পরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে মাত্র এক বছরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহম্মদ। হাসপাতালের এ ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা সেবাগ্রহীতাদের মুখে মুখে।
কিন্তু বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারছে না দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল থেকে সুবিধাভোগী বিভিন্ন গোষ্ঠী। বেশ কিছুদিন ধরেই ওই ‘অপশক্তি’ হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এমনকি পরিচালককে বদলি করাতে কোটি টাকার ফান্ড সংগ্রহের খবরও চাউর হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট সামনে রেখে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহম্মদ সম্প্রতি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘প্রিয় ময়মনসিংহবাসী আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন। আপনাদের অকুণ্ঠ সহযোগিতায় আমরা ধীরে ধীরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে অপরাধীচক্র থেকে মুক্ত করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি। হাসপাতালে এখন সকল সেবা প্রদান নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। উন্নয়নের স্বার্থে হাসপাতাল থেকে দালাল, এমআর বিতাড়িত করা হয়েছে। সকল ওষুধ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কোনো ইনভেস্টিগেশন যেন বাইরে না করতে হয় তার ব্যবস্থা নিয়েছি। দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীদের বদলি ও শাস্তি দিচ্ছি। সব পর্যায়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করেছি।
এগুলো যদি কোনো পরিচালকের অপরাধ হয়, তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই। হাসপাতালের বর্তমান সুষ্ঠু ব্যবস্থা ও উন্নতির কারণে একটি মহল যারা নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত মনে করছে তারা, কিছু ফার্মেসির মালিক, বিতাড়িত দালাল, কমিশনভোগী চক্র, কিছু ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কিছু মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ আজ গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে হাসপাতালে নৈরাজ্যকর অবস্থা তৈরি ও পরিচালককে বদলি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। জনশ্রুতি রয়েছে, পরিচালককে বদলি করার জন্য তারা কোটি টাকার ফান্ড সংগ্রহ করছে। এতে কিছু নীতিহীন রাঘববোয়ালদেরও বিশেষ সমর্থন রয়েছে। আমি খোলা মন নিয়ে আমার কথাগুলো আপনাদের জানালাম। এই শহর আপনাদের, এই হাসপাতাল আপনাদের। আপনারা যাকে পছন্দ তাকে পরিচালক হিসেবে আনতে পারেন। আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি যেখানেই থাকব আপনাদের জন্য সকল শুভ ও কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব। আমিন। ’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত বছরের ১ নভেম্বর ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহম্মদ। দায়িত্বে এসেই তিনি হাসপাতালের শৃঙ্খলার দিকে নজর দেন। তাতে ক্ষুব্ধ হয় দীর্ঘদিন ধরে এ হাসপাতালকে লুটেপুটে খাওয়া অপশক্তি। কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও শুরু করেন পরিচালক। একপর্যায়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নেতা মেহারুলকে অন্যত্র বদলি করা হয়।
রোগীর খাবারদাবারের মান নিয়ন্ত্রণ করায় ঠিকাদারদের অনেকেই শত্রু হয়ে যান পরিচালকের। দালালদের ঠেকাতেও ব্যবস্থা নেন তিনি। তাতে ক্ষুব্ধ হয় দালালচক্র। হাসপাতালেই রোগীদের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ-সুবিধা চালু করা হয়। নিজেই সব কিছু তদারক শুরু করেন। পরিচালকের এ উদ্যোগে পাশের বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বেকায়দায় পড়ে। হাসপাতালের রোগীদের নিয়ে অপচিকিৎসা ও অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় তাদের। এ গোষ্ঠীটিও পরিচালকের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। সরকারি ওষুধ সরবরাহের ক্ষেত্রেও বিশেষ নজির সৃষ্টি করেন পরিচালক। সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়, হাসপাতালের সরবরাহ করা সব ওষুধ রোগীদের দেওয়া হয়। রোগীরা যেন বাইরে থেকে ওষুধ না কেনে। পরিচালকের এ উদ্যোগে ক্ষিপ্ত হয় হাসপাতালের ওষুধ পাচারকারীচক্র ও বাইরের কিছু ফার্মেসি ব্যবসায়ী। সব মিলিয়ে পরিচালকের একের পর এক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন পক্ষ তাঁর শত্রুতে পরিণত হতে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সম্ভব সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করে বর্তমান পরিচালক রোগীদের আস্থা অর্জন করেন। তাতে প্রকাশ্যে অনেকেই পরিচালকের প্রশংসা করেন। ময়মনসিংহ পৌরসভার কাউন্সিলর সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘এই প্রথম দেখলাম হাসপাতালের রোগীদের হাসপাতাল থেকেই ওষুধ দেওয়া হয়। গরিব-দুঃখী মানুষ বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাচ্ছে। মনে খুব আনন্দ লাগল। বেঁচে থাকুন পরিচালক মহোদয়। ’ সমাজকর্মী ওয়ারেছ বাবু বলেন, ‘এমন একজন পরিচালক আমরা পেয়েছি। এ জন্য ময়মনসিংহবাসী সৌভাগ্যবান। ’
ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন কালাম বলেন, ‘বর্তমান পরিচালক রোগীদের কল্যাণে কাজ করছেন। আমরা তাঁর পাশে আছি। ’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহম্মদ জানান, হাসপাতালের পরিবেশ অনেকটা ভালো হয়েছে। ময়মনসিংহবাসীর সহযোগিতা-সমর্থন পেলে তিনি হাসপাতালের অন্য সমস্যাগুলোও সমাধান করতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন।