প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৪ আগস্ট ২০২২, রবিবার
ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত কেয়ার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী গত ৬ই আগস্ট থেকে তাদের মাইগ্রেশন এবং কেয়ার মেডিকেল কলেজ এবং এর অনুরূপ সকল অনুপযুক্ত মেডিকেল কলেজ বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ করছে। এই কলেজের ২০১৭-২০১৮ সেশন হতে ২০২১- ২০২২ সেশন পর্যন্ত ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীর বিএমডিসি এর অনুমোদন নেই। ২০১৬- ২০১৭ সেশনের ভর্তির পরে ২০১৭- ২০১৮ সেশন হতে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে হাইকোটের রিটের ওপর ভিত্তি করে এবং মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ২০১৭- ১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২०, ২০২০-২১ সেশনে ভর্তি করা হয়। এ বছর ২০২১-২০২২ সেশনে ভতি কার্যক্রম পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত কেনো কথা বললে মিথ্যা আশ্বাস দিতে থাকে এবং সময় নিতে থাকে। ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থীদের গত বছর নভেম্বর ২০২১ থেকে ইন্টার্নশীপ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিএমডিসির অনুমোদন না থাকায় দীর্ঘ ৯ মাসেও শুরু হয়নি। এর আগে বিএমডিসির অনুমোদন আনার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৪ মাস সময় চেয়ে নেয় কতৃপক্ষ। কিন্তু ৪ মাস অতিক্রম করে গেলেও কোনো আশানুরূপ কিছু করতে পারে নি।
ভর্তির পর থেকেই বিভিন্ন নাজুক ও চিকিৎসা শিক্ষার অনুপযোগী পরিবেশের মধ্যে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বিএমডিসি নির্দেশনা অনুযায়ী একাডেমিক ও ক্লিনিক্যাল বিষয়ে পর্যাপ্ত বিভাগীয় প্রধান, লেকচারার, সিএ, রেজিস্ট্রার নেই। হাসপাতালের ইনডোর, আউটডোর রোগীর সংখ্যা নগণ্য যা হাতে কলমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত করে। নীতিমালা অনুযায়ী আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে বেড নেই। অধিকাংশ সময় সকল ওয়ার্ড রোগী শূন্য থাকে। অত্র সকল বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বারবার অবগত করলেও তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
বিএমডিসি থেকে বার বার সমস্যা সংশোধন করতে বলা হলেও কর্তৃপক্ষ আশানুরূপ কিছুই করে নি। এমতাবস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষকে সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে সকল শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বর্জন করে ৭ ই আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত কলেজ প্রাঙ্গণে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার সহযোগিতা শিক্ষার্থীরা পায়নি বরং শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার ১২ আগস্ট কেয়ার মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. পারভীন ফাতেমা শিক্ষার্থীদের সাথে মিটিং করতে চান। আলোচনাকালীন সময় তিনি শিক্ষার্থীদের কোন দাবি শুনতে চান না। এমনকি একজন শিক্ষক হিসেবে ও তিনি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এর কথা বিবেচনা করে কোনো প্রকার সহযোগিতা করেননি। বরং শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেন। মিটিং এর একপর্যায়ে তিনি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি এবং অথোরিটির সকল প্রকার ব্যর্থতার বিষয় অস্বীকার করতে না পেরে অনেক বাকবিতন্ডার পর মাইগ্রেশন পেপারে সাইন করেন। কিন্তু কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মেহেরুন্নেসা সাইন দিতে চান না। একপর্যায়ে তিনি রুম থেকে বের হয়ে যায়। স্টুডেন্টরা একত্রিত হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করে ম্যামকে চলে যেতে বাঁধা দেওয়ায় তিনি সামনে থাকা কয়েকজন স্টুডেন্টকে আঘাত করেন। এমনকি সিঁড়ি থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। মাইগ্রেশন পেপারে সাইন করলেও কলেজ কতৃপক্ষ কোনো প্রকার সাহায্য করবে না বলে জানান কলেজের চেয়ারম্যান পারভিন ফাতেমা।
পরিশেষে কলেজ কর্তৃপক্ষ মিটিংয়ে কলেজের সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করার বিষয়ে সম্মতি জানালেও পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশনের কোনো ব্যবস্থা না করে পুনরায় কলেজ খোলার নোটিশ প্রদান করে।
এখানে উল্লেখ্য যে, কোনো শিক্ষার্থী জেনে বুঝে নিজের ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয় না। প্রতিটি শিক্ষার্থী কিছু স্বপ্ন নিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে ঠিক যেমনটি অন্যান্য সকল প্রাইভেট মেডিকেলে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। তবে হ্যাঁ শিক্ষার্থীদের যথাযথ জ্ঞানের অভাব ছিল বলেই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের প্রতারণার শিকার হয়েছে। মেডিকেল সেক্টর এর যত নিয়ম নিষেধাজ্ঞা সব এই সেক্টরের মধ্যে আবদ্ধ থেকে যায় ভর্তির আগে সাধারণ মানুষ এ সম্পর্কে কোনো ধারণা পায় না প্রকৃতপক্ষে। কারণ প্রচারের অভাব এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতার অভাব।
এমতাবস্থায় সকল শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত এবং হুমকির মুখে। সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর জন্য মাইগ্রেশন প্রসঙ্গে সকল প্রকার সহযোগিতা কামনা এবং সবিনয় অনুরোধ জ্ঞাপন-পূর্বক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শিক্ষার্থীরা।