বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে একসময়ে জেলার মডেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বীকৃতি পাওয়া ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম। নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল। রোগী থাকলেও পদায়ন হয়নি প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসকের। বেহাল এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নেন বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাড়াও গোলাপগঞ্জ, বড়লেখা, জকিগঞ্জ এবং কানাইঘাট উপজেলার একাংশ জনগণ! ২০২২ সালে সিলেটের ১৩ উপজেলার মধ্যে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ‘মডেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’ স্বীকৃতি দেয়া হয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার বিভাগীয় পর্যায় ও জাতীয় পর্যায়ে ‘শ্রেষ্ঠ’ পুরস্কার জিতেছে!
বিধিমালা অনুযায়ী, ৫০ শয্যার একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৩১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিকিৎসকদের পদ খালি আছে ২৮ টি! তবে সম্প্রতি ৩ জনের মধ্যে একজনের বদলি আদেশ জারি করা হয়েছে। ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানালেন কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও কমপ্লেক্সে নার্সের পদও খালি আছে। অথচ বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরপর কয়েকবার সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বীকৃতি পেয়েছে প্রসূতি বিভাগের জন্য।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিদিন গড়ে সক্ষমতার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি রোগী ভর্তি থাকার পাশাপাশি বহির্বিভাগে সেবা নেন প্রায় সাড়ে চারশ রোগী। ২০০৯ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়, কিন্তু জনবল সংকটের দিকে ভ্রুক্ষেপ করা হয়নি। পরবর্তীতে মডেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বীকৃতি পেলে ২০২২ সালে ১০০ শয্য বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নীত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার!
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, পর পর তিনবার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০০৫ সালের ৪ আগস্ট এক্স-রে মেশিন স্থাপনের পর থেকে একবারও চালু হয়নি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আলট্রাসোনোগ্রাম যন্ত্র থাকলেও এটা পরিচালনা করার লোক না থাকায় এটা ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় ১০ বছরেরও বেশি সময় থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বড় জেনারেটর নষ্ট থাকায় মাঝারি জেনারেটর দিয়ে কোনভাবে আলোর ব্যবস্থা করেছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। যা দিয়ে ইমার্জেন্সি কোন অপারেশন কিংবা অন্য ভারী যন্ত্র চালানো সম্ভব নয়।
এসব সংকটের সুযোগ নিচ্ছে হাসপাতালের একজন এম্বুলেন্স চালক ও কয়েকজন সেবিকা! তারা বিভিন্নভাবে প্রতারণার আশ্রয়ে রোগীদের সরলতার সুযোগে বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করা হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলায় কর্মরত সাবেক এক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক বলেন, “আমরা আগে ২ জন ছিলাম, বর্তমানে ৩জন আছি। কিন্তু এরমধ্যে একজনের পোস্টিং অর্ডার আসছে। আপাতত আমাদের ৩জনকেই আউটডোর, ইনডোর, ইমার্জেন্সি সব চালাতে হয়। কর্তৃপক্ষ সংকটের বিষয়ে জানে। কিন্তু কবে নাগাদ নতুন পদায়ন করবে বলা সম্ভব না।”
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী