প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৪ মে ২০২০, সোমবার
নানান মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে রোগীর অবস্থা শোচনীয়। রাস্তায় মানুষ মারা যাচ্ছে। সন্দেহ বেশি করোনার দিকে। সারা বছর এভাবে বহু লোক রাস্তায় মারা যায়। ফেরিঘাটে মারা যাওয়া শিশুর কথা খবরে এসেছে। অনেকের খবর আসে না।
এটিই আমাদের প্রতিদিনের স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্র। আজকে করোনায় বা করোনা আক্রান্ত সন্দেহ এমন রোগী মরে পড়ে থাকার দৃশ্য যা দেখতে হচ্ছে, তা দেখতেই হতো। চীনে, ইউরোপে, আমেরিকায় দৃশ্য কিছু ব্যতিক্রম নয়।
জনসংখ্যা অনুপাতে স্বাস্থ্যবিভাগের সক্ষমতা সাধারণত প্রতিদিনের রোগীসংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। আমাদের হাসপাতালে রোগী উপচে পড়ে। বিছানা ভরে গেলে মেঝেতে রাখে। তারপর বারান্দা, সিঁড়ির গোড়ায়। কোনো রোগী ফিরিয়ে দেয়া যাবে না জাতীয় কিজানি এক নিয়ম আছে। ভালো কথা। মেঝেতে রাখা যাবে না – এমন নিয়ম নেই? রোগীর ওষুধ পথ্যের বরাদ্দ, প্রয়োজনীয় লোকবল শুধু বেড অনুযায়ী বরাদ্দ। বাড়তি রোগীর জন্য রাষ্ট্র কী ব্যবস্থা করলো?
এই প্রশ্ন উপযুক্ত স্থানে দায়িত্ব প্রাপ্ত লোকেদের আপনারা করেন নি।
আজ চারিদিক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারি হাসপাতালে এসে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। বেড অনুযায়ী অক্সিজেন সাপ্লাই নেই। অথচ করোনা রোগী ভর্তির অন্যতম শর্তই হলো “শ্বাসকষ্ট হলে হাসপাতালে ভর্তি হবেন”। প্রতিটি রোগীর জন্য অক্সিজেন আছে কি? এই ব্যবস্থাপনার খোঁজ নিয়েছেন কি?
প্রয়াত হেমাটোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান তো কোনো সুযোগই পান নি। তাঁর রোগী, ছাত্র ছাত্রী, সহকর্মী সবাই তাঁর অভাব তীব্রভাবে অনুভব করবেন। করোনায় রক্তনালির ভিতরে রক্তজমাট বেঁধে যায়। তখন কিভাবে চিকিৎসা দেয়া হবে – এই জিজ্ঞাসার উত্তর দেয়ার জন্য তাঁকে আর পাওয়া যাবে না। তিনি নেই। হঠাৎ করেই নেই।
এমন আকস্মিক মৃত্যু এড়ানো যায় না। ধীরে ধীরে মৃত্যু? আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সক্ষমতা অনুযায়ী কোনো একদিন যত বেশি সংখ্যক রোগী শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভুগবেন, তত বেশি মৃত্যুর সম্ভাবনা।
আজকে যারা মৃত্যুর আবেগী ভিডিও ভাইরাল করছেন, লোক খেপিয়ে তুলছেন, তাঁরা ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র আক্রান্ত হওয়ার প্রতিটি ঘটনার জন্য দায়ী থাকবেন।
আপনাদের অনেক দায়িত্ব ছিল। সময়ে প্রস্তুতি নিতে সোচ্চার হওয়া দরকার ছিল। এখন তাহলে এই ভিডিও ভাইরালের দরকার হতো না।
আপনারা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ছিলেন। আজও অমানবিকভাবে লোক খেপিয়ে তুলছেন স্বল্পসংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মীর প্রতি, নানাভাবে।
স্বাস্থ্যব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিদের এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কী করেছেন? এ বছরে ডেংগু কেন আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে? কী করলেন এতগুলো লোকজন, এত এত অর্থ?
আপনার মাইক্রোফোন, আপনার বন্দুক, আপনার লাঠি কোনকিছুই চিকিৎসায় কাজে আসে না। যেটা কাজে আসে, সেই দায়িত্ব পালন করুন দয়া করে।
দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানে কাজ করুন। যেকোনো কাজ করার আগে এর ফলাফল নিয়ে ভাবুন। লোক খেপিয়ে না তুলে, স্বেচ্ছাসেবী হতে উদ্বুদ্ধ করুন। সচেতন করুন। সজাগ থেকে মানুষের কষ্ট দূর করতে চেষ্টা করুন।
টিকিটের লাইনের ভিড়, খাওয়ার লাইনের ভিড়, টেস্ট করার লাইনের অপেক্ষার সূত্র একই। চাহিদার তুলনায় জোগান কম।
সব রোগীর টেস্ট দ্রুত করতে হলে কী পরিমাণ জনবল লাগবে, কিভাবে তা ব্যবস্থা করা হবে – এই তথ্যগুলি জোগান দেয়া আপনার দায়িত্ব।
দায়িত্ব এড়িয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মৃতদের ভিডিও করতে অনেক সময় পাবেন। সে আপনার ইচ্ছা।