২০১৪ সালের আগস্টে যখন এক সাথে ৬০০০ হাজার চিকিৎসকের সরকারি নিয়োগ হলো তখন থেকেই জল্পনা কল্পনার শুরু-নভেম্বর ২০১৭’র পরীক্ষা সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক হবে। নানা কারণে এফসিপিএস জটিলতর হয়ে যাওয়ায় শুধু সরকারি পরীক্ষার্থীই নয় বেসরকারি পরিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও রেসিডেন্সির চাহিদা অনেক বেশি।
গতবার রেসিডেন্সি পরীক্ষার আগে ছোট একটি লেখা লিখেছিলাম, পরীক্ষার ফলাফলের পর বেশ কয়েকজন আন্তরিক ধন্যবাদ দিয়েছিলেন সে লেখাটি তাঁদের সাব্জেক্ট চয়েজে কাজে লেগেছিল জানিয়ে। এছাড়া ফেসবুকের ইনবক্সে, মুঠোফোনে বা সামনাসামনি অনেকেই এ ব্যাপারে জানতে চাইছেন, তাই অল্প করে লিখছি, ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেলে কয়েকটা সিরিজ লিখবো।
প্রথমেই একটি ভুল ধারণা ভাঙাই, রেসিডেন্সিতে সিট কম নয়। মার্চ ২০১৬ এর রেজাল্ট অনুযায়ী বেসিক, ডেন্টাল, সার্জারি, মেডিসিন ফ্যাকাল্টি মিলিয়ে মোট সরকারি/বেসরকারি রেসিডেন্সি কোর্সে চান্স পাওয়া চিকিৎসকের সংখ্যা ৯০৯ জন। এদের মাঝে সরকারি চিকিৎসক ৪০১ জন এবং অবশিষ্ট ৫০৮ জন বেসরকারি চিকিৎসক। মোট সিট সংখ্যার হিসেব এবার কিছুটা বাড়বে। ডেন্টাল ১টি বিভাগ(পেডোডন্টিক্স), মেডিসিন ১টি বিভাগ নিউক্লিয়ার মেডিসিন, সার্জারিতে ১টি বিভাগ ভাস্কুলার সার্জারি, গাইনি সম্পর্কিত ৩টি বিভাগ রিপ্রোডাক্টিভ এন্ডোক্রিনোলজি এন্ড ইনফার্টিলিটি, গাইনেকোলজিক্যাল অনকোলজি, ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন। নূন্যতম ২ জন করে সরকারি-বেসরকারি সিট বাড়লেও ২৪টা সিট বাড়বে।
সিটের সংখ্যা সম্পর্কিত এনালাইসিসেই এই লেখাটি সীমাবদ্ধ থাকবে।
প্রথমত, গতবার কিছু বিভাগে সরকারি চিকিৎসকের পোস্ট ফাঁকা ছিল। হয়ত পোস্টের সমান সংখ্যক সরকারি চিকিৎসক হয় চান্স পায়নি(পাশ মার্ক আসেনি/আদৌ কোন পাশ মার্ক আছে কিনা জানা নেই), নয়ত পরীক্ষাই দেয় নি। সার্জারি ফ্যাকাল্টির সাব্জেক্টগুলোতে মূলত এ ব্যাপারটি লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া অন্যান্য ফ্যাকাল্টি বা বিভাগে এক বা একাধিক পোস্ট ফাঁকা গিয়ে থাকতে পারে।
দ্বিতীয়ত, এবার যে রকম ৫টি বিভাগ নতুন চালু করা হয়েছে বিগত রেসিডেন্সি পরীক্ষাগুলোতে এরকম নতুন কয়েকটি বিভাগ চালু করা হয়েছিল। সে সব বিভাগের কয়েকটিতে গতবার সরকারি বেসরকারি উভয় পোস্টই ফাঁকা ছিল। যাদের জন্য রেসিডেন্সি ডায়ার নিড তাঁরা এ সাবজেক্টগুলোতে সুযোগ নিয়ে দেখতে পারেন যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে।
তৃতীয়ত, প্রায় সকল সাবজেক্টেই বেসরকারি চিকিৎসকদের পোস্ট পূর্ণ ছিল তবে ঢাকার বাইরের কিছু কিছু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক দুটো পোস্ট ফাঁকা লক্ষ্য করা গেছে। এক্ষেত্রে যারা রেসিডেন্সির জন্য ডেস্পারেট রেসাল্ট এনালাইসিস করে বিষয় এবং ইন্সটিটিউট টার্গেট করতে পারেন।
চতুর্থত, যে সব সাব্জেক্টে অনেকগুলো ইন্সটিটিউশন দেয়া আছে (৪ বা অধিক) সে সকল সাব্জেক্টে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে কিছু ফাঁকা লক্ষ্য করা গেছে। তবে বেসরকারি যতগুলো ইন্সটিটিউট ছিল যেমন বারডেম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সবগুলোর পোস্ট পূর্ণ ছিল, বিপরীতে বিশেষায়িত ইন্সটিটিউট যতগুলো ছিল তার মাঝে কিছু পোস্ট ফাঁকা ছিল। যে সকল সাব্জেক্টে প্রাইভেট ইন্সটিটিউট এবং বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে যেমন, এনআইসিভিডি, এনআইও, বিআই সিএইচ, আইসিএমএইচ, নিকডু, এনআইএনএস, নিটোর, এনআই ডিসিএইচ, এনআইএমএইচ, এনআইসিআরএইচ এ সকল সাব্জেক্টে ইন্সটিটিউট চয়েজ দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সজাগ থাকতে হবে।
পঞ্চমত, একটা সময়ে বেসিক সাবজেক্ট লাক টেস্ট হিসেবে দেখা হত। তবে ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্রে, রেজাল্ট শিট দেখে এবার সেটি ভুল হবে বলে মনে করছি।
সাবজেক্ট চয়েজ নিয়ে লিখতে বসে অন্য আলোচনায় চলে যাওয়ার কারণ মূলত ছিল প্যানিক কমানো। ৩৩ তম বিসিএসে ৬০০০ হাজার চিকিৎসক এবার রেসিডেন্সি পরীক্ষায় বসবেন। সেই ৬০০০ হাজারের একজন আমিও যার আগেই রেসিডেন্সি কোর্স হয়ে ছিল। আমার মতোই আরো ১৩৬ জনের রেসিডেন্সি কোর্স ২০১৪ বা এর পূর্বে ছিল। ২০১৫-২০১৬ সেশনের বেসিক সাবজেক্ট, এনেস্থেশিয়া ও কার্ডিওথোরাসিক সার্জারির ১৭২টি সিট ৩৩তম বিসিএসের চিকিৎসকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। একই ভাবে ২০১৫-১৬ সালের ডিপ্লোমা ইন এনেস্থেসিয়ার প্রায় ১২০ এর মত সিট উন্মুক্ত ছিল। এছাড়া ৩৩ তম বিসিএসে জয়েন করা চিকিৎসকদের মাঝে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চিকিৎসকের ইতিমধ্যে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন অথবা বেশ কয়েক বছর ট্রেনিং করা আছে যারা রেসিডেন্সি এডমিশন টেস্টে অংশই নেবে না। সে হিসেবে এবার রেসিডেন্সিতে ফাইট দেয়া সরকারি চিকিৎসকের সংখ্যা ফাঁকা পোস্টের বিপরীতে বেশি হতে পারে কিন্তু প্যানিক করার মত কখনোই নয়।
পোস্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল এক সিটের বিপরীতে কম্পিটিশনের প্যানিক কমানো। একটি উদাহরণ দিয়ে শেষ করছি, ধরুন এন্ডোক্রাইন বিভাগে ৪টি সরকারি এবং ৮ টি বেসরকারি সিটের বিপরীতে যতজন পরীক্ষা দেয়, জেনারেল সার্জারিতে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরকারি এবং বেসরকারি সিটের বিপরীতে তার ১০ ভাগের এক ভাগ পরীক্ষার্থীও চয়েজ দেয় না(সম্ভবত গতবার কোন সরকারি পরীক্ষার্থী চয়েজই দেয় নি)। এখন সিদ্ধান্ত আপনার, আপনি যদি ডেস্পারেট হন, এবং কোন নির্দিষ্ট সাব্জেক্টের ব্যাপারে আপনি রিজিড না হন তাহলে আজকেই সিদ্ধান্ত নিন। এই সিরিজের পরের পর্বে সাবজেক্ট চয়েজ নিয়ে কয়েকটি কথা বলার চেষ্টা করবো, ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেলে স্বল্প সময়ের প্রস্তুতির ব্যাপারেও লেখার চেষ্টা করবো।
বিঃদ্রঃ পোস্ট ফাঁকা বলতে তূলনামূলক সমধর্মী ইন্সটিটিউটের তুলনায় কম প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে ধরা হয়েছে, এই এনালাইসিসের সকল তথ্য রেসাল্ট শিট থেকে নেয়া, পোস্ট ক’টি আছে এমন কোন অফিসিয়াল ঘোষণা নেই, সকল বক্তব্য অনুমান ও ধারণা নির্ভর।
লিখেছেন ঃ ডাঃ মোহিব নীরব, স্বত্ব প্ল্যাটফর্ম ।