ইমার্জেন্সির সামনে রাজকীয় রোলস রয়েস পার্ক করা। প্রতিদিনকার মত স্যার স্ট্যানলি ঠিক সকাল আটটায় রয়্যাল ইনফার্মারির সামনে।
“ওহে ক্যাভেন্ডিস আমি তো স্কারলেট ফিভারের গন্ধ পাচ্ছি, তুমি কি মাত্রই রোগী নিয়ে আসলে”?
‘দুঃখিত স্যার’ এ্যাম্বুলেন্স চালক ঘেমে উঠে লিজেন্ড স্যার স্ট্যানলিকে বলে, ‘ট্রাক এক্সিডেন্টের রোগী, লোকটার পা গুঁড়ো হয়ে গেছে’।
স্যার স্ট্যানলি এবার শর্দি টেনে নেয়ার মত শব্দ করে নিঃশ্বাস নিয়ে এ্যাম্বুলেন্সে উঠতে গেলেন।
“স্যার আজকে এম্বুলেন্সের প্রথম ট্রিপ আমি দিয়েছি এবং যে বাচ্চাটাকে নিয়ে এসেছি তার সম্ভবত স্কারলেট ফিভারই ছিলো”-দুজনের কথোপকথন শুনে আরেকজন চালক এগিয়ে এসে বলল।
স্যার স্ট্যানলি মুচকি হাসলেন, ডান হাতের তর্জনি দিয়ে নাকের উপর অন্যমনস্কভাবে স্পর্শ করে হাসপাতালের ভেতর চলে গেলেন।
তাঁর জন্ম শ্রীলংকায়। ক্যাম্ব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হলেও প্রথম মহাযুদ্ধের ডামাডোলে ডিসেক্টিং নাইফ ছেড়ে রাইফেল কাঁধে সম্মুখ সমরে। ঠিক যখন বাঙালী পল্টনে একজন হাবিলদার শাণিত হচ্ছিলেন ভবিষ্যত বিদ্রোহের জন্য। ক্যাপ্টেন লিউবর্ন স্ট্যানলি প্যাট্রিক দ্বিতীয়বার গুলি খেয়ে ২৪ ঘন্টা লুটিয়ে পড়ে আছেন বেলজিয়ামের নাম না জানা কোন গ্রামের কাদাভরা গর্তে। গ্যাংগ্রিন নিয়ে অবশেষে ঠাই হলো হাসপাতালের ওয়ার্ডে। সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নিয়ে এবার এডিনব্রায়। এই শারীরিক অবস্থা নিয়েই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করলেন ফার্স্ট ক্লাস অনার্স নিয়ে, যোগদান করলেন রয়্যাল ইনফার্মারিতে। ব্যাক্টেরিওলজির এক অধ্যাপকের সহকারী হিসেবে কর্মজীবনের শুরু, এমডি থিসিসের জন্য গোল্ড মেডেলে পাবার পর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একসময় হন স্কটল্যান্ডের প্রথম পূর্ণকালীন অধ্যাপক ।হ্যাঁ একজন চিকিৎসকের জীবনের গল্পই লিখছি।
“ডাঃ স্ট্যানলির নতুন পাগলামি সম্পর্কে জানেন কিছু”-সহকর্মীদের তাঁর সম্পর্কে নিজেদের আলাপের প্রথম কথা। চিকিৎসক মানে প্রাইভেট প্র্যাকটিস, চেম্বারের বাইরে রোগীর লাইন প্রায় একশ বছর আগের এ প্রথা প্রথম যে চিকিৎসক ভেঙ্গে দেন তিনি ডাঃ স্ট্যানলি। কম চিকিৎসকই শুধু ডাক্তার থেকে প্রফেসর হন, তাঁদের মাঝে খুব প্রফেসর থাকেন যারা প্রফেসর থেকে স্যার উপাধি পান। স্যার স্ট্যানলি সে সময় চেম্বারের বাইরে শুধু মাত্র হাসপাতাল, গবেষণা, চিকিৎসক গড়ার কারিগর হিসেবে কাজ করেছিলেন বলেই তাঁর অক্ষয়কীর্তিকে সম্মান জানাতে এ লেখা। যুদ্ধ ক্ষেত্রের আহত সাধারণ সৈনিক থেকে যিনি স্কটল্যান্ডের রাজ চিকিৎসক হয়েছিলেন, ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথের ব্যক্তিগত চিকিৎসক, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের উপদেষ্টা, খাদ্য বিভাগের পরিচালক।
সকল রোগী সমান, সকল রোগী সমান যত্ন এবং সেবা পাবার অধিকার রাখে-তাই তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিস না করে হাসপাতালকে রোগীর চিকিৎসার মূল কেন্দ্র হিসবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করেন। অন্যান্য প্রফেসরদের বাধ্য করেন হাসপাতাল কেন্দ্রিক চিকিৎসা সেবা দিতে। হাসপাতালের আধুনিকায়ন, হাসপাতাল ভিত্তিক মেডিকেল শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করেন আজীবন। বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের সাথে যোগাযোগ চিকিৎসা সেবাকে নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার তাঁকে জন্য প্রভাবিত করেছিল।
সমসাময়িক মেডিসিনের বাঘা বাঘা চিকিৎসকেরা যখন রোগ-রোগী-মেডিকেল শিক্ষা সম্পর্কে ভিক্টোরিয়ান যুগের ধ্যান ধারণা পোষণ করত তখন তিনি বলতেন-“everything had to be questioned and explained”। রোগীর বিছানার পাশে তিনি যেমন ছিলেন একজন গিফটেড শিক্ষক, তেমনি ক্লাস রুমে গোছানো লেকচার মুগ্ধ করে রাখত ছাত্র-ছাত্রীদের। শিক্ষকদের শিক্ষক স্যার স্ট্যানলির ছাত্র ছিলো প্রফেসর ম্যাকলয়েডের (ম্যাক্লয়েড ক্লিনিক্যাল মেথডের লেখক) স্যার জন ম্যাকমাইকেল( ইংল্যান্ডে কার্ডিওলজির জনক)। হেমাটোলজির এনিমিয়ার ক্লাসিফিকেশন ও ম্যানেজমেন্ট দিয়ে গবেষণা-মেডিকেল প্রকাশণার শুরু, এরপর রিউম্যাটিক ডিজিস, নিউট্রিশন বিশেষ করে স্থুলতা নিয়ে কাজ(গবেষণার মজার একটা ফলাফল ছিল-ইংল্যান্ডের অবস্থাপন্ন মহিলাদের চেয়ে গরীব মহিলারা বেশি স্থূলকায়)। তাঁর এডিনবরায় দেয়া লেকচার নোটগুলো নিয়ে ১৯৫২ সালে প্রকাশিত হয় “The principles and practice of Medecine”।
হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন আমি Davidson’s Medicine এর স্যার স্ট্যানলি ডেভিডসনকে নিয়ে লিখছি, এতগুলো শব্দ বাক্যের বদলে নন মেডিকেল ব্যক্তিদের জন্য এক বাক্যে বলি-বাংলাদেশে যতজন চিকিৎসক আছেন সবাই ডেভিডসন ভদ্রলোকের মেডিসিন বই পড়ে ডাক্তার হয়েছেন, এখন ডেভিডসনের ২২তম এডিশন চলছে । আজ স্যার স্ট্যানলি ডেভিডসনের জন্মদিন, ৩ মার্চ ১৮৯৪ থেকে যতদিন পৃথিবীতে মানব জাতির চিকিৎসা টিকে থাকবে ততদিন তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর নাম বেঁচে থাকবে ।
(লেখার শুরুর গল্পটা The Man Who Cried Orange:Stories From A Doctor’s Life by Eric Anderson থেকে পাওয়া, পোস্টের কমেন্টে স্যার স্ট্যানলি ডেভিডসনের সাথে সম্পর্কিত কিছু ছবি দেয়া হলো)
ইন্টারভিউ প্রথম অংশ
দ্বিতীয় অংশ
তৃতীয় অংশ
লেখা এবং সংগ্রহে ডাঃ মোহিব নীরব
https://books.google.com.bd/books?id=_3anBAAAQBAJ&pg=PP1&lpg=PP1&dq=The+Man+Who+Cried+Orange:+Stories+from+a+Doctor%27s+Life&source=bl&ots=waLF1cktFR&sig=vVHozGmRh6i-KxnVP4KweG8M9Mo&hl=en&sa=X&ei=5rj1VOr5HYPk8AXA8YII&ved=0CCcQ6AEwAg#v=onepage&q=The%20Man%20Who%20Cried%20Orange%3A%20Stories%20from%20a%20Doctor%27s%20Life&f=false
Happy Birthday
Happy birthday sir of the sirs