মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অবিবেচিত প্রশ্নপত্রে বিব্রত চিকিৎসক সমাজ।

চলতি বছরের এসএসসি সমমানে পরীক্ষার ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্রের সৃজনশীল প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড এর আগেও অতি মূল্যায়নের মাধ্যমে A+ সংখ্যাবৃদ্ধি, প্রশ্নপত্র ফাঁস সহ বহুবিষয়ে বিতর্কীত হয়। সম্প্রতি প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে চিকিৎসকদের প্রতি নেতিবাচক বক্তব্য উপস্থাপন করে এবছর পুনরায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয় প্রতিষ্ঠানটি। বাংলা ১ম পত্র সৃজনশীল প্রশ্নের ২নং প্রশ্নের অনুচ্ছেদে বলা হয় “জাহেদ সাহেব একজন লোভী এবং ডাক্তার। অভাব ও দারিদ্র বিমোচন করতে তিনি অর্থের পেছনে ছুটতেন। একসময় বাড়ি-গাড়ি ধন সম্পদ সবকিছুর মালিক হন।…”

9999

এ বিষয়ে মন্তব্য করে প্ল্যাটফর্মের প্রধান নির্বাহী ডা. মোহিব হোসেইন নিরব জানান, শিক্ষাবোর্ডের কান্ডজ্ঞানহীন এরকম বক্তব্যে তিনি বিষ্মিত। এক সময় শিক্ষকেরা মানুষ গড়ার কারিগর ছিলেন। তাদের প্রজ্ঞা, শ্রদ্ধাবোধ দ্বারা ছাত্রদের কাছে আদর্শ ছিলেন। বর্তমানে শিক্ষক সমাজের গুণগত মানের প্রতিবিম্ব ফুটে উঠেছে এই প্রশ্নপত্রে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের মেধাবী ছাত্রদের বড় অংশ মেডিকেল, প্রকৌশল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল বিষয়ে পড়তে যায়। মেধাবীদের কেউই মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাকতা করতে যায়না এতে মাধ্যমিক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষিত বা বিবেকজ্ঞান সম্মন্ন শিক্ষদের অভাব তৈরী হচ্ছে যার প্রতিফলন এই প্রশ্নপত্র। ঢাকা মেডিকেলের প্রাক্তন HMO ডা. জুবায়ের মুমিন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমার পিতামাতা দু’জনেই শিক্ষক। ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকগণের নিকট থেকে মানুষ হবার মূলমন্ত্র শিখবে। শিক্ষকগণের নিকট হতে এমন বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব নিন্দনীয়।”

উল্লেখ্য, চিকিৎসা পেশায় লোভ-লালসা দিয়ে গাড়ি বাড়ি করা সম্ভব নয় কেননা এ পেশায় দূর্নীতির করার সুযোগ নেই। গাড়ি-বাড়ি-টাকা পয়সা তখনই সম্ভব যখন একজন চিকিৎসক পড়াশোনা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবেন। অন্যন্য পেশার মতই কেবল ভাল চিকিৎসক হতে পারলেই প্রচুর টাকা পয়সা উপার্জন করা সম্ভব। ভালমানের চিকিৎসক হতে না পারলে সে চিকিৎসক রোগী পাবে না।

পৃথিবীর ধনী ব্যক্তিদের বৃত্তান্ত থেকে জানা যায়, সকলেই নিজ মেধা এবং শ্রমের মাধ্যমে ধনী হয়েছেন। মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী বিলগেটস, বিখ্যাত বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটসহ সবাই নিজ নিজ মেধা এবং জ্ঞানের মাধ্যমে ধনী হিসাবে প্রতিষ্টিত হয়েছেন। চিকিৎসকরা নিজ জ্ঞান এবং মেধা ব্যবহারের মাধ্যমে মানব শরীরের সমস্যা নিরাময় করেন। আমেরিকা সহ পাশ্চাত্যের বহু দেশের চিকিৎসকের নিজস্ব প্রাইভেট জেট বিমান রয়েছে। এই বিপুল অর্থ তারা অর্জন করেছেন নিজস্ব মেধা, বুদ্ধি এবং জ্ঞান মানবকল্যাণে প্রয়োগের মাধ্যমে। মানবকল্যাণে চিকিৎসাবিদ্যার ব্যবহারের বাই-প্রোডাক্ট হিসাবে অর্থ আসে। লোভ-লালসার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের যে দিকটি প্রশ্নপত্রে ফুটে উঠেছে তা অবাস্তব এবং কান্ড-জ্ঞানহীনতার পরিচয় মাত্র।

এদিকে প্রশ্নপত্র নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অনেকে মনে করেন এরকম নিম্ন মানসিকতার শিক্ষক প্যানেল ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী, কৃষক সহ অন্যন্য পেশাজীবিদের নিয়ে ভুল বক্তব্য প্রেরণ করলেও বিষ্মিত হবার কিছু নেই। বস্তুত চিকিৎসা একটি মহৎ পেশা এবং শিশুকালেই চিকিৎসক হবার মাধ্যমে মানবতার সেবা করবার বীজ রোপন করতেন আগেরকালের শিক্ষকগণ। চিকিৎসার মত মহৎ পেশাকে অবমাননা করবার জন্য জড়িত ব্যাক্তিদের আইনের আওতায় আনতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এর পদক্ষেপ কামনা করেন অনেকে।

ঢাকা মহানগর বিএমএ এর কাউন্সিলর ডা. মো আসিফউদ্দিন খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়টি ইতিমধ্যে বিএমএ কে জানান হয়েছে এবং শীঘ্রই এ বিষয়টি নিয়ে বসা হবে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক নিন্দা জানিয়েছে স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ (স্বাচিপ)। স্বাচিপের দপ্তর সম্পাদক ডা. এহসান উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ সংশ্লিষ্ট ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির বিধানের আহ্বান করা হয়।

555

প্ল্যাটফর্ম ওয়েব

4 thoughts on “মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অবিবেচিত প্রশ্নপত্রে বিব্রত চিকিৎসক সমাজ।

  1. এমন হয়। আমরা যা ভালো কিছু হতে পারি না..তার উপরই আমাদের ঈর্ষা বেশি। এমন একটি মহৎ কর্ম এভাবে কলুষিত করা অন্তত শিক্ষা বোর্ড দ্বারা উচিত হয় নাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

বাংলাদেশের লোভী ডাক্তাররা যখন বিশ্বময়

Fri Feb 3 , 2017
ডা.সজল ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে আর্মি মেডিক্যাল কোরে জয়েন করে দেশ ও জনগণের সেবা করে যাচ্ছেন আজ পনের বছর ধরে।বর্তমানে তার পোস্টিং একটা মিশনে ইথিওপিয়াতে।গতকাল থেকে ঘুরে ফিরে তার মাথায় ঘুরছে একটা শব্দ — লোভী ডাক্তার !!! ইন্টার্নশীপ শেষ করে পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে ভর্তির জন্য ফরম কেনার […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo