১৫ ডিসেম্বর ২০১৯
সাহিত্য ও শিল্পের দুনিয়ায় প্রচলিত তত্ত্ব হল, মানুষের চোখ নাকি তার মনের ভাষা প্রকাশ করে। চোখ মনের ভাষা কতখানি প্রকাশ করে এ নিয়ে দ্বিধা থাকলেও, মানুষের মিথ্যা যে চোখের মাধ্যমে অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ পেয়ে যায়, তা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। মানুষ তাদের চোখের মনিরন্ধ্র বা পিউপিলের আকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, দৃষ্টি ও পারিপার্শের আলোর উপর ভিত্তি করে এটি সম্পূর্ণ অনৈচ্ছিক ভাবে সংকুচিত-প্রসারিত হয়। গবেষণায় জানা যায়, মিথ্যা বললেও এই পিউপিল প্রসারিত হয়।
স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র ( autonomic nervous system) সচেতন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই ঘটে এমন শারীরিক ক্রিয়া অর্থাৎ মানবদেহের অনৈচ্ছিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এই তন্ত্র দুটি শাখায় বিভক্ত: সিমপ্যাথেটিক (sympathetic) স্নায়ুতন্ত্র এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক (parasympathetic) স্নায়ুতন্ত্র।
সিমপ্যাথেটিক সিস্টেমটি “লড়াই বা পলায়ন” পরিস্থিতিতে বেশি সক্রিয় থাকে। প্যারাসিমপ্যাথেটিক সিস্টেমটি “বিশ্রাম ও হজম” অবস্থায় বেশি সক্রিয় থাকে। অন্য কথায় সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র দেহকে সুরক্ষার জন্য একধরনের হুমকির সাথে মোকাবিলা করতে সামঞ্জস্য করে, যেখানে প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র শরীরকে শক্তি সংরক্ষণ এবং বিশ্রামের সময় দক্ষ হওয়ার জন্য সামঞ্জস্য করে (যেমন ভাল ঘুম, ভাল হজম ইত্যাদি)।
এখন, মিথ্যা বলতে সাধারণত কিছুটা চাপ বা উদ্বেগ জড়িত থাকে (যদি আপনি খুব ভাল মিথ্যাবাদী না হয়ে থাকেন), কারণ যেকোন মিথ্যার সাথেই জড়িত থাকে মিথ্যা প্রকাশিত হয়ে যাবার দুশ্চিন্তা কিংবা সেই মিথ্যাকে সত্য প্রমাণ করার অতিরিক্ত চাপ। এই মানসিক চাপ অবচেতনভাবে সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে, যা শরীরে নির্দিষ্ট প্রভাব ফেলে। সিমপ্যাথেটিক উদ্দীপনা চোখের মণিতে অবস্থিত পেশী তন্তুর সংকোচন ঘটায় এবং এর ফলে মাইড্রিয়াসিস হয় অর্থাৎ পিউপিল প্রসারিত হয়। বিপরীত প্রভাব ঘটে যখন চোখ প্যারাসিমপ্যাথেটিক উদ্দীপনা পায়। যেমন, মানুষ যখন শান্ত হয় এবং সত্য স্বীকার করে নেয়, তখন পিউপিলের সংকোচন ঘটে।
মিথ্যাবাদীরা তাদের মুখের ভাষা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কিন্তু তারা তাদের পিউপিল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। চোখ ঠিকই তাদের এই মিথ্যা প্রকাশ করে দেয় নিজের ভাষায়!
তথ্যসূত্র: ডা. মামুনি সুলতানা রনি
স্টাফ রিপোর্টার /তামান্না ইসলাম