্ত হলেও এই দুই জনের কিছুই হলনা। বেঞ্জামিন সাহেব আর দেরি করলেন না। স্ত্রী আর দুই পুত্র কে নিয়ে গেলেন এক খামারে যেখানে কিছু গরু গো-বসন্তে আক্রান্ত। গরুর পুঁজ সংগ্রহ করে স্ত্রী পুত্রের শরীরে প্রয়োগ করলেন বেঞ্জামিন সাহেব। এর ফলে স্ত্রী পুত্রদ্বয় হালকা গো-বসন্তে আক্রান্ত হল। তার পুত্রদ্বয় খুব দ্রুত সুস্থ্য হল কিন্তু বেঞ্জামিন সাহেবের স্ত্রী অনেক অসুস্থ্য হলে গেলেন। ভঁয় পেয়ে ডাক্তার নিয়ে আসলেন বেঞ্জামিন সাহেব। আস্তে আস্তে সেরে উঠল স্ত্রী এলিজাবেথ। গ্রামের সেই গুটি বসন্ত কিছুই করতে পারল না বেঞ্জামিন সাহেবের স্ত্রী পুত্রদের। বেঞ্জামিন সাহেব বুঝতে পারলেন গুটি বসন্তের টিকা তিনি আবিষ্কার করে ফেলেছেন। গো-বসন্তের পুঁজ মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো হলেই সেই মানুষ আর গুটি বসন্তে আক্রান্ত হবে না। মানব জাতি পেয়ে গেল এক মহৌষধ। কিন্তু বেঞ্জামিন জেসটি সাহেব কে তাঁর প্রাপ্য সম্মান কখনই দেয়া হয়নি। জেনার সাহেব বেঞ্জামিন সাহেবের পদ্ধতি ব্যাপক ভাবে মানুষের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং বিজ্ঞানী- চিকিৎসকদের এর কার্যকারিতা সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন। যার জন্য জেনার সাহেবকেই সম্মানিত করেছে চিকিৎসক সমাজ। সর্বশেষে, সম্মান জানাই বেঞ্জামিন জেস্টিকে মানবজাতি কে রক্ষা করার জন্য এবং তাদের প্রত্যেককেই যাঁরা মানবজাতির ভালোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
কার্টেসি : উইকিপেডিয়া,বিভিন্ন মেডিকেল জার্নাল যেখান থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়েছি।
লেখকঃ ডা. আশেকুর রহমান মল্লিক
MBBS (SUST),MPH(On Course)(NIPSOM)
JALALABAD RAGIB-RABEYA MEDICAL COLLEGE SESSION 2009-2010
অনুলেখকঃ আকিব নিয়াজ জোহা
Jinzhou Medical University, China