প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১১ জুন ২০২০, বৃহস্পতিবার
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শীর্ষ বিশেষজ্ঞের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স (ওএনএস) থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে যে, কোভিড -১৯ বাচ্চাদের ঝুঁকি অত্যন্ত কম এবং প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ রোগটি কম মারাত্মক। এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের মধ্যে এর উপসর্গও কিছুটা আলাদা।
দেখা গিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে খুব কমই শিশু রোগী ছিল। এদের মধ্যে জটিল রোগ একদমই কম। অনেকের একদম কোন উপসর্গ দেখাই যাচ্ছে না, কিন্ত পরে এন্টিবডি টেস্ট করে কিছু দেশে অনেক বাচ্চাদের পজিটিভ দেখা গিয়েছে (অর্থাৎ আগে রোগ হয়ে গিয়েছে)। এর কারণ ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। বিসিজি ভ্যাকসিনের কথা বলা হয়েছিল, কিন্ত ওটা প্রমান করা যায় নি। সারস-কভ২ ভাইরাস শরীরের এসিই-২ রিসিপ্টর দিয়ে ঢোকে। এই রিসিপ্টর বাচ্চাদের মধ্যে কম থাকার কারণে হয়তো বেশি গুরুতর রোগ হচ্ছে না। কিন্ত এটা ১০০% প্রমাণিত নয়।
বাচ্চাদের মধ্যে যাদের গুরুতর রোগ হচ্ছে, আইসিইউ লাগছে তাদের মধ্যে ওবেসিটি (স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন) যাদের তাদের রিস্ক সবচেয়ে বেশি।
বাচ্চাদের মধ্যে ভয়ানক দুটো জিনিস দেখা গিয়েছে। প্রথমটার নাম গিলেন-ব্যারি সিন্ড্রোম। এটা যেকোনো ভাইরাসজনিত রোগের পর হতে পারে। এতে যা হয় তা হলো, হঠাৎ হাত ও পায়ের প্যারালাইসিস হয়ে যায়। আস্তে আস্তে প্যারালাইসিস বেড়ে বুক ও ফুসফুসের ক্ষমতাও কিছুদিনের জন্য চলে যেতে পারে। ৯০% রোগী একদম সুস্থ হয়ে যায়, কিন্তু বাবা-মা’র জন্যে ভয়ানক রোগ। কোভিড থেকে হয় না, কোভিড পার হওয়ার পর দেখা যায় এটা। বাচ্চার হাত-পা এর অনুভব করার শক্তি চলে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
দ্বিতীয়টিতে একটা অদ্ভুত প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। পরিচিত দুটি রোগ, কাওয়াসাকি ডিজিজ ও টক্সিক শক সিন্ড্রম এর কাছাকাছি একটা রোগ দেখা যায় কোভিড পার হওয়ার প্রায় এক মাস পর। ৫-৬দিন জ্বর, সাথে পেট ব্যাথা, পাতলা পায়খানা, চোখ লাল হয়ে আসা, চামড়ায় ফুসকুড়ি দেখা যায়। এগুলা একই সাথে দেখা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এতে দ্রুত খারাপ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। একে বলা হচ্ছে শিশুদের মাল্টি-সিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিনড্রম (এমআইএস-সি)।
বাচ্চাদেরকে অকারনে ওষুধ খাওয়ানোর দরকার নেই। বাচ্চাদের নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক ভালো এবং কোভিডে তাদের কিছুই হয় না। উপরের ঝুঁকিগুলো ঔষধ খাইয়ে কমানো যায় না।
বাচ্চার যদি ওজন বেশি হয়, এটা একটা উপযুক্ত সময় তা কমিয়ে আনার। ভালো খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা এবং অতিরিক্ত রিচ ফুড থেকে দূরে নিয়ে আসা। কম বয়সে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা অনেক বেশি সহজ। যদি কোনো রোগের কারণে ওজন বেশি হয়, তাহলে বাচ্চাদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। বাচ্চাদের মধ্যে যাদের অন্যান্য রোগ আছে তাদেরকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে।
এছাড়া বাচ্চাদের নিজে নিজে হাত না ধোয়া একটা সমস্যা। পরিবারের সদস্যদের দ্বারা মনে করিয়ে বার বার হাত ধুয়ে দিতে হবে বাচ্চাদের। দরকার ছাড়া বাসা থেকে একদম বের করা যাবে না। বাচ্চা স্পর্শ করার আগে বড়দের নিজে বাইরে থেকে এসে ভাল করে হাত ধুতে হবে।
তথ্যসূত্র:
ডা. রাইক রিদওয়ান
স্পেশ্যালটি ট্রেইনি, ইমার্জেন্সি মেডিসিন
ক্যামবিজ ইউনিভার্সিটি হসপিটাল