প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৫ মে, ২০২১, বুধবার
ডা. সওকত আরা বীথি
মিনেসোটা, ইউ এস এ।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে শিশুরা তো এমনিতেই কথা বলা শিখে যায়। এদের আবার কথা বলা শেখাবার প্রয়োজন কিসের? কথা তো বনের পাখিদের শেখাবার দরকার হয়। একথা ঠিক নয়। শিশুদেরকেও কথা বলা শেখাবার প্রয়োজন আছে।
‘কথা’ হচ্ছে মানুষের মুখ দিয়ে উচ্চারিত কিছু শব্দ বা বাক্য, যার অর্থ থাকতে হবে। ’কথা’ মানুষের মাঝে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম বললে অত্যুক্তি হবে না। অবশ্য সুস্পষ্ট ভাষায় কথা না বললেও আকার, ইঙ্গিতে এবং কিছু মুখের শব্দ দ্বারাও মানুষের মাঝে যোগাযোগ করা সম্ভব, যেমনটি আদিম যুগে আমাদের পূর্বপুরুষেরা করে গেছেন। সেই আদিম যুগে, যখন মানুষের বাস ছিল বনে-জঙ্গলে এবং বনের পশুদের সাথে লড়াই করে জীবিকানির্বাহ করতে হতো, তখনও মানুষ মুখ দিয়ে নানাপ্রকার শব্দের দ্বারা একে অপরের সাথে এমনকি প্রয়োজনের তাগিদে পশুদের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করত। আজ এই সুসভ্য জগতে সেসব দিনের কথা ভাবাই যায় না।
এই পৃথিবীতে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বাস। বিভিন্ন ভাষায় তারা কথা বলেন। আর এই ‘কথা বলা’ বিষয়টিও যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে শিশুদের বেলায়, সেকথা আজ ভাববার দিন এসেছে। কারণ একথা সত্যি যে কোন কারণে একটি শিশু যদি জঙ্গলে একাকি বড় হয়, কোন মানুষকে কথা বলতে না শোনে, তাহলে সেই শিশু বনের পশুপাখির চিৎকার, শব্দ ইত্যাদি যা শুনবে সেটাই শিখবে। কারণ কথার জন্ম মস্তিষ্কে। যদিও তা উচ্চারিত হয় আমাদের মুখ তথা গলা থেকে। অবশ্য শব্দের উৎপত্তি শুধু গলা থেকে বললে পুরোটা বলা হয় না। শব্দসৃষ্টির জন্য যেমন গলায় রয়েছে- স্বরযন্ত্র (vocal cord), তেমনি মুখের তালুর পশ্চাৎভাগ, জিভ এবং ঠোঁট, স্বরসৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এই সমগ্র প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। শব্দসৃষ্টির বিভিন্ন পর্ব বা পর্যায়ে শরীরের এই সমস্ত শব্দসৃষ্টিকারী অংশের মধ্যে, বায়ু চলাচল, জিভ ও ঠোঁটের নড়াচড়া ইত্যাদির মধ্যে একটি গভীর সামঞ্জস্য রয়েছে। কিন্তু এসব বিষয় না বুঝে, না জেনেও একটি শিশু নির্ভাবনায় কথা শিখে যায়।
সাধারণত ছয়-সাত মাস বয়সের পর থেকেই একটি শিশুর মুখে আধো আধো বুলি ফুটে যায় এবং এক বছর বয়স থেকে কথা বলা শিখতে শুরু করে এবং দুই-তিন বছরের মধ্যেই স্বচ্ছন্দে কথা বলতে শিখে যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে একটি শিশু দেরীতে কথা শুরু করতে পারে এবং ভালভাবে কথা বলতে আরও কিছু সময় বেশী লাগতে পারে ।
এ নিয়ে খুব বেশী চিন্তা করার কোন কারণ নেই। কারণ কথা শেখার জন্য যেমন আমাদের শরীরের স্বর সৃষ্টির প্রত্যঙ্গগুলোর ভুমিকা রয়েছে, তেমনি সমান গুরুত্ব রয়েছে মস্তিষ্কের স্নায়ু পুন্জের। গুরুত্বের দিক দিয়ে সামাজিক শিক্ষাপ্রক্রিয়ার অবদানও বিশাল গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ কথা শেখার পেছনে এক সুসামঞ্জস্য, স্নায়ুবিক, মানসিক ও সামাজিক কলাকৌশল কাজ করছে। কিন্তু ব্যাপারটা এত স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে যে কেউ এসব খেয়ালও করে না। যেমন- জলে কিছুদিন হাত পা ছুড়লে সাঁতার শিখে যাওয়া যায়, এর পেছনের কলাকৌশল বা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন না মেনেও।
একটি শিশু যদি মস্তিষ্কের অপূর্ণতা অথবা কম পরিপূর্ণতা নিয়ে জন্মগ্রহন করে তবে সেই শিশু দেরীতে কথা বলে। তবে এমনটি দেখলে চুপ করে বসে থাকা ঠিক নয়। অবশ্য এ ব্যাপারে ধৈর্য্য ধরতে হবে, অপেক্ষা করতে হবে এবং সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অবশ্য কর্তব্য। চিকিৎসক পিতামাতাকে উপযুক্ত পরামর্শ দান করে শিশুকে কথা বলতে সাহায্য করবেন ।
স্বর সৃষ্টির প্রত্যঙ্গগুলি হচ্ছে –
স্বরযন্ত্র, মুখের তালুর পশ্চাৎভাগ, জিভ, ঠোঁট ইত্যাদি । যদি এসবের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা থাকে, তাহলেও কথা শিখতে বলতে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে এবং এক্ষেত্রেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ।