মুক্তামনিঃ পর্দার পিছনের বীরেরা।

চিকিৎসকরা বারবারই বলেছিলেন, জীবন বাঁচাতে বাধ্য হলে মুক্তামনির আক্রান্ত ডান হাতটি কেটে ফেলতে হতে পারে। একইসঙ্গে তারা এও বলেছিলেন, কোনও প্লাস্টিক সার্জনই শরীরের কোনও অঙ্গ কেটে ফেলার পক্ষপাতী নন, তাদের কাছে মানুষ আসে অঙ্গ জোড়া দিতে। শনিবার (১২ আগস্ট) মুক্তামনির যে অপারেশন হয় তাতে তার হাতটি কাটার প্রয়োজন হয়নি, এ হাত অক্ষত রেখেই তিন কেজি ওজনের অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড কেটে ফেলতে পেরেছেন তারা।

হাত না কেটে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করাকে চিকিৎসকরা দেখছেন সফলতা হিসেবেই। অস্ত্রোপচার শেষে তারা বলেছেন, ‘অপারেশন সফল হয়েছে। মুক্তামনি ভালো আছে। তার হাতের ডিজিজ পোরশন (রোগাক্রান্ত অংশ) কেটে ফেলতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তবে এক অপারেশনেই এটা শেষ হবে না। আরও অন্তত ছয়টি অপারেশন করা লাগবে। মুক্তামনির জ্ঞান ফিরেছে, কথা বলেছে। এ সাফল্য আমাদের একার নয়। বার্ন ইউনিটসহ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের (এনআইসিভিডি) সমন্বিত সাফল্য এটি। তার হাত ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। প্রাথমিক সাফল্য বললেও এটা এখানেই শেষ নয়। ইটস লং ওয়ে টু গো।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্লাস্টিক সার্জন ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগ, ঢামেক হাসপাতালের অ্যানেসথেশিয়া বিভাগ এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত ৩০ জনের একটি চিকিৎসক দল এই অস্ত্রোপচারে অংশ নেন।

অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম। তার সঙ্গে ছিলেন একই ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন, অধ্যাপক সাজ্জাদ খোন্দকার, অধ্যাপক রায়হানা আউয়াল, সহযোগী অধ্যাপক ডা. লুৎফর কাদের লেনিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. সালমা আনাম, সহকারী অধ্যাপক ডা. তাহমিনা সাত্তার, সহকারী অধ্যাপক রবিউল করিম খান, সহকারী অধ্যাপক ডা. শরীফ আশফিয়া রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডা. তানভীর আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হেদায়েত আলী খান, সহকারী অধ্যাপক প্রদীপ চন্দ্র দাস, সহকারী অধ্যাপক ডা. সালেক বিন ইসলাম, বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন হোসাইন ইমাম, জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবু ফয়সাল মো. আরিফুল ইসলাম নবীন ও ডা. শারমিন আক্তার সুমি, সহকারী রেজিস্ট্রার ডা.মাহবুব হাসান ও ডা. নুরুন নাহার লতা।

ছিলেন বার্ন ইউনিটের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা.মো. জাহাঙ্গীর কবীর, সহকারী অধ্যাপক ডা. মলয় কুমার দাস, জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মৌমিতা তালুকদার, ডা. রেবেকা সুলতানা ও ডা. মো. আনিসুর রহমান। ঢামেক হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোজাফফর হোসেনসহ সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাবেয়া বেগম, সহকারী অধ্যাপক ডা. সুব্রত কুমার মণ্ডল ও ডা. তানভীর আলম এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শফিকুল আলমও ছিলেন।

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের অ্যানেসথেসিয়া অধ্যাপক ডা. নরেশ চন্দ্র মণ্ডল ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মকবুল হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তামনির এই সফল অস্ত্রোপচারের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানান।

 

সম্পাদনাঃ তানজিল মোহাম্মাদীন

তানজিল মোহাম্মদীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণবিতরন-হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ

Wed Aug 16 , 2017
গাইবান্ধা জেলার কামারজানী উপজেলা একটি বন্যা কবলিত এলাকা। ১১ টি গ্রামের প্রায় ১৩ হাজার মানুষের বসবাস ।গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে কামারজানী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পানি-বন্দী হয়ে পড়েছে। এই বন্যার্তদের দুর্ভোগ কিছুটা উপশম করতে গত ১১ ই আগস্ট হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পক্ষ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo