প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ – ১৫
” মেঘের মিছিল ”
মাইক্রোবায়োলজি এক্সামের পর থেকেই কেমন জানি একটা খুশির আমেজ কাজ করছে।বাড়ি যাব।ইদের খুশি বহুগুন বেড়ে যায় ঢাকা থেকে বাড়ি আসার সময়।আসলে মেডিকেল স্টুডেন্টরা প্রান ভরে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়ার মত অবসর কেবল ইদে ই পাই।
তবে রাতে বিশাল পার্টি হবার কথা,সেই আনন্দে খুশিটা যেন বাধাহীন।
বসে আছি রুমে, কারেন্ট নেই,,তবুও ভালো লাগছে।
Mridul এর ফোন,জেতে হবে উত্তরা।আমি অবশ্য এইসব ব্যাপার গুলোতে না করিনা, যে কেউ যখন তখন ডাকলেই আমি চলে যায়,সাথে Nadim । উত্তরা “এহেন কার্য সম্পাদনা করিয়া আমরা যখন বাসায় ফিরিবার চেস্টা করিতেছি,সেই সময় বাধিল চরম বিপত্তি”এত জ্যাম,আজকাল রাতের দিকে উত্তরা থেকে গাজীপুর আসা একটা যুদ্ধের নাম।বি আর টিসি তে উঠে প্রায় ৩০ মিনিটে ৩ মিটার রাস্তা অতিক্রম করার পর আমরা আবার রাস্তাই নেমে কিছুদুর হাটার পর অনেক রিকোয়েস্ট এ একটা কাভার্ড ভ্যান এর ড্রাইভার কে রাজি করায়।সেও কিছুদুর আসার পর নামিয়ে দিল মামলা খাওয়ার ভয়ে। তারপর কিছুদুর হেটে আসার পথ অনেক চড়া মুল্যে রিকশা নিতে হয়েছিল। যাহা আমাদের মত মধ্যবিত্ত মেডিকেল স্টুডেন্টদের মানিব্যাগ বরাবর লম্বভাবে তীরচ্ছেদ।নিজের ক্ষতি হলে তেমন কস্ট লাগেনা,কিন্তু যখন নিজের ক্ষতির কারনে অন্যজন বিশাল লাভবান হচ্ছে তখন কস্টে বুকটা ফেটে যায়।
তারপর রাতে Sajol এর বাসাই গিয়ে ত পুরো অবাক। রাজ্যের সব রান্নাবান্না সে একাই।পায়েস টার স্বাদ এর কথা না বললেই নয়।মাঝে মাঝে এইসব চমকে যাওয়া ভালোবাসা গুলো পেয়ে দেখবেন,ভালোলাগবে।প্ল্যান ছিল রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আমরা ছাদে বসব।নীল অন্ধকারের মধ্যে গল্প করতে করতে সোনালী শিশির ভেজা ভোর দেখব…জীবনকে একটু কাছ থেকে দেখার জন্য আমরা কত কিছুই না করি।
Mridul কে নিয়ে বাধল বিপত্তি।সারাদিন অনেক ধকল গেছে,তাই সে আর ছাদে জেতে পারবেনা,শেষমেস আমাদের ছাদে যাওয়া হবেই না এইরকম একটা ব্যাপার হয়ে দাড়াচ্ছিল।।পরে নাদিমের অত্যাচারের কাছে হার মেনে আর কারোর রুমে শুয়ে থাকা হয়নি। আসলে ইমোশনাল মানুষদের একটা স্পেশালিটি আছে,তার যখন তখন যেকোন কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে।সবাইকে ছাদে গিয়ে বসতে হয়েছিল ইলশেগুড়ি বৃস্টির মধ্যেও,তবে জীবনের অন্যতম অনবদ্য এচিভমেন্ট গুলোর মধ্যে এটাও একটি।সারারাত ছাদে বসে আকাশ দেখতে দেখতে জীবনে কিছু স্নিগ্ধ সময় পার করা আর সেই সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভোর হতে দেখা।এ যেন রোমান্সিজমের উচ্চবর্গীয় রুচিশীল দের ব্যাপার স্যাপার ।সারারাত যে টাইপের কথা বা কর্ম সম্পাদন হয়েছে তা শেয়ার করলে আমার নামে ৫৭ ধারায় মামলা হবে! তাই এইসব ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল মামলা খেয়ে খুব বেশি আধুনিক হওয়ার ইচ্ছে পোষন করলাম না!
এই অবধি সব ঠিকই ছিল, মহা ঝামেলা শুরু হল এরপর। কারন সারারাত জেগে থাকার পরে আমার সকাল ৭ টার সময় Humayun এর সাথে বাড়ি আসার কথা।হুমায়ন আমার ছোট বেলার গ্রামের বন্ধু,একসাথে কত বিকেল ঘুড়ি উড়িয়েছি,মাঠের ভুট্টা বা আখ চুরির গল্পও কম নয়।থাক সেসব কথা।সকাল ৬ টাই ছাদ থেকে নামার পর ভাবলাম ১ ঘন্টা ঘুমিয়ে নেই, শরীর এর উপর অনেক অবিচার হয়ে যাবে নাহলে।কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখি সাড়ে ৯ টা বাজে,,,এ যেন হাতে হারিকেন টাইপের মত ব্যাপার। আমরা চেয়েছিলাম একবারে সরাসরি বাসে না গিয়ে কেটে কেটে যাব,, তাহলে একসাথে স্থল,নদী এবং ট্রেন ভ্রমন ৩ টাই হবে।আবার খরচ ও একটু সাশ্রয়ী হবে।
কিন্তু ১০ টার সময় বাসা থেকে বের হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে আসতে আসতে বেজে গেল ৩ টা। এতে করে ট্রেন মিস করে ফেলি যার কারনে প্রায় ৩ গুন টাকা দিয়ে আবার বাসেই টিকেট কাটতে হয়।”এ যেন বাঘের ভয়ে উঠলাম গাছে,বাঘ বলল পেয়েছি কাছে”।
বাস আসতে আসতে মাঝপথে নস্ট হয়ে যায়।এ যেন কোন নীল মায়াবতীর ছোয়াই সবকিছুই বিপরীত।হঠাৎ করেই ভাগ্যদেবতার দৃস্টিহীনতা আমাকে হতাশ করলেও মনোবল ভাঙতে পারেনি।
এতকিছুর পরেও কুস্টিয়া আসি রাত ৮ টার সময়।যদিও বিশ্রামের ফুরসুত নেই,আবার হুমায়ন আর আমি কুস্টিয়া শহর ঘুরতে বের হয়।এত সুন্দর শহর, আর শহরের মানুষ গুলো। তাই কুস্টিয়া আসলেই আমার ডোপামিন সিক্রেট শুরু হয়।বিভিন্ন রকমের স্ট্রিট ফুডের সাথে মৌবনের ফালুদা।১৬ আনাই খাটি জীবন। কুস্টিয়া শহরের উর্বশীদের মধ্যে কবিদের উপমা গুলো খুজে পাওয়া যায় খুব সুনিপন ভাবেই,মায়ায় পড়তে বাধ্য যে কেউ। আর গভীরে না গিয়ে আমরা মুল গল্পে আসি।
।তারপর রাতে বিশাল এক পার্টিতে খিচুড়ি আর গরুর মাংস দিয়ে ভোজবিলাস হয় এক ছোট ভাইয়ের আমন্ত্রনে।
এরপর যখন বন্ধুর মেসে ব্যাক করি তখন প্রায় ১১ টা।মেসের মানুষ গুলো অনেক সহজ সরল। তাদের মেডিকেল বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে রাত প্রায় ২ টা।১৫/১৬ জনের একটা প্রায় জটলা বসেছিল আমাকে ঘিরে৷
সবার ভালোবাসার বৃস্টিতে ভিজে প্রায় ভেজা কাক। তখনই শুনতে পেলাম ভালো কালা ভুনা পাওয়া যায় কুস্টিয়াতে আজকাল।রাত ২.৩০ এর দিকে আবার নিচে নেমে হোটেলে এসে গুরুর মাংসের কালাভুনা আর ভাত৷ জীবন সুন্দর।
এরপর মেসে গিয়েই ঘুম।
মাত্র ৩ ঘন্টা ঘুমিয়েই আবার বাড়ির জন্য রওনা দিই।
বাড়িতে এসে বিশ্রাম নিয়ে যখন এই কথা গুলো লিখছি তখনই আম্মু আমার সামনে মাছ আর ভাত নিয়ে দাড়িয়ে আছে,মুখে তুলে খাইয়ে দিবে।
তাই লেখাটা আর প্রুফ রিডিং করার সময় নাই,এখন খাওয়া শেষে একটা বিশ্বরেকর্ড করার মত ঘুম হবে।
থাকুক না ভালোবাসা গুলো এভাবেই আজীবন।বেচে থাকুক সকল অনুভুতির স্পর্শে রচিত ভালোবাসার সম্পর্ক গুলো।
লেখকঃ
মোঃ জান্নাতুল নাইম সজীব।
তায়রুন্নেসা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ।
wow